ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুইফট ব্যবহার করে ইকুয়েডরের ১২ মিলিয়ন ডলার চুরি

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৭ মে ২০১৬

সুইফট ব্যবহার করে ইকুয়েডরের ১২ মিলিয়ন ডলার চুরি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় ইকুয়েডরের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। দেশটির বাংকো দেল অস্ট্রো থেকে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) ম্যাসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় জালিয়াত চক্র। বাংকো দেল অস্ট্রো থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ১০ দিনের ব্যবধানে ১২টি আদেশে এ টাকা তুলে নেয়া হয়। চুরির ৯ মিলিয়ন পাঠানো হয় হংকংয়ের বিভিন্ন ব্যাংকে। বাকি ৩ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় লস এ্যাঞ্জেলস ও দুবাইয়ের একাধিক ব্যাংকে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লস এ্যাঞ্জেলস এবং ১ মিলিয়ন দুবাইয়ের একটি ব্যাংকে। জালিয়াতির এক বছর পর আদালতে মামলার সূত্রে আলোচনায় আসে বিষয়টি। চুরির এ টাকা গ্রহণ এবং বিলি-বণ্টনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হংকং ও যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করেছে ইবাংকো দেল অস্ট্রো কর্তৃপক্ষ। মামলার আর্জিতে ব্যাংকটি বলেছে, ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে এক ডজনেরও বেশি পেমেন্ট আদেশে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। হংকংয়ে নিবন্ধিত ২৩ কোম্পানির ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এ টাকা ৯ মিলিয়ন ডলার পাঠায় জালিয়াত চক্র, যেসব কোম্পানির অধিকাংশের সেখানে দৃশ্যমান কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। এদিকে হংকংয়ে করা মামলায় দেশটির হাইকোর্টের বিচারক কনরাড সিগ্রোয়াত গত ডিসেম্বরে শুনানিতে বলেছেন, এ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে এমন ৪ জনের ব্যবসার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথবা তাদের ব্যবসায়িক কর্মকা- সক্রিয় নয়। পরে ওই চার এ্যাকাউন্টের লেনদেনের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। মামলার পর হংকং পুলিশ চুরি নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে কিনা সেটি পরিষ্কার নয়। এ সম্পর্কে পুলিশ বিভাগের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইকুয়েডরের এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ও মামলার তদন্ত নিয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাংকো দেল অস্ট্রো কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে কথা বলেনি। এ নিয়ে গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে ব্যাংক জালিয়াতির এটি চতুর্থ ঘটনা প্রকাশ পেল। জালিয়াতরা ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) ম্যাসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করে এসব অপরাধ সংঘঠন করেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে ২০১৩ সালে ২,৫০,০০০ মার্কিন ডলার, ইকুয়েডরের বাংকো দেল অস্ট্রো থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় জালিয়াত চক্র। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জালিয়াত চক্র ভিয়েতনামের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ওই চেষ্টা সফল হয়েছিল কি না তা স্পষ্ট করা হয়নি। হলে কত টাকা চুরি হয়েছে তাও অস্পষ্ট। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। ব্যাংক জালিয়াতির এসব ঘটনায় সুইফট ম্যাসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করেছে জালিয়াত চক্র। ব্রাসেলসভিত্তিক এ সংস্থার প্রযুক্তিতে যুক্ত রয়েছে বিশ্বের প্রায় ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এ্যাকাউন্ট থেকে চুরি, যা বিশ্বে এ যাবতকালের ব্যাংক চুরির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে অভিহিত হয়ে আসছে, তা নিয়ে তদন্ত করছে মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। এদিকে ইকুয়েডর ব্যাংক থেকে চুরি নিয়ে বাংকো দেল অস্ট্রো নিউইয়র্ক আদালতে প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি পরামর্শক ওয়েলস ফার্গো এ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় প্রযুক্তি পরামর্শক কোম্পানি ওয়েলস ফার্গো এ্যান্ড কোম্পানি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জালিয়াতি সম্পর্কে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এ চুরির সঙ্গে কারা জড়িত তা জানাতে পারেনি ব্যাংকটি। ইকুয়েডর, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম ব্যাংকে জালিয়াতিতে একই চক্র জড়িত কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে জালিয়াতির প্রক্রিয়া একই ধরনের এবং সব ঘটনায় সুইফট ম্যাসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাংক আওয়ারের পর। উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত টাকার ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। বিশ্বজুড়ে আলোড়িত এ ঘটনা ব্যাংক জালিয়াতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হচ্ছে। রিজার্ভ চুরির এ টাকার ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকের সাকাতি সিটির জুপিটার শাখায় ক্যাসিনো জাংকেট কিম অংয়ের এ্যাকাউন্টে। ওই এ্যাকাউন্ট থেকে আরও চার ব্যবসায়ীর এ্যাকাউন্ট ঘুরে পুরো টাকা চলে যায় জুয়ার আসরে। বাকি ২০ মিলিয়র ডলার পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কাভিত্তিক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শাকিলা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে। কিন্তু প্রাপক সংগঠনের নামের বানানে ভুল থাকায় পেমেন্ট আটকে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
×