ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজ্ঞান গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ান

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৮ মে ২০১৬

বিজ্ঞান গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ান

বাংলাদেশের ইতিহাসে গত নির্বাচনে প্রথম কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে বিজ্ঞানমনস্ক দেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে। সে লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগের সূচনাও হয়েছে। কিন্তু জাতীয় বাজেটে বিজ্ঞান খাতে বিগত বছরগুলোয় যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা অপ্রতুল। দেশে বিজ্ঞানচর্চা বাড়ানো এবং মানসম্পন্ন বিজ্ঞান গবেষণায় গবেষকদের আগ্রহী করে তোলার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরী। আর সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চাই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ। দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতিতে, নিজস্ব পণ্য উৎপাদনে, দেশের সমস্যা সমাধানে নিজেদেরই অবদান রাখার জন্য, সর্বোপরি সার্বিক উন্নতি সাধন এবং বিশ্বে মর্যাদাবান অবস্থান প্রাপ্তির জন্য উন্নতমানের বিজ্ঞান গবেষণার প্রয়োজন। এই উন্নতি না ঘটিয়ে কোন দেশের সার্বিক উন্নতি অসম্ভব। সে জন্য আমাদের দেশে উচ্চমানের বিজ্ঞান গবেষণার বিষয়টি বোঝাও জরুরী। প্রসঙ্গত এ ভূখ-ের শিক্ষা ও গবেষণার বিকাশে এবং মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে এক অনন্য অবদান। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই আগে চলে আসে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর কয়েক দশকের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণার উঁচু মান ও আবাসিক চরিত্রের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু একটি প্রবন্ধ পাঠান। তার ওই প্রবন্ধ পড়ে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘আমার মতে বসু কর্তৃক প্ল্যাঙ্ক-সূত্র নির্ধারণের এই পদ্ধতিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ বিশ্বখ্যাত আরেক বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলন উদ্বোধন করতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। ঢাকায় এক সময়ে গড়ে উঠেছিল এক শক্তিশালী গবেষক দল, যারা মৌলিক পদার্থের প্রকৃতি সম্বন্ধে তাৎপর্যপূর্ণ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি বিজ্ঞানে সে গবেষণার মান বজায় রাখতে পেরেছে? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি জাতীয় ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কথা বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘকাল বলে আসছেন। একটি বহুমুখী গবেষণাগার করা সম্ভব হলে গবেষকরা সেখানে আসবেন, প্রশিক্ষণ নেবেন ও দেবেন। কিন্তু বাস্তবে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামে-গঞ্জে অনেক স্কুলে বিজ্ঞানাগার তো দূরের কথা, সামান্য বিজ্ঞান সরঞ্জামাদিও নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৭৮ শতাংশ স্কুলে বিজ্ঞানাগার নেই। কোথাও কোথাও একটি মাত্র আলমারিকেই বিজ্ঞানাগার বোঝানো হয়। বলা চলে স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষা খুবই অবহেলিত। বিজ্ঞান শিক্ষায় স্বল্পমেয়াদী নয়, চাই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। বিজ্ঞানের গবেষণায় বাজেটের বরাদ্দ হলো ভবিষ্যতের বিনিয়োগ। এর ফল পেতে কখনও কখনও ১৫-২০ বছর সময় লেগে যেতে পারে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমেও একাধিক উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরী। বিজ্ঞানের প্রসারে নানা কর্মসূচী গ্রহণের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে আরও বেশি করে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা দরকার। তবে সবার আগে জাতীয় বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
×