ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলাবদ্ধতা নিয়ে নগরবাসীর ক্ষোভ বাড়লেও স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন

বরিশাল নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৮ মে ২০১৬

বরিশাল নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ জলাবদ্ধতা পিছু ছাড়ছে না বরিশাল নগরবাসীকে। সামান্য একটু বৃষ্টিতেই নগরীর ব্যস্ততম প্রধান সড়কসহ নিমাঞ্চলের বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজের মাঠ তলিয়ে গেলেও দীর্ঘদিনে এর কোন স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। ফলে জলাবদ্ধতা নিয়ে নগরবাসীর ক্ষোভ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যার কিছুটা বহির্প্রকাশ ঘটেছে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে তিনদিনের বৃষ্টিতে তীব্র জলাবদ্ধতা হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের ফেসবুক গ্রুপ ‘বরিশাল-সমস্যা ও সম্ভাবনা’ পেজে। জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই পেজে ঘূর্ণিঝড়ের ন্যায় সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর জেল খাল, লাকুটিয়া খাল, আমানতগঞ্জ খাল, সাগরদী খাল ও টিয়াখালী খালের অস্তিত্ব সঙ্কটের (দখল) কারণে এখন মৃতপ্রায়। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একটু বৃষ্টিতেই নগরীতে হাঁটুপানি জমে দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে খালগুলো সংস্কারের জন্য তিন বছর পূর্বে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে জেলখালকে দখল মুক্ত করা হলেও সংস্কারের অভাবে এখনও তার সুফল পেতে শুরু করেননি নগরবাসী। সূত্রে আরও জানা গেছে, নগরীতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিকল্পিতভাবে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন দিয়ে ওসব খালে প্রবাহিত হতে না পারার কারণেই সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। অতীতের ন্যায় সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বরিশালে তিনদিনের বর্ষণে নগরীর সদর রোড, নবগ্রাম রোড, বগুড়া রোড, কালীবাড়ি রোড, মল্লিক রোড, ব্রাউন্ড কম্পাউন রোড, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটুপানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও নগরীর ৯নং ওয়ার্ডের কীর্তনখোলা নদীরতীরের রসুলপুর চরসহ নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য বাড়িঘরে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জেলা প্রশাসনের ফেসবুক গ্রুপ ‘বরিশাল-সমস্যা ও সম্ভাবনা’ পেজে অসংখ্য সচেতন নগরবাসীর দেয়া পোস্ট সূত্রে জানা গেছে, অতিবর্ষণে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বরিশাল বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে। জলাবদ্ধতার কারণে কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সাঈদ শুভ নামের একজনের পোস্ট সূত্রে জানা গেছে, জনৈক তানবীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি নগরীর বেলতলা বাজারসংলগ্ন চরআবদানী মৌজার সরকারী চলমান খালটি অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করায় ওই এলাকার পাঁচ শতাধিক পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। ফলে ওসব পরিবারের প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জলাবদ্ধতার সাথে সাথে ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নগরীর কাকলির মোড়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র ২১নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকলেও নগরবাসীর এ দুর্দশা লাঘবে কারও মাথাব্যথা নেই। দিপু দত্ত নামের একজন পোস্ট করেছেন, নগরীর ১৫নং ওয়ার্ড আমির কুটির এলাকার অসংখ্য পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও যতদিন সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে গভীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা না হবে ততদিন এ দুর্দশার সমাধান হবে না। সজীব আহম্মেদ নামের একজনের পোস্ট থেকে জানা গেছে, নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির বিপরীত পাশের জনগুরুত্বপূর্ণ শরীফ বাড়ির রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে যায়। ৩০ বছরের এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য অসংখ্যবার স্থানীয়রা তৎকালীন বরিশাল পৌরসভা ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোন সুফল পায়নি। সাকিব হাসান লিখেছেন, নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সোনারগাঁয়ের পাশের রাস্তাটি প্রায়সময়ই পানিতে ডুবে থাকলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে রাস্তার ওপর পানি জমে থাকায় ওই এলাকার শতাধিক পরিবারকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আজিজুল হাকিম ইমন লিখেছেন, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও একটু বৃষ্টিতেই নগরীর বিএম কলেজ রোড এলাকার রাস্তার ওপর হাঁটুপানি জমে গেলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। ইব্রাহীম মাসুম নামের একজন সচেতন নগরবাসীর ছবিসহ একটি পোস্ট নিয়ে সর্বত্র হৈচৈ শুরু হয়েছ। ছবিতে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলার স্থাপন করার পর পুরো ড্রেন ময়লা ও বালু জমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সচেতন নগরবাসী চৌকস জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জলাবদ্ধতা বরিশাল নগরবাসীর প্রধান সমস্যা এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সিটি মেয়র মোঃ আহসান হাবীব কামাল বলেন, আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে নগরীতে নির্মাণ করা ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিকল্পিত হওয়ায় তার প্রভাব পড়ছে এখন। তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন পূর্বে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে টানা বর্ষণে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার পর তাৎক্ষণিক জলবদ্ধতা নিরসনে কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র বা ড্রেনে না ফেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিকটস্থ ডাস্টবিনে ফেলা এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে মেয়র আরও বলেন, কিছু ওয়ার্ডের নিচু এলাকায় প্রবল বর্ষণে কিছু সময় পানি জমে থাকার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিজ নিজ ওয়ার্ডের ড্রেনসমূহের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×