ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার নওয়াববাড়ি অবশেষে সংরক্ষণ করল সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ মে ২০১৬

বগুড়ার নওয়াববাড়ি অবশেষে সংরক্ষণ করল সরকার

সমুদ্র হক ॥ সরকারের পক্ষে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বগুড়ার দেড়শ’ বছরের পুরনো নওয়াব বাড়ির সকল স্থাপনা ভূমি ও বৃক্ষসহ ৩ দশমিক ৪২ একর জায়গা সংরক্ষণ করেছে। এর আগে গত ১২ মে সরকারী গেজেট প্রকাশিত হয়। তার আগে সরকার সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়। সংরক্ষিত পুরাকীর্তির সাইনবোর্ডে বলা হয়েছেÑ কোন ব্যক্তি এই পুরাকীর্তির কোন রকম ধ্বংস বা অনিষ্ট সাধন করলে বা এর কোন বিকৃতি বা অঙ্গচ্ছেদ ঘটালে বা এর কোন অংশের ওপর কিছু লিখলে বা খোদাই করলে বা কোন চিহ্ন বা দাগ কাটলে ১৯৬৮ সালের ১৪ নম্বর পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারায় তিনি সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দ-ে দ-িত হবেন। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের এই সাইনবোর্ড দেয়ার পর বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষ সরকারকে অভিনন্দিত করেছে। অনেকে আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেছে। গত ১৫ এপ্রিল নওয়াব পরিবারের অংশীদারের একাংশ অতি গোপনে বগুড়ার তিন শীর্ষ ব্যবসায়ীর কাছে নওয়াব প্যালেস বিক্রি করলে বগুড়ার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এর দু’দিন পর ১৯ এপ্রিল সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নওয়াব বাড়ি সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারী মুদ্রণালয়কে নির্দেশ দেয়। সংরক্ষণের ঘোষণার চিঠিটি বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কাছে আসে ৩ মে। এর দু’দিন পরই কথিত তিন শীর্ষ ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর, রেজাউল আলম জুয়েল ও মাসুদার রহমান মিলন নওয়াব বাড়িতে সাইনবোর্ড দেয় ক্রয় সূত্রে এই জায়গার মালিক তারা। এদিকে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর ভূমিটি সংরক্ষণের পর নিয়মানুযায়ী ওই জায়গায় কোন কিছু লিখাও যাবে না। এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সূত্র জানায় পুরাকীর্তি আইনে পরিষ্কার উল্লেখ আছে কোনভাবেই সংরক্ষিত এলাকায় কিছুই পরিবর্তন এমনকি আঁচড়ও দেয়া যাবে না। বগুড়ার সাধারণ মানুষের কথা, যে ৩ দশমিক ৪২ একর ভূমি ও স্থাপনা সংরক্ষণ করা হয়েছে এর মধ্যে যা যা আছে তার সবই সংরক্ষণ করা দরকার। প্রয়োজনে সরকার অধিগ্রহণ করে এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের বিভাগীয় সদর দফতরও হতে পারে এই নওয়াব বাড়ি। বগুড়ার ঐতিহ্যের এই নওয়াব পরিবারের বংশধরদের মধ্যে ছিলেন তদানিন্তন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী। যিনি বগুড়ার মোহাম্মদ আলী নামে পরিচিত। মূলত বগুড়ার নওয়াব বাড়ি তার নামেই অধিক পরিচিত। বগুড়ার এই নওয়াব পরিবারের অনেক ওয়াকফ সম্পত্তি অবৈধভাবে বেচাকেনা হয়েছে। সরকার নওয়াব বাড়ির যে অংশটি সংরক্ষণ করেছে তার চৌহদ্দীর উত্তরে টিএমএসএস মার্কেট ও আল আমিন কমপ্লেক্স তার পাশে আরও একটি মার্কেট ওয়াকফ সম্পত্তি। দক্ষিণে কারুপল্লী নামের যে শিল্পের প্রতিষ্ঠান তাও ছিল ওয়াকফ সম্পত্তি। এই ওয়াকফ সম্পত্তি কিনে নিয়েছে রানার প্লাজা নামের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় আন্ডার ভ্যালুয়েশনে সরকারকে বহু কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে এই ভূমি বেচাকেনা হয়। শেষ অধ্যায়ে নওয়াব পরিবারের মোহাম্মদ আলীর দুই স্ত্রীর প্রথম পক্ষের দুই ছেলে হাম্মাদ আলী ও হামদে আলী গোপনে নওয়াব বাড়ি বিক্রি করেন। মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় পক্ষের লেবাননী স্ত্রীর এক ছেলে এক মেয়ে যথাক্রমে মাহমুদ আলী ও মাহমুদা বেগম এই জমি বিক্রির বিপক্ষে অবস্থান নেন। গত জানুয়ারি মাসে তারা বগুড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে তাদের পূর্বসূরীদের শেষ ভিটা রক্ষায় সরকারকে অধিগ্রহণের আহ্বান জানান। এরপরই গোপনে এই ভূমি বিক্রির পাঁয়তারা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গোপনে তা বিক্রি হয়।
×