ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা নদীর বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ

সচ্ছলতা ফিরেছে ৩৫০ মৎস্যজীবী পরিবারে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৭ মে ২০১৬

সচ্ছলতা ফিরেছে ৩৫০ মৎস্যজীবী পরিবারে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর পদ্মা নদীর বদ্ধ জলাশয়ে দেশী প্রজাতির মাছ চাষ করে সচ্ছলতা ফিরেছে গোদাগাড়ীর ৩৫০টি মৎস্যজীবী পরিবারে। এসব জেলে পরিবার বর্ষা মৌসুমে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় তারা গত দু’বছর ধরে বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। স্থানীয় মৎস্য বিভাগ তাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। গোদাগাড়ী উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা নদী কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নদীর প্রবাহ চলে যায় ভারতীয় সীমান্তে। আর এ পারে থাকে ধু ধু বালুচর। মাঝে মাঝে গ্রাম ঘেঁষে এ পারে কিছু নিচু জায়গায় আটকে থাকে পানি। আর এ পানিতেই গত বছর থেকে শুরু হয়েছে মাছ চাষ। উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাইমুল হক জানান, উপজেলার নিমতলা, খারিজাগাতি, চকপাড়া, মোল্লাপাড়া, পিরিজপুর ও হরিশংকরপুরসহ ৮টি এলাকায় পদ্মা নদীর বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ চলছে। মৎস্য বিভাগ জেলেদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। তাদের মাছের পোনা থেকে শুরু করে মাছ ধরার জালও দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। এছাড়া মাছ চাষে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। তিনি জানান, এসব এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ জন করে মৎস্যজীবী নিজেদের ভেতর সমবায় সমিতি গড়ে তুলে নদীর কোলে মাছ চাষ করছেন। মৎস্য অধিদফতরের ‘উন্মুক্ত জলাশয়ে বিল নার্সারি স্থাপন ও পোনা অবমুক্তকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এসব জলাধারে চলতি মৌসুমে ১৬ লাখ টাকার পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। রুই, কাতল ও মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির সেসব পোনার ওজন এখন এক থেকে দেড় কেজি। কোথাও কোথাও মাছগুলো ধরে বিক্রিও শুরু করেছেন মৎস্যচাষীরা। বর্ষা মৌসুমের আগেই সব মাছ ধরে বিক্রি করা হবে। প্রকল্পের মূল্যায়ন কর্মকর্তা শিরিন শিলা জানান, গোদাগাড়ী অঞ্চলে পদ্মা শুকিয়ে গেলে জেলেরা বিপাকে পড়েন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হয় তাদের। তাই শুষ্ক মৌসুমেও যেন তাদের উপার্জনে ভাটা না পড়ে, সে লক্ষ্যে গোদাগাড়ীর ৮টি এলাকার ৩৫০ জন জেলেকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি জানান, পদ্মাপাড়ের জেলেদের মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলতে গত বছর থেকে এই প্রকল্পটি চালু হয়েছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম জানান, প্রকল্পের আওতায় থাকা মাছ চাষীদের নিজস্ব সমবায় সমিতি আছে। সমিতির নামে ব্যাংক হিসাবও খোলা আছে। মাছ বিক্রির পর তারা যে পরিমাণ অর্থ পাবেন, তার ৬০ ভাগ তারা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেবেন। আর অবশিষ্ট ৪০ ভাগ জমা রাখা হবে ব্যাংক হিসাবে। আগামীতে সরকারীভাবে বিনামূল্যে পোনা বিতরণ বন্ধ হয়ে পড়লেও তারা যেন তাদের সঞ্চিত টাকায় মাছের পোনা কিনতে পারেন সে জন্য এ ধরনের নিয়ম চালু আছে বলেও জানান তিনি। নিমতলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু ম-ল জানান, মাছ বিক্রির পর এক এক জন সদস্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মুনাফা পান।
×