ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হিরোশিমা মেমোরিয়াল পিস পার্কে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

এশিয়ার রাজনীতিতে ঝড়

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৮ মে ২০১৬

এশিয়ার রাজনীতিতে ঝড়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র যখন জাপানে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে হোয়াইট তখন ছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান। এরপর আজ অবধি দেশটিতে ১১ জন প্রেসিডেন্টের পালাবদল ঘটেছে। ৭১ বছরে কোন ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাপানে গেলেও হিরোশিমা যাননি। বারাক ওবামা শুক্রবার দীর্ঘদিনের সেই পুরনো রীতি ভেঙ্গে হিরোশিমা মেমোরিয়াল পিস পার্কে যান। খবর নিউইয়র্ক টাইমস। এই ঘটনা যে ওবামার প্রেসিডেন্সির জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে থাকবে তাই নয় বরং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাজনীতির ধারা বদলে দিতে পারে। নতুন দ্বন্দ্ব বেধে যেতে পারে চীন এবং উদীয়মান অর্থনীতির ছোট ছোট দেশগুলোর মধ্যে। ওবামার পূর্বসূরি মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ভাগ্য এক্ষেত্রে সুপ্রসন্ন বলতে হবে। কারণ তারা হিরোশিমা পরিদর্শনে যাননি, ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে বিতর্কও উস্কে দেননি। মার্কিন ভোটারদের কাছেও এ নিয়ে তাদের জবাবদিহি করতে হয়নি। এখন ওবামার হিরোশিমা পরিদর্শন চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো কিভাবে গ্রহণ করে সেটি দেখার বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এদেশগুলো জাপানের সাম্রাজ্যবাদী নির্মমতার শিকার হয়েছিল। হিরোশিমা সফরের মধ্য দিয়ে ওবামা কার্যত জাপানের অতীত নির্যাতনের ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিলেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। ওবামার এই সফর উভয় দেশের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। এছাড়া এ সফর চীনকে অবশ্য ক্ষুব্ধ করবে। কারণ চীনের দৃষ্টিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ছিল আগ্রাসী শক্তি। ওবামা তাদের আগ্রাসনের শিকার বলে মেনে নিলেন। সোমবার ভিয়েতনাম সফরের মধ্য দিয়ে ওবামা সপ্তাহব্যাপী এশিয়া সফর শুরু করেন। হ্যানয় এসে তিনি দেশটির ওপর থেকে কয়েক দশকের অস্ত্র রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। বলা যা জাপান পৌঁছানের আগেই তিনি চীনকে ক্ষুব্ধ করে তোলেন। বৃহস্পতিবার তিনি জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে জাপানে যান। শুক্রবার যান হিরোশিমায়। কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টই গত ৯০ বছরে কিউবা যাননি, ওবামা গিয়েছেন। কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টই এ যাবত মিয়ানমারে সফর করেননি, ওবামা সে দশ দুবার সফর করেছেন। ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কোন মার্কিন সরকারই সমঝোতার উদ্যোগ নেয়নি। ওবামা তেহরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা করেছেন। এই ইস্যুতে আরেকটি যুদ্ধ প্রায় অবশ্যম্ভাবী বলে একসময় মনে হয়েছিল। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা হামলার জন্য যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইবেন না সেকথা অবশ্য ওবামা আগে থেকেই সাফ জানিয়ে রেখেছিলেন। দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার পর আগামী জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন ওবামা। ভোটারদের কাছে তাই এ বিষয়ে তার কৈফিয়ত দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। হতে পারে পরমাণু অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি তার এই সফরের একটি উদ্দেশ্য ছিল। ২০০৯ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। দুটো পরমাণু হামলায় আনুমানিক ৪০ থেকে ৭০ হাজারের মতো কোরীয় নিহত হয়েছিল। ওই সময় কোরীয় উপদ্বীপে চলছিল জাপানের ঔপনিবেশিক শাসন। বোমা হামলায় নিহত কোরীয়দের বেশিরভাগই বাধ্যতামূলক শ্রম দেয়ার জন্য জাপানের সেনাবাহিনী ধরে এনেছিল। ওবামা যদিও বলছেন তিনি ক্ষমা চাইবেন না। ক্ষমা না চাইলে কিন্তু তার এই সফরকে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় জাপানী আগ্রাসনের জন্য দুঃখ প্রকাশ বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। অন্যদিকে জাপান যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী শান্তিবাদী নীতি গ্রহণ করেছে তার প্রতি মার্কিন স্বীকৃতি হিসেবে এ সফর ধরে নেয়া যেতে পারে।
×