ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, প্রথম দিনেই বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৭ মে ২০১৬

অনলাইনে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, প্রথম দিনেই বিড়ম্বনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী শুরু হলো একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম। টেলিটক থেকে এসএমএসের সুযোগ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন অনলাইনে ভর্তির আবেদনের সুযোগ। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়ায় আগামী ৯ জুন রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। গত বছর পাঁচ কলেজের সুযোগ থাকলেও এবার ভর্তিচ্ছুরা আবেদন করতে পারছে ২০ কলেজের অনুকূলে। যার ১০টি অনলাইনে ও ১০টিতে এসএমএসে আবেদন করতে হবে। এদিকে ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রথম ১০ ঘণ্টায় আবেদন পড়েছে ৫১ হাজার। গত বছরের মতো বড় ধরনের সার্ভার জটিলতায় না পড়লেও প্রথম দিন টেলিটকে ফি জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এ সমস্যা সাময়িক। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ভর্তির আবেদনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান। মূলত এ সময় থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মোঃ আশফাকুস সালেহীন বলেন, শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল ফোনে এসএমএস এবং অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করছে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ অনলাইনে সাত হাজার ৬০০ এবং এসএমএসের মাধ্যমে দুই হাজার ২৫২টি আবেদন আসে। এসএসসিতে উত্তীর্ণ প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য আবেদন করবে। কলেজ পরিদর্শক বলেন, প্রথম দিন আবেদনের হার সন্তোষজনক। তবে দুপুরের পর থেকেই ফি জমা দিতে গিয়েই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছে, স্বাভাবিক গতিতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না। কারণ ভর্তির আবেদনে ফি’র টাকা মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে এসএমএসে দিতে গিয়ে কিছুটা বিপত্তি হচ্ছে। তারা আরও জানায়, আবেদনের টাকা পরিশোধ করার জন্য নিয়মানুযায়ী এসএমএস করলেই ফিরতি এসএমএস আসতে দেরি হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বেশ খানিকটা দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, সার্ভারে কোন সমস্যা নেই। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতোই আবেদন করতে পারছে। এসএমএসে ফি জমা দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে কলেজ পরিদর্শক মোঃ আশফাকুস সালেহীন বলেন, প্রথমে কিছুটা সমস্যা হতে পারে তবে টেলিটকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। এ সমস্যা সাময়িক। তিনি জানান, টেলিটকের আবেদন বোর্ড থেকে ভেরিফাই হয়ে প্রার্থীর কাছে রিপ্লাই যায়। এক্ষেত্রে একটু সময় লাগছে। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুতই কেটে যাচ্ছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহযোগিতায় আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি)। কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলছিলেন, প্রথম দিনেই সার্ভারে অনেক হিট হচ্ছে, তবে সার্ভারে কোন সমস্যা নেই। শিক্ষার্থীরা ঠিক মতোই আবেদন করতে পারছে। বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাশরুর আলী জানান, সার্ভারে কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যা হচ্ছে যখন (আবেদনকারী) পেমেন্ট করতে যাচ্ছে, টেলিটকে পেমেন্টটায় দেরি হচ্ছে। এই সমস্যার কথা টেলিটককে জানানো হয়েছে। টাকা জমা দিতে যদি আধঘণ্টা লেগে যায় অনেকেই ভয় পেয়ে যাবে। বোর্ড কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট সকলকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, প্রথম দিকে একটু এদিক-ওদিক হতে পারে। টেলিটকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। টাইম কমানো নিয়ে টেলিটক কাজ করছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। জানা গেছে, অনলাইনে িি.িীরপষধংংধফসরংংরড়হ.মড়া.নফ ওয়েবসাইট এবং এসএমএস করে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারছে। তবে যে কোন মাধ্যমে ১০টির বেশি আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। অনলাইনে আবেদনে ১৫০ টাকা ফি দিয়ে ১০টি কলেজে আবেদন করা গেলেও এসএমএসে প্রতি কলেজের জন্য ফি লাগবে ১২০ টাকা। আবেদনের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন সিম ব্যবহার করতে হবে বলে আগেই জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত বছর ৫টি কলেজে পছন্দের সুযোগ রেখে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। এবার সমস্যা লাঘবে ২০ প্রতিষ্ঠান পছন্দের সুযোগ করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে (যঃঃঢ়://ফযধশধবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফ.মড়া.নফ/) ভর্তির নির্দেশিকা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (িি.িসড়বফঁ.মড়া.নফ) পাওয়া যাচ্ছে ভর্তির নীতিমালা। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ভর্তি ফিসহ অন্য বিষয়গুলো গতবারের মতোই থাকছে। ১৬ জুন মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হতে পারবে। পরের সপ্তাহ ঈদের বন্ধ থাকবে, বন্ধের পর ১০ জুলাই ক্লাস শুরু হবে। তবে বিলম্ব ফি দিয়ে ১০ থেকে ২০ জুলাই ভর্তি হওয়া যাবে। এবার প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিকেএসপির শিক্ষার্থীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত বছর বেশ কিছু ভুয়া আবেদন পড়েছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু কলেজ শিক্ষার্থীদের নামে নিজেরাই আবেদন করেছিল। এটা যেন কেউ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকে বোর্ড থেকে একটি গোপন পিন নম্বর দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার আগে টাকা জমা দিয়ে ভর্তির আবেদন করতে হচ্ছে, আর আবেদন করার সময় ওই পিন নম্বর লাগবে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, কলেজে যে আসন আছে তাতে এবারও আসন ফাঁকা থাকবে। আসনের জন্য কেউ ভর্তি হতে পারল না এমন হবে না। এর পরেও যদি কেউ মনে করে সিস্টেমের কারণে তাকে পছন্দ হয়নি এমন কোন কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে কিন্তু তার সুবিধাজনক কলেজে সিট ফাঁকা আছে তাহলে সে কলেজ পরিবর্তন করতে পারবে। কলেজ পরিদর্শক ড. আসফাকুস সালেহীন বলেন, গত বছর ভর্তিতে মহাসঙ্কট তৈরি হয়েছিল। সঙ্কট নিরসনে এবার আবেদনের জন্য কলেজ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি মাইগ্রেশনের রাস্তা বন্ধ করেছি। কারণ এবার একেকজন অনেক প্রতিষ্ঠানে মেধা তালিকায় আসার সুযোগ পাবে। এরপর সে তার মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার মধ্যে পছন্দের একটি প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির সুযোগ পাবে। কলেজ পরিদর্শক আরও বলেন, এবার আমরা ভর্তির জন্য দুটি তালিকা প্রকাশ করব। একটি মেধাতালিকা, অপরটি অপেক্ষমাণ। দুটি তালিকাই একসঙ্গে প্রকাশিত হবে। মেধা এবং অপেক্ষমাণ তালিকার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ধরা যাক একটি কলেজে ২০০০ আসন আছে। এই কলেজে আবেদন পড়েছে পাঁচ হাজার। এর মধ্যে প্রথম ২০০০ জন মেধাতালিকায় স্থান পাবে। বাকি ৩০০০ অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, একজন ছাত্র ২০ কলেজে আবেদন করলে ২০ কলেজেই তার অবস্থান একই সময়ে জানতে পারবে। এতে কলেজ এবং শিক্ষার্থী উভয়ের ভোগান্তি কমবে। যদি কোন কলেজ ভর্তিতে মেধাক্রম উপেক্ষা করে, তাহলে কলেজের এমপিও, স্বীকৃতি ও অনুমোদন বন্ধ করার মতো শাস্তি দেয়া হবে।
×