ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ মে ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ জাতীয় পতাকার স্বতন্ত্র মর্যাদা। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বোঝানোর নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের পতাকা বহু সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। জাতীয় পতাকা অর্জনের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখেছিলেন- ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা। এই পতাকার সুমহান মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে এমনকি আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ অনুযায়ী, জাতীয় পতাকার মাপ ও ব্যবহারবিধি সুনির্দিষ্ট। বিধিমালা অনুযায়ী, জাতীয় পতাকা হবে গাঢ় সবুজ রঙের। ১০:৬ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আয়তক্ষেত্রাকার সবুজ রঙের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকবে। লাল বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যরে এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধবিশিষ্ট হবে। পতাকার দৈর্ঘ্যরে নয়-বিংশতিতম অংশ হতে অঙ্কিত উলম্বরেখা এবং পতাকার প্রস্থের মধ্যবর্তী বিন্দু হতে অঙ্কিত অনুভূমিকরেখার পরস্পর ছেদ বিন্দুতে বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু হবে। পতাকার সবুজ পটভূমি হবে প্রতিহাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রীন এইচ-২ আর এস ৫০ পার্টস এবং লাল বৃত্তাকার অংশ হবে প্রতিহাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে কি? সারা দেশের খোঁজ নিতে হবে না। শহর ঢাকার চারপাশে একটু তাকান। সচেতন দৃষ্টি দিন। জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করার প্রচুর উদাহরণ চোখে পড়বে। যে যেখানে খুশি পতাকা ওড়াচ্ছেন। কোন একবার বিশেষ কোন আবেগ থেকে কেউ হয়ত পতাকাটি উড়িয়েছিলেন, আর নামানোর নাম নেই! সরকারী বিভিন্ন অফিসে উড়ছে বিবর্ণ মলিন পতাকা। এমনকি ছেঁড়া পতাকা উড়ছে দিনের পর দিন। সচিবালয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কী হতে পারে? এই সচিবালয়ের পল্টনসংলগ্ন অংশে প্রতিদিন দৃশ্যমান হচ্ছে ছেঁড়া পতাকা। পল্টন পুলিশ বক্সের সামনে স্থাপন করা পতাকাটির দিকে তাকালে দেখা যায় সচিবালয়ও। মূল রাস্তা ধরে গোটা শহরের মানুষ যাতায়াত করেন। কেউ কেউ হয়ত তাকান পতাকাটির দিকে। কিন্তু চেনার উপায় নেই! প্রখর রোদে পোড়া আর বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া লাল সবুজ দেখে লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসে। বাতাসে যত ধুলা, ধোঁয়া সব নিয়ে অদ্ভুত কালো হয়ে গেছে পতাকার রং। যেন প্লাস্টিক! যেন পুরনো ছাতার কাপড়! না, কেউ দেখার নেই। সম্মান জানানো তো দূরের কথা, অসম্মান-অমর্যাদা যে হচ্ছে, তা-ও কেউ যেন জানেন না। অনুধাবন করেন না। মোহাম্মদপুরের একটি এলাকা ঘুরে তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। বেড়িবাঁধ এলাকাসংলগ্ন অংশে বেশ কিছু পতাকা উড়ছে। একাধিক হাউজিং সোসাইটি এখানে। উপরের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে জাতীয় পতাকা উড়ছে। অধিকাংশ পতাকা ছেঁড়া! বাতাসে যখন ওড়ে, মনটা কেমন করে ওঠে। জাতীয় পতাকার এমন অমর্যাদা সত্যি মেনে নেয়া যায় না। বেইলী রোড এলাকায় অনেক রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন। একাধিক ভবনের পতাকা লক্ষ্য করে দেখা গেছে, একটিরও লাল সবুজ লাল সবুজ হয়ে নেই। নতুন একটি রং ধারণ করেছে। বিবর্ণ পতাকা সন্ধ্যার পরও উড়তে দেখা যায়। এভাবে অজস্র উদাহরণ দেয়া যাবে। কিন্তু সমাধান? কেউ কি বিষয়টি নিয়ে ভাববেন একবার? রাজধানী শহরের লজ্জা ঢাকার কেউ কি আছেন? অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক, বর্ষা যথেষ্টই ভোগান্তির। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকাকে হেস্তনেস্ত করে ছাড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। তাই কিছু পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া জরুরী। আপাতত সে কাজে ব্যস্ত সিটি কর্পোরেশনের দুই অংশ। প্রতিবারের মতোই শুরু হয়ে গেছে খোঁড়াখুঁড়ি। উভয় অংশের রাস্তাঘাট এখানে কাটা। ওখানে গর্ত। বিশেষ করে বলতে হয় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কথা। এই অংশের ১১৮ কিলোমিটার রাস্তা ও ৬৭ কিলোমিটার ফুটপাথ সংস্কারের কাজ চলছে। একই সময় চলছে ১৪৭ কিলোমিটার নর্দমা সংস্কারের কাজ। গুলশান, বাড্ডা, নতুনবাজার, রামপুরা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মধুবাগ, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মাটি কাটা। খোঁড়া। জানা যায়, ১১৬টি প্যাকেজে সর্বমোট ৩০৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬২ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজ এখন চলমান আছে। বুধবার ছিল ১১৭তম নজরুলজয়ন্তী। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে উৎসবমুখর ছিল রাজধানী ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কবির সমাধিস্থলে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিকেলে নজরুল মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘বাংলা গানে নবআধুনিকতার প্রবর্তনায় কাজী নজরুল’ শীর্ষক একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। সরব ছিল শিল্পকলা একাডেমি। জাতীয় নাট্যশালায় সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছিল আবৃত্তি, গান ও নৃত্যের পরিবেশনা। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এভাবে গোটা শহর বিপুল শ্রদ্ধা-ভালবাসায় স্মরণ করে দ্রোহ, প্রেম ও সাম্যের কবি নজরুলকে।
×