ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান

উন্নয়নে সহায়তা চাই ॥ জি-৭ আউটরিচে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ মে ২০১৬

উন্নয়নে সহায়তা চাই ॥ জি-৭ আউটরিচে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চ্যালেঞ্জ উত্তরণে প্রযুক্তি হস্তান্তর, সম্পদের সংযোজন এবং দরিদ্র দেশগুলোর সামর্থ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আরও তৎপর হওয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার জাপানের কাসিকজিমা দ্বীপের সিমাকানকো হোটেলে ‘জি-৭’ সম্মেলনের আউটরিচ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন ও দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করে জি-৭ সম্মেলনের আউটরিচ সভায় প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কিত চারটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন। জি-৭ সম্মেলনের আউটরিচ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের অবহিত করেন। খবর বাসসর। শেখ হাসিনা নীতি প্রণয়ন ও রাজনীতিতে নারীদের গুরুত্ব দেয়া, সমাজে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা তথা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিষেবা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ২০০১ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। এটা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার সক্ষমতা ও বৈশ্বিক ভাবমূর্তির প্রতি স্বীকৃতি। উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে তার সরকারের প্রচেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন। গ্রামপর্যায়ে বাংলাদেশের কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো বিশ্বব্যাপী একটি ‘রোল মডেল’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নারীর প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়ন, তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের অধিকার ও মর্যাদাকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। শহীদুল হক বলেন, সভা শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মের্কেল, জাতিসংঘ মহাসচিব ও আইএমএফ প্রধানসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাপ হয়েছে। জি-৭ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাড়া জি-৭-এর অন্য রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্যের জন্য শুধু বাংলাদেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’ জি-৭ আউটরিচ-এর দুইটি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সম্পূরক এজেন্ডাÑ বিশেষত নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত অবকাঠামো, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করেনÑ যেসব ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০০১ সালে শেখ হাসিনার উত্থাপিত দারিদ্র্য বিমোচন ইস্যুটিকে জি-৭ নেতৃবৃন্দ একটি বড় এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইইউতে থাকাই ভালÑ ক্যামেরনকে প্রধানমন্ত্রী ॥ বিডিনিউজ জানায়, জনগণের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানে জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ের ফাঁকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে এ অভিমত দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের ভেনু কাশিকো দ্বীপের শিমা কানকো হোটেলের শুবাকি কক্ষে দুই নেতার এই বৈঠক হয়। পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা বা না থাকার বিষয়ে ক্যামেরন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অভিমত জানতে চান। এই বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যে সৃষ্ট বিতর্কের কথাও উল্লেখ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন বিশ্বায়নের এই যুগ, যোগাযোগের যুগ। ‘এই যুগে একটি বড় ইউনিয়ন থেকে সরে আসাটা চিন্তা করার বিষয়।’ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি ব্রিটিশ জনগণের সিদ্ধান্ত। তবে তিনি মনে করেন, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকা উচিত। প্রবাসী বাংলাদেশী এবং জনগণের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা উচিত। কিন্তু ব্রিটিশ জনগণকেই সব শেষ সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার বিষয়ে সে দেশের তিন এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, রূপা হক ও রুশনারা আলীর জনমত সৃষ্টি করার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এছাড়া বৈঠকে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের বিষয় নিয়েও কথা বলেন দুই দেশের দুই সরকার প্রধান। বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭-এ উন্নীত হওয়ার পেছনের ইতিহাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়ে তার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসাও করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। ক্যামরন বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে চায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনা গার্ল সামিটে যোগ দিতে লন্ডন গেলে সেখানে ডেভিড ক্যামেরনের বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। অর্থনীতি, সামাজিক ও নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির ‘ভূয়সী প্রশংসা’ করে সেই বৈঠকে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এই সাফল্য কী ভাবে এল- তা দেখতে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ক্যামেরন। গত বছর যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে ক্যামেরনের দল কনজারভেটিভ পার্টি পুনর্নির্বাচিত হলে তাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওবামাসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শেখ হাসিনার মতবিনিময় বিডিনিউজ জানায় ॥ জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ও সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জি-সেভেনভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনসহ বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের প্রধানরা এ বৈঠকে অংশ নেন। সকালে ওই বৈঠকের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে শনিবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সূচী রয়েছে তার। জাপানে জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ের ফাঁকে শুক্রবার দুপুরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ওবামা, জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাজ্ঞেলা মেরকেল, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লগার্দসহ অন্যদের সঙ্গেও শেখ হাসিনা নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান। আউটরিচ বৈঠকে ফাঁকে শেখ হাসিনা সঙ্গে ওবামা, মেরকেল ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কথা বলতে দেখা যায়। জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ের ফাঁকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কথা বলতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুটো আউটরিচ সেশনেই প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছেন; আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে।’ আজ শনিবার দুপুরে নাগোয়া থেকে টোকিও যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করবেন।
×