ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষমা চাওয়া ইস্যুতে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের জনগণের বিপরীত অবস্থান

আজ হিরোশিমা যাচ্ছেন ওবামা

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৭ মে ২০১৬

আজ হিরোশিমা যাচ্ছেন ওবামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আজ হিরোশিমা যাচ্ছেন। এই প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু হামলার স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি পরিদর্শন করছেন। জাপানে শিল্পোন্নত জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি তিনি হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কও দেখতে যাবেন। খবর এএফপি, বিবিসি ও সিএনএনের। শুক্রবার ওবামার পূর্ব ঘোষিত হিরোশিমাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ হয়েছে। এ্যাসোসিয়েশন অব কোরিয়ান এ্যাটমিক বম্ব ভিক্টিমসের ব্যানারে একদল প্রতিবাদকারী এদিন রাজধানী সিউলে মার্কিন দূতাবাসের সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু হামলার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়। ১৯৪৫ সালের আগস্টে সংঘটিত ওই দুই হামলায় আনুমানিক ৪০ থেকে ৭০ হাজারের মতো কোরীয় নিহত হয়। ওই সময় কোরীয় উপদ্বীপে চলছিল জাপানের ঔপনিবেশিক শাসন। বোমা হামলায় নিহত কোরীয়দের বেশিরভাগই বাধ্যতামূলক শ্রম দেয়ার জন্য জাপানের সেনাবাহিনী ধরে এনেছিল। প্রতিবাদকারীরা জানায়, তারা জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমাবেশে বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরবর্তী বংশধরদের কেউ কেউ অংশ নেন। ওবামা আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন তিনি হিরোশিমায় আসছেন তবে বোমা হামলার জন্য তার দেশের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইবেন না। তার এই ঘোষণা দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণকে হতাশ করেছে। প্রতিবাদ সমাবেশে ৭৩ বছর বয়সী শিম জিন তায়ে বলছিলেন, ‘বিশ্ববাসী মনে করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু হামলার শিকার হয়েছিল জাপান। আসলে হামলার প্রকৃত শিকার ছিল কোরিয়ানরা। জাপান ছিল যুদ্ধের মূল হোতা।’ তিনি বলেন, কোরিয়াবাসীর দুর্ভোগের জন্য জাপান বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই এ পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। বৃহস্পতিবার সিউলে বিক্ষোভ শেষে এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ১০ জনকে শুক্রবার বিমানে করে হিরোশিমা যাওয়ার কথা রয়েছে। তারা সেখানে পরমাণু হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কোরীয়দের জন্য পৃথকভাবে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাবেন। শিম বলেছেন, ‘ওবামা যদি প্রকৃতই হিরোশিমা হামলায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সম্মান জানাতে আসতেন তবে তিনি অবশ্যই ওই স্মৃতিস্তম্ভটিও পরিদর্শন করতেন। এ নিয়ে কোরিয়ার জনগণ নিজেদের সরকারের ভূমিকা নিয়েও সন্তুষ্ট নয়। এদিকে যে হিরোশিমা যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু বোমাটি ফেলেছিল ক্ষমা চাওয়ার ইস্যুতে সেখানকার বাসিন্দারা কিভাবে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি। হিরোশিমা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সেখানকার বাসিন্দারা মনে করে নিহতরা শান্তিতে থাকুক, অতীতের ভুলের যেন আর পুনারাবৃত্তি না হয়। ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক অনেকে জাপানী এমনও ধারণা পোষণা করে যে ওই বোমা হামলার জন্য প্রকারান্তরে জাপানই দায়ী। একজন কিশোরী তাকে বলেন, ‘দেশ হিসেবে জাপানের আর অতীতের মতো ভুল করা উচিত নয়, আমেরিকার দু’দুটি পরমাণু বোমার শিকার হয়ে যে ভুলের খেসারত তাদের এক সময় দিতে হয়েছিল। বিবিসির ওই সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, ‘অন্য অনেক দেশের ওয়ার মিউজিয়ামের সঙ্গে এখানকার পার্থক্য দেখে অবাক হয়েছে। এই একটি মিউজিয়াম যেখানে আগ্রাসনকারীরা সমালোচিত নয়।’ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন হ্যারি ট্র্রুম্যান। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা নিক্ষেপ না করলে বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ হতো না, বোমা হামলার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন এই যুক্তি দেখিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে জাপানের অবস্থানও প্রায় একই রকম। হিরোশিমার ইস্যুতে দেশটির অফিসিয়াল বক্তব্য হলো, ‘এটি ছিল একটি ভুল। এই ভুলের দায় পুরো মানবজাতির, কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের নয়।’
×