ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী-পুরুষের সমতা ও একটি সুন্দর পৃথিবী

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৭ মে ২০১৬

নারী-পুরুষের সমতা ও একটি সুন্দর পৃথিবী

নারী-পুরুষের সমতার চর্চা ভবিষ্যতের সুন্দর মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলবে। সমতার পৃথিবী সুন্দর পৃথিবী। উন্নয়নের দৃশ্যত প্রমাণ নারীর জাগরণ। দেশের প্রগতির মাপকাঠি নির্ণয়ে সহজ পন্থা নারীর মুক্তি। জাতীয় অগ্রসরতার উপায় নারীর ক্ষমতায়ন। আজকের বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে গেছে নারীর অগ্রযাত্রার প্রবাহমানতায়। সামাজিকভাবে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন নারীরা। কখনো আবার যোগ্যতার বলে পুরুষদের নেতৃত্বও দিচ্ছেন নারী। শৃঙ্খল মুক্তির ইতিহাস বাংলার নারীদের একদিনের নয়। দীর্ঘ পথ চলার পর নারী পেয়েছে সঠিক সত্যের আলোকধারা। এই পথ সৃষ্টির কারিগড় নারীরা। তবে পুরুষদেরও সহযোগিতা রয়েছে। অবরোধবাসিনী বেগম রোকেয়া যে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন, সেই মশাল এগিয়ে নিয়ে গেছেন লীলা নাগ, প্রীতিলতা, ইলা মিত্রসহ অনেকে। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ? নারীর অগ্রযাত্রার একেকটি ধাপ। রাজনৈতিক লড়াইয়ে যেমন ছিল নারীর অংশগ্রহণ। আবার সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে এ দেশের নারীরা খুলে দিয়েছে আলোর উৎস-দ্বার। এভারেস্ট্রের চূড়ায় বাংলাদেশের নারীরা এঁকেছেন বিজয়গাথা। খেলার মাঠেও নারীদের অগ্রযাত্রা সমতার সমাজ নির্মাণের পথকে সুগম করছে? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রায় রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতাও অন্যতম সহায়ক হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ নির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বেশকিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এগুলো আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পীকার নারী। এটি বিশ্বের বিরল ঘটনা এবং নারী অগ্রযাত্রার অন্যতম প্রেরণা। রাজনৈতিক বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশে এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ বেশ ইতিবাচক? দেশে ১২ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। সরকারী বিভিন্ন দফতরেও পুরুষের সঙ্গে নিজের যোগ্যতা বলেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী। দেশের পাঁচটি জেলায় রয়েছেন নারী জেলা প্রশাসক। দু’টি জেলার পুলিশ সুপার নারী। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটে উপাচার্য হিসেবে নারীর অগ্রযাত্রা দেশের সামাজিক উন্নয়নের সূচককে ত্বরান্বিত করেছে। ২০১৪ সালে ডাব্লিউইএফ-এর লিঙ্গবৈষম্য সূচকের বার্ষিক প্রতিবেদনে ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান ৬৪তম। এই অর্জনে ভারত, পাকিস্তান, জাপানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। দেশের পোশাক শিল্পেই কাজ করছে প্রায় ৩০ লাখ নারী। অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাও এর চাইতে কম। পুলিশ বাহিনীতে প্রায় সাত হাজার নারী পুরুষের সঙ্গে সমানযোগ্যতায় কাজ করছে। এ সবই বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সমীকরণ। সামাজিকভাবে বাংলাদেশে এখন নারীদের একটা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি হয়েছে। তবে এটাও লক্ষণীয় যে এই দেশেরই কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ এখনও নারীকে ভোগ্য পণ্য মনে করে। তারা নানাভাবে নারীর অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বায়নের পুঁজিবাদী চর্চা নারীকে পণ্যে রূপান্তরের চেষ্টা করছে। তবে সেই বাধাকে জয় করছে নারীরা। কুসংস্কারের জাল ছিন্ন করে মানবিক সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের নারীরা। নিজেদের অধিকার নিয়ে রাজপথে নামছে। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে নারী এগিয়ে যাচ্ছে আপন ছন্দে। নিজের যোগ্যতায় বাংলাদেশের নারীরা পুরুষের সঙ্গে নির্মাণ করছে সমতার সমাজ। সমতার সমাজ আমাদের নিয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী মানবিক পৃথিবী নির্মাণের দিকে। আগামীর সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নারীরা কাজ করছে সমানতালে। নারীর এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। জয় হোক মানুষের। সুন্দর হোক পৃথিবী। অপরাজিতা ডেস্ক
×