ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার কিছুদিন আগে ‘বেগম পত্রিকা’ কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেটা ১৯৪৭ সালের কথা। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন সওগাত পত্রিকার সম্পাদক নাসির উদ্দিন। সে সময়টিতে নারীদের ছবি তোলা নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। তাই ওই সময়ে নারীদের জন্য একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। তখন অবশ্য বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। তার সঙ্গেই কাজ করতেন নাসির উদ্দিনের একমাত্র কন্যা নূরজাহান বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দীর্ঘকাল ধরেই বেগম পত্রিকার সঙ্গে পরিচিতি।
কিছুদিন সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর কবি সুফিয়া কামাল নিজের ব্যস্ততার কারণে কাজ ছেড়ে দিলে নূরজাহান বেগমের হাতে বেগম পত্রিকা গড়ে উঠে। ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পরে ১৯৫০ সালে বেগম পত্রিকার অফিস ঢাকায় চলে আসে। নতুন ঠিকানা হয় বর্তমানে পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলিতে। গত ৬৬ বছর ধরে এখানেই আছে বেগম পত্রিকা। ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে প্রতি সপ্তাহে বেগম পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের মতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডাকযোগে এই পত্রিকা পৌঁছে যেত। কিন্তু বেগম পত্রিকার সে জৌলুস এখন আর নেই বললেই চলে।
নূরজাহান বেগমের জন্ম ১৯২৫ সালে এখনকার চাঁদপুর জেলায়। ১৯৪২ সালে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়াশোনা করে বিএ পাস করেন নূরজাহান বেগম। ১৯৫২ সালে নূরজাহান বেগমের বিয়ে হয় লেখক, সাংবাদিক ও শিশু সংগঠক রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে। অনেকের কাছেই তিনি ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন।
কৈশোরে কলকতায় বেগম পত্রিকার সঙ্গে পরিচয় গড়ে উঠে সাংবাদিক কামাল লোহানীর। তখনকার সমাজে মুসলিম নারী লেখক তৈরিতে বেগম পত্রিকার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ’৫০-এর দশকে এই বেগম পত্রিকা তৎকালীন সমাজে শিক্ষিত মুসলিম নারী লেখকদের একটি বড় প্লাটফর্ম হয়ে উঠে। বেগম পত্রিকা শুধু নারীদের উদ্দেশ করে গোড়াপত্তন হলেও এর পাঠক শুধু নারীরাই ছিলেন না। ধীরে ধীরে এই পত্রিকা পুরুষদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। নূরজাহান বেগম শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে নয়, নিজের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে তিনি বেগম পত্রিকাকে গড়ে তুলেছিলেন। তবে, নূরজাহান বেগম এমন একটি পত্রিকার ইতিহাস রেখে গেলেন যেটি এ অঞ্চলে বহু নারীকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।
শীর্ষ সংবাদ: