ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উদ্বোধনের আগেই ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৮ মে ২০১৬

উদ্বোধনের আগেই ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের  বেহাল দশা

মাকসুদ আহমদ, ফেনী থেকে ফিরে ॥ উদ্বোধনের আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জংশন এলাকাগুলোতে আরসিসি ঢালাইয়ে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কুমিরা থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত জংশন এলাকাগুলোতে দুই বা ততোধিক স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হওয়ায় নির্মাণশৈলী নিয়ে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও সিটি গেট থেকে ফেনী পর্যন্ত ৯৩ কিলোমিটার চারলেন সড়কের নবনির্মিত অংশটুকু দেবে গেছে হেভিওয়েট ও ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে। বড় দারোগার হাট এলাকায় স্থাপিত হেভিওয়েট গাড়ি পরিমাপের স্কেল দফতরে কর্মকর্তাদের পকেট ভারি হচ্ছে। কারণ কদাচিৎ দু’চারটি গাড়ি সারাদিনে স্কেলের আওতায় নেয়া হয়। বাকিগুলো থেকে হাত বাড়িয়ে করা হয় আদায়। বিশেষ করে গত পনেরো দিনে সড়কে এ ধরনের সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। ভারি যানবাহন তথা ট্রাক ও লরির চাকার মাপে দেবে যাওয়ার ঘটনায় পরিবহন পরিচালনা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ওভার টেকিংয়ের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তবে এক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের পর ধুমঘাট, মুহুরীগঞ্জ ও লেমুয়া ব্রিজ এলাকার তিনটি অংশে দেবে যাওয়া সড়কের অনেকাংশই ইতোমধ্যেই মেরামত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রশ্ন উঠেছে, সওজের উর্ধতন কর্মকর্তারা এ সড়কের তত্ত্বাবধানে প্রকৌশলী ও পরিদর্শকদের তদারকি করছে না। ফলে বিভিন্ন স্থানে যেমন আরসিসি ঢালাই ফেটে যাচ্ছে, তেমনই সড়কও দেবে যাচ্ছে এই সড়ক অল্প কিছুদিনের মধ্যে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। দীর্ঘমেয়াদী এই পরিকল্পনায় দফায় দফায় বাজেট বাড়ানো হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে। এছাড়াও নবনির্মিত সড়ক নিয়ে প্রশ্ন তুলছে দেশের বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, সওজের প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে বৃহদায়তন ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো নিজেদের সুবিধা মতো স্থানে সরকারী অর্থে সড়কে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ করে নিয়েছে। শিল্প কারখানা এলাকায় বিশেষ করে সিটি গেট থেকে বাড়বকু- পর্যন্ত বেশিরভাগ শিল্প মালিক এ ধরনের সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক শুধু মূল সড়কের ডিভাইডারে ট্রাক ও লরি পাসিং আউট করার জায়গা করে নিয়েছে। ফলে দূর পাল্লার যানবাহনগুলো এসব স্থানে এনে ট্রেইলর ও কাভার্ড ভ্যানের ব্রেক ডাউনে পড়তে হয়। দীর্ঘ সময় এসব এলাকায় সার্বক্ষণিক যানবাহন লেগেই থাকে। বৃহস্পতিবার রাতেও দীর্ঘ দু’ঘণ্টারও বেশি সময় যানজট লেগেছিল। আরও অভিযোগ রয়েছে, উদ্বোধনের আগে দেশবাসীর দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার সেই চারলেনের সড়কের অবস্থা বেহাল। সড়কে মেরামত চলছে নাকি নির্মাণ কাজ চলছে তা নিয়েও প্রশ্নের অন্ত নেই পরিবহন চালকদের। কারণ, এ মহাসড়কের উদ্বোধন কবে হবে তার যেমন ঠিক-ঠিকানা নেই, তেমনি সড়কের নির্মাণ নাকি সংস্কার নাকি মেরামত এ প্রশ্নের উত্তরও সওজের কাছে নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের সিটি গেটের পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেনের সুবিধা ভোগ করছে পরিবহন সেক্টরের চালক ও মালিকরা। কালুশাহ মাজার এলাকায় তৈরি হচ্ছে আরেকটি নতুন ওভার ব্রিজ। এ ওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফৌজদারহাট ও ভাটিয়ারি পর্যন্ত রেললাইন দিয়ে ঢাকা অভিমুখে পণ্যবাহী ওয়াগন ও কন্টেনার কেরিয়ার চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। কালুশাহ মাজার এলাকার পুরাতন ওভার ব্রিজ থেকে নামলেই পোর্ট এক্সেস রোড ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগস্থল প্রতীয়মান হবে। সেখানেই রয়েছে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক দেবে যাওয়ার নমুনা।
×