ঝড়ো বৃষ্টিও প্রকৃতির এক অমোঘ সৃষ্টি। সব মিলিয়ে যখনই বৃষ্টি নামুক-তার আগে দরকার বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেতে পূর্ব-প্রস্তুতির। যে প্রস্তুতির প্রথম প্রসঙ্গ হলো ছাতা। বিশেষ করে নগরজীবনে ছাতা অত্যন্ত জরুরী একটা বিষয়। অফিসগামী নারী-পুরুষ। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী স্টুডেন্টদের জন্য বর্ষাদিনে ছাতা ছাড়া যেন একদম চলে না। কখনও এমন হয় যে ঘর থেকে বেরোনোর সময় দেখা গেল ঝকঝকে আকাশ, ভরা রোদ। কিন্তু ঘর থেকে বেরিয়ে একটু এগোনোর পরই বলা নেই, কওয়া নেই আচমকা বৃষ্টি। যদি সঙ্গে ছাতা থাকে তাহলে রক্ষা। নইলে বৃষ্টির তাড়া খেয়ে গা বাঁচানোর জন্য ছুটতে হবে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। নিরাপদ আশ্রয় পেলে ভাল। আর যদি চলতি পথে সেরকম কোন স্থান না থাকে তা ভিজে চুপসে যেতে হবে। এ অবস্থায় বাড়িতে প্রত্যাবর্তন ছাড়া উপায় কী।
এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি যেই হোন তাহলে যেন বিড়ম্বনার অন্ত থাকে না। আর এক্ষেত্রে তাই পথে নামার আগে প্রয়োজনীয় বিষয়ের মধ্যে ছাতাকেও অন্তর্ভুক্ত করে রাখাটা অনেক নিরাপদ। তাছাড়া, পথে এই বর্ষাকালে এ রকম দৃশাবলী সহজেই চোখে পড়ে। অফিসগামী নারী-পুরুষের বেলায় এমনও দেখা যায় যে ফুরফুরে মেজাজে মেঘমুক্ত দিনে অফিস থেকে বেরিয়ে এতে দাঁড়িয়েছেন বাসস্টপে-বাসের অপেক্ষায়। আর ঠিক তখনই হঠাৎ নামলো রূপালী বৃষ্টি। শুরু হয়ে গেলে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হুলস্থূল ছোটাছুটি। এ অবস্থায় যদি সঙ্গে ছাতাটা থেকে যায় তো তখন মনে হয় ছাতার মতো উপকারী বস্তু বুঝি এ জগতে অন্যটি নেই। একই অবস্থা স্টুডেন্টদের বেলায়ও ঘটে। ক্লাস শেষে আনন্দচিত্তে বাড়ি ফেরার তাড়া। ঠিক তখনই অবিবেচক বৃষ্টির হানা। ছাড়া তখন সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে যায়।
জুনের মাঝামাঝিতে এসেই প্রকৃতিতে আষাঢ়ের আগমন ঘটে। আষাঢ় শ্রাবণের বর্ষাকালীন সময় ছাড়াও কিন্তু বৃষ্টির প্রভাবটা এ দু-মাসের আগে পরে অনেক দিন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। ছাতা হতে পারে ওই থমকে যাওয়া বর্ষণমুখর প্রহরকে এগিয়ে নেয়ার এক চিলতে সঙ্গী। অবশ্য বৃষ্টি দিনে প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনা মনকে আবার উৎফুল্লও করে তোলে। আবেগাপ্লুত মন তখন ফিরে যায় দুরন্ত শৈশব-কৈশোরে। তদুপরি কর্মমুখর দিনে একটা ছাতা সব বিড়ম্বনাকে মুছে দিতে পারে। ছাতা উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও প্রয়োজনীয় এক উপসঙ্গ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রয়োজনের গ-ি পেরিয়ে ঠাঁই নিয়েছে ফ্যাশন জগতে। একটা সময় ছিল শুধু রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেতে ছাতা হলেই হলো। কেমন তা দেখতে বা কি রঙ সে সব বিবেচ্য বিষয় ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন। সেই সচেতন তার ছোঁয়ার ছাতা কেনার আগেও হিসেব-নিকেশ করে ছাতাটা কতটা ফ্যাশনেবল। মার্জিত রঙ কি না, ব্যবহারে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে কি না ইত্যাদি। যে কারণে দেশীয় ব্র্যান্ড ছাড়াও বেশ কিছু বিদেশী ব্র্যান্ড আমাদের দেশীয় ছাতার বাজার দখল করে নিয়েছে। তার মধ্যে জাজবাটোর, গ্রিপ-২, হাস-জর্ডান, মিকি ব্যাগ, উইন্ডব্রেলা, শেড রেইন, সাউদান প্লাস, দি ওয়েদার কোং অন্যতম। দেশের অভিজাত শপিং মলগুলোতে দেখা মিলবে এদের। এছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ডের ছাতা তো রয়েছেই। সংকরের ছাতা কিংবা আলমের ছাতা অন্যতম। দামও হাতের নাগালে ৪০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে মিলবে দেশীয় ছাতা আর ৮০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া বিদেশী ব্র্যান্ডের ছাতাগুলো।
এই বর্ষাকালে ছাতা যেন নিত্যসঙ্গী। তাই পছন্দসই ছাতাটি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোই ফ্যাশন সচেতন মানুষের কাজ।
ছবি : মানস সেন
মডেল : সেলিম ও নীহারিকা
পোশাক : মেনস ক্লাব
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: