ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষতার জন্য পদক

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৭ মে ২০১৬

দক্ষতার জন্য পদক

দক্ষতা নিয়ে কেউ জন্মায় না। দক্ষ হতে হয়, হয়ে উঠতে হয়। আর তা হওয়ার জন্য প্রয়োজন নিরলস সাধনা ও চর্চা। শ্রমনিষ্ঠা আর কর্মকুশলতার ভেতর দিয়ে নিজেকে গড়ে নিতে হয়। সৃজনশীলতা, মনন আর সুচিন্তার মধ্য দিয়ে ক্রমশ দক্ষ হয়ে ওঠার পাশাপাশি সচেনতার মাত্রাও সমন্বিত রাখতে হয়। প্রশাসন যারা পরিচালনা করেন তাদের যোগ্যতার পাশাপাশি দক্ষতাই মুখ্য ভূমিকা নেয়। তাদের দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে প্রশাসনের গতিপথ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য একটি দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসন অপরিহার্য। এমন একটি প্রশাসন গড়তে সংস্কার যেমন জরুরী, তেমনি কাজের জন্য পুরস্কার এবং তিরস্কারের বিধান থাকাও সঙ্গত। কাজের মানের ওপর নির্ভর করে কর্মকা- কোন্্পথে পরিচালিত হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক, প্রশাসনে মেধাবীরা আর আসছেন না। ইংরেজীতে আবেদনপত্র লিখতে না জানারাও দ-মু-ের হর্তাকর্তা বনে যান। শুদ্ধ বাংলা লিখতে না জানার ঘটনাও কম নয়। ভাষার ক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি সবকিছুকে বিপর্যস্ত করতেই পারে। আগে যেমন প্রশাসনে কেবলই মেধাবীদের ভিড় দেখা যেত, এখন তেমন নয়। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক জান্তা শাসকরা তাদের তল্পিবাহক হিসেবে প্রশাসনকে পরিচালনার জন্য দক্ষতা-অদক্ষতার ধার ধারেনি। কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির যেমন আশ্রয় নেয়া হয়েছে, তেমনি আনুগত্য ও বশংবদদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে দুর্বল ব্যবহার বিধান চালু করা হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার সংস্কৃতিটি সবল হয়ে উঠতে পারেনি। একটি দক্ষ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন সবসময় অপরিহার্য। দক্ষ প্রশাসনের জন্য সাত বছর আগে ‘সিভিল সার্ভিস এ্যাক্ট’ প্রণয়ন করা হলেও তার বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ ও পরিধি বৃদ্ধির কারণে মেধাবীরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা কিংবা সরকারের কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসন দক্ষ না হলে সবই বিফলে যেতে বাধ্য। প্রশাসন যেহেতু রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গ, সেহেতু তাকে উপযুক্ত করে তোলার প্রয়োজনকে অস্বীকার করা যায় না। এমনটাও বলা হয়, দক্ষতার বিচারে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের অবস্থান পাকিস্তান, এমনকি নেপালেরও নিচে। এদেশে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরনো ধাঁচের। পদোন্নতি মেধাভিত্তিক তো নয়ই, পদের বিপরীতেও হয় না অনেক সময়। অথচ পদোন্নতির জন্য যে প্রতিবেদন তৈরি হয়, তাতে এক হাজার কর্মকর্তার মধ্যে পাঁচজনকে বলা হয় পদোন্নতির অযোগ্য। বিদেশে প্রশিক্ষণ অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর হয় না। কর্মকর্তাদের কাজের সঙ্গে এই প্রশিক্ষণের কোন সম্পৃক্ততা থাকে না। অথচ এই প্রশাসন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জস্বরূপ হলেও দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রটি সঙ্কুুচিত যেন। মন্ত্রণালয়ের কাজে যোগ্য ও দক্ষদের মূল্যায়ন করার অর্থই গতিশীলতা আনা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রশাসনে দলীয়করণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় কর্মহীনতার সংস্কৃতির বিকাশ যেমন ঘটে, তেমনি অদক্ষদের ভিড়ও বাড়ে ভয়াবহভাবে। যার রেশ এখনও রয়ে গেছে। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে প্রশাসন ব্যবস্থা টিকে আছে। যদিও প্রয়োজন তার গতিশীল, কর্মকুশল হয়ে ওঠা। সরকারও তাই চায়। আর সে কারণে সম্ভবত সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিসিএস কর্মকর্তাদের প্রথমবার পদক দিতে যাচ্ছে সরকার। কর্মকর্তাদের কাজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগের সুফল হয়ত মিলবে। কিন্তু যোগ্য ও দক্ষ লোকের ঘাটতির সংখ্যা বেশি হলে প্রতিযোগিতা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এখানেও যদি সঠিক ব্যক্তি মূল্যায়িত না হন, তবে হতাশা বাড়তে পারে। জনগণও চায় একটি দক্ষ গণমুখী প্রশাসন।
×