ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীতে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি ॥ ঝাউবীথি লণ্ড ভণ্ড কক্সবাজারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ মে ২০১৬

পটুয়াখালীতে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি ॥ ঝাউবীথি লণ্ড ভণ্ড কক্সবাজারে

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে পটুয়াখালীর সবগুলো উপজেলা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় চরাঞ্চল ও দ্বীপাঞ্চলসহ দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আর রাস্তাঘাট উপচে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার লাখো মানুষ। ঝড়ো বাতাস আর জলাবদ্ধতায় আংশিক এবং সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে বহু কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিতে ডুবে ভেসে গেছে মাছ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি। পানির নিচে তলিয়ে গেছে ফসলী জমি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রবিশস্যের। এখনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর লোকজন। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্য মতে, জেলায় ৮৫৬টি কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমির মরিচ, ৪৩৩ হেক্টর জমির তিল, ৭৩ হেক্টর জমির চিনাবাদাম, ১ হাজার ৩২২ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৪৬ হেক্টর জমির পানের বরজ ও ১৯৬ হেক্টর জমির আউশের বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সড়ক বিভাগ ও এলজিইডির পুল-কালভার্ট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চূড়ান্তভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও প্রস্তুত করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঝাউ বাগানটি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ল-ভ- হয়ে গেছে। পাশাপাশি পূর্ণিমার তিথির জোয়ারের ধাক্কায় উপড়ে পড়েছে তিন শতাধিক ঝাউগাছ। ১৯৭৪ সালে কক্সবাজার সফরে এসে সৈকতের ঝাউবাগান সৃজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতিবিজড়িত ঝাউ বাগান পর্যটননগরী কক্সবাজারকে সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝার কবল থেকে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে। মাত্র দুদিনেই কয়েকশ’ ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শহর রক্ষার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট, নাজিরারটেক, সুগন্ধা পয়েন্ট, শৈবাল, লাবণী, কলাতলী ও সী-ইন পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সাগরের বালিয়াড়িতে উপড়ে এবং কাটা অবস্থায় পড়ে আছে অসংখ্য ঝাউগাছ। রোয়ানুর তা-বে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও পূর্ণিমার প্রবল জোয়ারের পানির আঘাতে সৈকতের ঝাউগাছের গোড়া থেকে বালি সরে গিয়ে এসব গাছ উপড়ে গেছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতের ঝাউ বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এ সময় গাছ কাটা গেলে ‘ঝরে পড়া’ বলে চালিয়ে দেয়া যায়। এ সুযোগে গত ৩-৪ দিনে কমপক্ষে শতাধিক ঝাউগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ সময়ে বন কর্মীরা উদ্ধারও করেছে অর্ধ শতাধিক কাটা ঝাউগাছ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মানবসৃষ্ট বিপর্যয় অব্যাহত থাকলে কক্সবাজার সৈকতের ঝাউ বাগানটির অস্তিত্ব নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বরিশালে মাদ্রাসা ল-ভ-, ক্লাস চলছে খোলা মাঠে ॥ স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তা-বে বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের বেগম রফিকুল ইসলাম মহিলা দাখিল মাদ্রাসার টিনশেড ভবন দুমড়ে-মুচড়ে ল-ভ- হয়ে গেছে। বর্তমানে মাদ্রাসার ছাত্রীদের পার্শ্ববর্তী একটি মাঠের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। মাদ্রাসা সুপার মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রী নিয়ে চলা ইউনিয়নের একমাত্র মহিলা দাখিল মাদ্র্রাসার টিনশেডের ভবনটি গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে ল-ভ- হয়ে গেছে। মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী অন্য কোন জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে ছাত্রীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হারও কমে গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার লুুৎফুন নাহার আফরোজ জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তালিকা ইতোমধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান জানান, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর খোঁজখবর নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসাটি মেরামত করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
×