ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুলের গানই প্রেরণা যোগায়

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২৬ মে ২০১৬

নজরুলের গানই প্রেরণা যোগায়

তৌফিক অপু ছোট বেলায় দাদি মার বাজানো গ্রামোফোন রেকর্ডের গান শুনে ঘুম ভাঙ্গত। অনেক গানের ভিড়ে উনি নজরুলের গানই বেশি শুনতেন। আর সে সুবাদেই আঙ্গুর বালা, ফিরোজা বেগমের মতো শিল্পীদের কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত শুনে শুনে বড় হয়েছি। ভেতরে ভেতরে তৈরি হয়েছে অন্যরকম এক ভাললাগা। আমাদের পারিবারিক আবহটাই ছিল অন্যরকম। বাবা নামাজ কালাম সবই পড়তেন আবার গানও ভালবাসতেন। কোন কিছু নিয়ে একগুঁয়েমি ছিল না। পরিষ্কার মনের মানুষ ছিলেন বাবা। আর আমার গানের জগতে পা দেয়া থেকে শুরু করে আজকের এ অবস্থানে আসার পেছনে পুরো ক্রেডিটটাই বাবাকে দিতে চাই, অনেকটা আবেগভরা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ও ছায়ানট এর নজরুল সঙ্গীতের শিক্ষক জান্নাত ই ফেরদৌস লাকি। আনন্দকণ্ঠের সাক্ষাতকারে শিল্পী আরও জানান বাবার পাশাপাশি মার অবদানও কম নয়। কারণ বাসায় থেকে মা সব সময় উৎসাহ যুগিয়ে যেতেন। আর সে উৎসাহেই বাসায় রাখা হয় ওস্তাদজি সতীন্দ্রনাথ হালদার। বলা যায় উনার হাতেই আমার সঙ্গীতের হাতেখড়ি। সঙ্গীতের বেসিক লেসনের পাঠ নিতেই বাবা একদিন আমাকে নিয়ে যান সঙ্গীতাঙ্গনের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ছায়ানটে। যতদূর মনে পড়ে ক্লাস সেভেনে থাকতে আমি ছায়ানটে ভর্তি হই। ওখানে ছোট্ট একটি পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয়ে যাই। সেখানে গিয়ে সান্নিধ্য পাই ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদের। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনেক অলিগলির এখানে এসে দেখা পাই। তবে আমার গানের মূল বিকাশটা ঘটে নিলুফার ইয়াসমিন আপার সান্নিধ্যে এসে। সত্যিকার অর্থেই আপা আমাকে ছোট মানুষের মতো করে হাত ধরে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন। আপার কাছে এসে আমার সঙ্গীতের অন্যান্য শাখায় বিচরণ করার সুযোগ ঘটে। অর্থাৎ নজরুল সঙ্গীতের পাশাপাশি আমি ডি এল রায়, অতুল প্রসাদ সেন ও রজনীকান্ত সেনের গান শেখার সুযোগ পাই। আমি এখনও এ গানগুলো চর্চা করে যাচ্ছি তবে নজরুলের গানই আমাকে প্রেরণা যোগায় প্রতিনিয়ত। সে ভালবাসাই আমি ছড়িয়ে দিচ্ছি আমার শিক্ষার্থীদের কাছে। বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশন এ নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান করে আসছি সেই ১৯৯২ সাল থেকে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে পরিবেশন করেছি নজরুলের গান। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু জায়গায় অতৃপ্ততা রয়েই গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সে সব অঞ্চলের শিল্পীদের কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত শুনে রীতিমতো বিমোহিত হয়েছি, কিন্তু তার পরক্ষণেই মনে হয়েছে কেন পারছি না এদেরকে প্রান্তিক পর্যায় থেকে তুলে আনতে। এদেরকে পেট্রোনাইজ করা গেলে অনেক ভাল ভাল শিল্পী তৈরি করা যেতো। সেই একই মুখ বার বার টিভি চ্যানেলে দেখতে হতো না। আরও একটি বিষয় ভেবে অবাক হই, আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোও কেন জানি দু-চারজন চেনামুখ শিল্পী ছাড়া নজরুল সঙ্গীতের অনুষ্ঠান করে না। কি সে তাদের ভীতি তা আজও বুঝতে পারিনি। অথচ অনেক ভাল ভাল শিল্পী প্রতিনিয়ত তাদের মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। তাদেরও সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই তো দেখা মিলবে একঝাঁক নজরুল সঙ্গীত শিল্পীর। ২০০৬ সালে নজরুল সঙ্গীতের ওপর আমার প্রথম একক এ্যালবাম ‘নীল যমুনার জল’ প্রকাশিত হয় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ব্যানার থেকে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, এ্যালবাম প্রকাশের আগে সবগুলো গান শুনে সঙ্গীতজ্ঞ অহিদুল হক একটি মন্তব্য লিখেন যা আমি এ্যালবামে সংযুক্ত করেছি। সেই লেখাটির সঙ্গে যে কতটা ভালবাসা ও মমতা জড়ানো তা বলে বোঝানো যাবে না। সত্যিই এমন মানুষ বুঝি বার বার আসে না। এ ছাড়া ছায়ানটে সুমন চৌধুরী এবং খায়রুল আনাম শাকিলের সান্নিধ্য আমাকে আরও বেশি বেগবান করেছে। আমার এ ছোট্ট সঙ্গীত জীবনে এতসব গুণীমানুষ জড়িয়ে আছেন যে, নিজেকে অনেক বেশি ধন্য মনে হয়। বর্তমানে রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত থাকলেও গানের সঙ্গে যেন কোনভাবেই গাঁটছাড়া হয়নি। এ সময়ে এসে আমার বার বারই মনে হয়েছে নজরুলের প্রতিটি বাণী ও গান যদি আমরা ধারণ করতে পারি তবেই যে কোন ক্রান্তিলগ্ন পাড়ি দেয়া সম্ভব।
×