ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রিলিফের মতো নয়, যাকাতের বন্টন হোক যথাযথ

প্রকাশিত: ০২:১৮, ২৭ মে ২০১৬

রিলিফের মতো নয়, যাকাতের বন্টন হোক যথাযথ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাকাত ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়Ñঅর্থ না কমিয়ে বরং তা অর্থ বাড়িয়ে দেয়। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনে, নিশ্চিত হয় নিঃস্ব ও দরিদ্রের নিরাপত্তা। তাই যাকাতের বন্টন যথাযথভাবে করতে হবে, কেননা যাকাত পরিকল্পিতভাবেই দিতে হয়। ঘরে ঘরে গিয়েই যাকাত পৌঁছে দিতে হয়। গতানুগতিক রিলিফের মতো করে যাকাত প্রদান করা উচিত নয়। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় যাকাত প্রদান করতে গিয়ে কেউ কেউ ধর্মীয় এই বিধানকে শিরকের পর্যায়ে নামিয়ে আনছে। আবার কেউ কেউ ফটোশুটের ঢামাঢোলে নিজের দানশীলতা প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী চতুর্থ যাকাত ফেয়ার-২০১৬’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। মেলা শেষ হবে আগামীকাল শনিবার। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এই মেলা খোলা থাকবে সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত। মেলার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে সাবেক মন্ত্রী ও সেনাপ্রধান লে. জে. (অব:) এম. নুরুদ্দীন খান বলেন, মানবতার কল্যাণের জন্য যাকাতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যুগে যুগে তা বাধ্যতামূলক ছিল। যাকাত অতীতে বিরাট কল্যাণমূখী ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভর না করে নিজেদের অর্থের উপর জোর দেওয়ার ক্ষেত্রেও যাকাত মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তাই যাকাতের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দারিদ্র দূরীকরণে এবং মানবিক উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে যাকাত প্রদান করা উচিত। গতানুগতিক রিলিফের মতো করে যাকাত প্রদান করা উচিত নয়। এর অর্থ ব্যক্তি পর্যায়ে না দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রদান করলে সামগ্রিকভাবে সমাজে এর সুফল পাওয়া যাবে। মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন কাসেম খান বলেন, যাকাত নিঃস্ব ও দরিদ্রের মধ্যে নিরাপত্তা আনয়নসহ ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই ক্ষেত্রেই সঠিক পদ্ধতিতে যাকাত প্রদান করা উচিত। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও দারিদ্র বিমোচনে যাকাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যাকাতের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে মাওলানা শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্তি। অতীতেও শান্তির প্রয়োজন ছিল, বর্তমানেও শান্তির প্রয়োজন আছে এবং ভবিষ্যতেও শান্তির প্রয়োজন পড়বে। তবে শান্তির নাম করে আজ যে মিটিং মিছিল হয়, শান্তির নামে যা হচ্ছেÑতা ঠিক নয়। তিনি বলেন, যাকাতের বন্টন যথাযথভাবে করতে হবে। যাকাত পরিকল্পিতভাবেই দিতে হয়। যাকাত ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিতে হবে। আজ আফসোস, আমাদের সমাজে যাকাত দিতে গিয়ে অনেকেই এটিকে শিরকের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, যাকাত শব্দের অর্থ প্রবৃদ্ধি। এটা ব্যক্তিকে, সমাজকে সর্বোপরি রাষ্ট্রকে প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। যাকাত অর্থ বাড়িয়ে দেয়, কমায় না। চেম্বার অব ইন্ডাষ্ট্রির প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ বলেন, কেবল নেতৃত্বগুণের অভাবেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও দেশ তেমনভাবে এগিয়ে যায় নি। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সম্পদ কিছু লোকের হাতে চলে যাচ্ছে। সেসব মানুষকে যাকাতের মর্মামর্থ উপলব্ধি করতে হবেÑতাদের কাছে যেতে হবে। সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)-এর চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিম বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র দূরীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে যাকাত ফেয়ারের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি দেশের সুধীজন এবং বিত্তশালীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ব্যক্তিগত যাকাতের সঠিক হিসাব নিরূপনসহ ব্যবসায় যাকাত নির্ণয় (ক্যালকুলেশন) পদ্ধতিসহ বিস্তারিত জানতে ফেয়ার পরিদর্শন করার আহ্বান জানান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড-এর মেজর (অব.) ড. রেজাউল হক, ইসলামি ব্যাংক্স কনসালটেটিভ ফোরাম-এর ভাইস-চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল। অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ২০ জন প্রতিবন্ধীকে ল্যাপটপ দেওয়া হয়। আয়োজকরা জানান, ল্যপটপগুলোতে ব্রেইল সিস্টেম ইন্সটল রয়েছে, ফলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা তা সহজেই ব্যবহার করতে পারবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মেলার স্টল ঘুরে দেখেন।
×