ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় তলব

যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে ঢাকা-আঙ্কারা পাল্টাপাল্টি অবস্থানে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ মে ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে ঢাকা-আঙ্কারা পাল্টাপাল্টি অবস্থানে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ঢাকা-ইসলামাবাদের পর এবার ঢাকা-আঙ্কারা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে। ঢাকা থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওয়াসতুর্ককে আঙ্কারায় ডেকে নেয়ার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকে ঢাকায় ডেকে আনা হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকে ঢাকা আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি ঢাকায় ফিরে তুরস্ক সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওয়াসতুর্ককে ডেকে নেয়ার প্রতিবাদেই বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কূটনীতিককে ডেকে নিয়ে পরিস্থিতি আলোচনা করা স্বাভাবিক বিষয়। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোন ধরনের প্রভাব ফেলে না। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর গত ১২ মে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান গভীর পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওয়াসতুর্ককে ডেকে নিয়ে যায় আঙ্কারা। তিনি সেখানে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নেয়া হলেও দেশটির নিজস্ব গণমাধ্যম খবর দিয়েছে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তুরস্ক তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে কিছু জানায়নি। কোন দেশের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে ইতোমধ্যেই ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। গত দুই বছর ধরে ঢাকা-ইসলামাবাদের কূটনীতিককে তলব-পাল্টা তলব, প্রতিবাদ-পাল্টা প্রতিবাদ, বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। এখন তুরস্কের সঙ্গেও একই ধরনের ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে। ঢাকা থেকে তুরস্ক রাষ্ট্রদূত ডেকে নেয়ার পাল্টা কর্মসূচী হিসেবে বাংলাদেশও আঙ্কারা থেকে রাষ্ট্রদূত ডেকে নিয়ে আসছে। তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, তুরস্ক তার দেশের রাষ্ট্রদূতকে রি-কল করেনি, কনসালটেশনের জন্য ডেকেছে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তুরস্কে আমাদের রাষ্ট্রদূতকেও আমরা ডেকে পাঠিয়েছি। এটা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কটা চলমান রয়েছে, কোন চিড় ধরেনি বলেও তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে কোন নমনীয়তা চলছে না বলেও তিনি জানান। এদিকে তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকায় রাষ্ট্রদূত না থাকলেও দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভিসা ইত্যাদি কার্যক্রম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই তুরস্ক এই বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সর্বশেষ মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির পর দেশটির প্রেসিডেন্ট তায়েপ এরদোগান তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে তুরস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছিল। এছাড়া ২০১১ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে তুরস্ক পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এক বৈঠকেও যুদ্ধাপরাধ বিচার বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল দেশটি। তবে বাংলাদেশ তার অবস্থান থেকে সরে আসবে না বলেও তুরস্ককে জানানো হয়েছিল।
×