ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

লে. জেনারেল জিয়ার হত্যাকাণ্ড প্রশাসকের বয়ান

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৭ মে ২০১৬

লে. জেনারেল জিয়ার হত্যাকাণ্ড প্রশাসকের বয়ান

(গতকালের সম্পাদকীয় পাতার পর) সেখানে যত লোক হয়েছিল, জিয়ার জনসভায়ও কখনও এত লোক হয়নি। জীবনে যা ছিলেন মৃত্যুর পর তার থেকেও আরো বড় বীরে পরিণত হলেন জিয়া। এসপির সঙ্গে জিয়াউদ্দিন জানাজায় গিয়েছিলেন। জানাজা শেষ হতে এসপি নিচু স্বরে বললেন, মনজুর ফটিকছড়িতে পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। ‘পুলিশ তল্লাশি করে তাকে পেলে গ্রেফতার করবে?’ ‘অবশ্যই’, জানালেন ডিসি। ঢাকায় যে ধরনের বিভ্রান্তি চলছে সেখান থেকে কোন নির্দেশনা পাওয়া দুরাশা। এসপি চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বললেন, কোন খবর থাকলে তিনি জানাবেন। ॥ ছয় ॥ ঘণ্টাখানেক পর বাসায় ফিরেছেন জিয়াউদ্দিন। এসপির ফোন। জানালেন, ফটিকছড়িতে স্থানীয় ইন্সপেক্টর কুদ্দুস জেনারেল মনজুরকে গ্রেফতার করে হাটহাজারী থানায় নিয়ে এসেছেন। খবর পেয়ে থানার পাশে প্রচুর লোক জমা হয়েছে। তারা অস্থির। এসপি জানতে চাচ্ছেন, মনজুরকে কি জেলে নিয়ে যাবেন? মনজুর ধরা পড়েছেন এতে জিয়াউদ্দিন খুশি। কিন্তু তাকে যদি শহরে আনার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। মনজুরের অনুগতরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছেন। তারা হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিতে পারেন। মানুষজন খবর পেলে তারা হামলা করতে পারে। জিয়াউদ্দিন জানালেন, আপাতত মনজুরকে থানায় রাখা হোক। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কমিশনারকে বিষয়টি জানাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবেন, মনজুরকে যাতে ঢাকায় নেয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। জিয়াউদ্দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কমিশনার সাইফুউদ্দিনের বাসায় গিয়ে খবরটা জানালেন। দুজনে সম্মত হলেন যে, মনজুরকে ঢাকায় পাঠালে তিনি ও স্থানীয় প্রশাসন নিরাপদে থাকবেন। কমিশনারের বাসা থেকে তারা চেষ্টা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবকে ফোনে ধরতে। পেলেন না। কমিশনার তখন কী মনে করে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে ফোন করলেন দিকনির্দেশনা পাওয়ার আশায়। আশ্চর্য যে বিচারপতি সাত্তারকে ফোনে পাওয়া গেল। কমিশনার তাকে খবরটি জানালেন। সাত্তার ইতোমধ্যে সে খবর পেয়েছেন। তিনি প্রশাসনের প্রস্তাব জানতে চাইলেন। কমিশনার জানালেন বিমানের একটি স্পেশাল ফ্লাইটে মনজুর ও তার পরিবারকে ঢাকা নেয়া হোক। হাটহাজারী পুলিশ তাকে এসকর্ট করে থানা থেকে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি সব শুনে বললেন, তিনি আইজি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানাচ্ছেন। জিয়াউদ্দিন অস্থির হয়ে উঠছিলেন। বিমানের এমডি মনজুরুল করিমের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন প্লেনের ব্যবস্থা করা যাবে তবে নির্দেশনা আসতে হবে রাষ্ট্রপতি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। এদিকে হাটহাজারী থানার চারপাশে মানুষজনের সংখ্যা বাড়ছে। এসপি সেখান থেকে ঘন ঘন ফোন করছেন। থানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিপন্ন। ৩০-৪০ মিনিট পরও ফোন না আসায় ডিসি আবার অনুরোধ করলেন কমিশনারকে তিনি আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা রাষ্ট্রপতিকে যেন ফোন করেন। কমিশনার আবারও ফোন করলেন রাষ্ট্রপতিকে এবং এখনও সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাওয়া গেল। সাত্তার জানালেন সেনাপ্রধান এরশাদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানাবেন। রাষ্ট্রপতির ফোনের জন্য তারা অপেক্ষা করছেন। থানা থেকে এসপি আবার ফোনে জানালেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এক সেনা অফিসার কিছু সৈন্য নিয়ে এসেছেন। তিনি মনজুরকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এসপি এখন কী করবেন। তিনি জানালেন, অফিসারকে জানাতে যে তারা রাষ্ট্রপতির নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন এবং মনজুরকে এখন সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা যাবে না। কমিশনার আবার ফোন করলেন রাষ্ট্রপতিকে এবং সঙ্গে সঙ্গে পেয়েও গেলেন। সাইফুউদ্দিন পুরো ঘটনা জানালেন। রাষ্ট্রপতি আবারও একই উত্তর দিলেন। ফোন রাখতে না রাখতে এসপি আবার ফোন করে জানালেন, সেনা কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে উঠছেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলছেন, মনজুরকে জোর করে নিয়ে যাবেন। ডিসি জানালেন, তাকে অপেক্ষা করতে বলুন। এখনই নির্দেশ পাওয়া যাবে। কমিশনার আবারও ফোন করলেন রাষ্ট্রপতিকে। এবার তিনি জানালেন, এরশাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মনজুরকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। এই নির্দেশ শুনে ডিসি কমিশনার হতভম্ব হয়ে গেলেন। হাটহাজারীতে এসপিকে ফোন করে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির নির্দেশ জানিয়ে দেয়া হলো। এসপিকে জানালেন, তিনি যেন রেকর্ড রাখেন ডিসির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ পেয়ে তিনি সেনা ক্যাপ্টেনের কাছে মনজুরকে হস্তান্তর করছেন। চলবে
×