থিয়েটারের প্রতি আকর্ষণ কিভাবে জন্মাল?
ছোটবেলা থেকেই থিয়েটারের প্রতি তাড়না কাজ করত। মনের ভেতরে সুর তালের টান অনুভব করতাম। সেই টানে ১৯৯৭ সালে নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জের অনিয়মিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হই। তখন থেকেই প্রত্যয় ছিল আজীবন থিয়েটারকে কেন্দ্র করেই বাঁচব।
মফস্বলের মেয়েদের কাছে থিয়েটার করাটা
কতখানি চ্যালেঞ্জিং?
মফস্বলে মেয়েদের থিয়েটার করাটা অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং! অজানা-অচেনা পরিবেশে নানারকম মানুষের সঙ্গে চলতে হয়। আর মেয়েদের জন্যে তো কোন পরিবেশই অনুকূলে নয়; সেটা তৈরি করে নিতে হয়। নানা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছা শক্তি বলেই আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।
থিয়েটারে আপনার পথচলা সম্পর্কে জানতে চাই?
আমার প্রথম থিয়েটার শুরু মুন্সীগঞ্জের অনিয়মিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীতে। তারপর ২০০৪ সালে ঢাকার সিএটির সঙ্গে কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে উদীচীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয় আমার। তবে মাঝখানে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনেকগুলো রেপার্টরিতে কাজ করতে থাকি। বর্তমানে আমি ঢাকার প্রথম সারির দল নাট্যধারার বিভিন্ন প্রযোজনায় নিয়মিত অভিনয় করছি।
থিয়েটার চর্চা ছাড়া আর কি কি
কাজ করছেন?
থিয়েটারের জন্যই নাচ শিখেছি; পড়াশোনা করছি। লোকসঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করছি সরকারী সঙ্গীত কলেজে। সেখানে বর্তমানে এমমিউজ করছি। আর থিয়েটার রিলেটেড অসংখ্য কর্মশালায় অংশ নিয়েছি। কারণ, একজন ভাল মঞ্চকর্মী হতে হলে থিয়েটার স্টাডিসের কোন বিকল্প নেই।
গানের দল ‘মেঠোপথ’ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
বর্তমানে আমি মেঠোপথ নামের একটি গানের দল নিয়ে ব্যস্ত। সমমনা কয়েকজন বন্ধু মিলে বাংলা গানের চর্চার উদ্দেশ্যেই এই গানের দল গঠন করা। বাঙালী সুর, বাঙালী ঐতিহ্যকে শ্রোতাদের মাঝে তুলে ধরাই তো আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত। গানের দল করার পেছনে আরেকটি কারণ হলোÑ মনের খোরাক যোগান। গান গাইতে ভাললাগে তাই এই দল করা। যাতে গানের চর্চাটাকে বেগবান করতে পারি।
অভিনীত মঞ্চ নাটকগুলোর
মধ্যে উল্লেখযোগ্য?
মুন্সীগঞ্জের অনিয়মিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সেই সমতটে এই জনপদে, সিএটির সোনাই বিবির পালা, ব্রান্ড ও মিশন, উদীচীর-হাফ আখড়াই, রাজনৈতিক হত্যা, পরিবেশ থিয়েটারের এলিজি অব সিডর ও রাম নন্দের আঁখ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিরÑ একশ বস্তা চাল, গাজী কালু চম্পাবতির পালা এবং ক্ষেত মজুর খৈমুদ্দিনে, রুদ্র রবী ও জালিয়ানওয়ালাবাগ, নাট্যম রেপার্টরির-দমের মাদার, লন্ডন রেপার্টরির-মিরান্ড এবং মোনা, নাট্যধারার- আয়না বিবির পালা, রথের রশি, গররাজি কবিরাজ, এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ। এবং অশ্বমেধযজ্ঞ নাটকে আমি সীতার ছেলে চরিত্রে করেছি।
আপনার দৃষ্টিতে থিয়েটারে নারী নির্দেশকের
কাজের পরিধি কতখানি?
আমাদের দেশে সেক্ষেত্রে নারী নির্দেশকগণ অনেক বেশি সরব আছেন। গুণী নির্দেশক ঈশরাত নিশাত, ত্রপা মজুমদার, লুৎফা নেত্রা, হৃদি হক, জয়িতা মহলানবীশ অনেক কাজ করছেন; সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়ও চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের সাধুবাদ জানাই।
কোন নারী নির্দেশকের নির্দেশনায়
কাজ করেছেন কি?
সর্বশেষ থিয়েটার ৫২ প্রযোজিত জয়ীতা মহলানবীশের নির্দেশনায়Ñ নননপুরের মেলায়, একজন কমলা সুন্দরী ও একটি বাঘ আসে নাটকে অভিনয় করছি। নাটকের পা-ুলিপি বদরুজ্জামান আলমগীরের। এ নাটকে আমি কমলা সুন্দরীর চরিত্রে অভিনয় করছি। নাটকের গল্প একটি যুদ্ধ শিশুকে নিয়ে।
থিয়েটারের পাশাপাশি মিডিয়াতে ব্যস্ততা কেমন?
অভিনীত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে এসএটিভির ধারাবাহিক-পরী, একুশেটিভির টেলিফিল্ম দ্য চেইন, চোখের বালি, থার্ড আই এবং আনন্দ টিভির তবু ভালবাসি অন্যতম। এছাড়া দেশটিভি ও বৈশাখী টিভিতে লাইভ গানের অনুষ্ঠান করেছি। এছাড়া গুণীনির্মাতা আশীষ খন্দকার পরিচালিত- বাথান চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছি। নাটকে আমি আমার সর্বোচ্চ পারফর্মেন্স করার চেষ্টা করি সবসময়। আমি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি। তবে মঞ্চকর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি বেশি।