ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগোতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৬ মে ২০১৬

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগোতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম নাম ছিল ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের যুদ্ধজয়ের অবশ্যম্ভাবী হাতিয়ার হিসেবে এ বেতার কেন্দ্র প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু হওয়ার পর। ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চট্টগ্রাম বেতারে। পরে কালুরঘাট থেকে বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্বের সকল মানুষ এমনকি মুক্তিসংগ্রামী জনগণকেও নিত্যকার খবরাখবর পরিবেশন করা এবং যুদ্ধরত সংগ্রামী যোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করা কিংবা বিপ্লবী সরকারের নির্দেশাবলী সময় সময় জানানোর ক্ষেত্রে এই বেতারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। যখন মেজর জিয়াকে বেতারে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি বলতে সম্মত হয়েছিলেন কিন্তু ‘বিপ্লবী’ শব্দটি বাদ দিতে বলেন। না হলে তিনি কিছু বলবেন না। বিপ্লবী বেতারের উদ্যোক্তারা তখন ভাবলেন বাঙালী সেনাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণের জন্য মেজর জিয়াকে প্রয়োজন, তখন উদ্যোক্তারা ‘বিপ্লবী’ শব্দটা বাদ দিতে সম্মত হলেন। পাকিস্তানী হামলার আগ পর্যন্ত বেতার কেন্দ্রটি কালুরঘাটেই ছিল। পরে ১ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটারটি উঠিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী ত্রিপুরা রাজ্যের বগাফার জঙ্গলে বিএসএফের সহযোগিতায় ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়। ভারত সরকার ৫০ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন মধ্যম তরঙ্গের একটি ট্রান্সমিটারের ব্যবস্থা করেছিল। তাই নিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে কলকাতার বালীগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি বাড়িতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপিত হলো। রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ মিলনায়তনে বুধবার সকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শব্দসৈনিক কামাল লোহানী। প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা দিবসের আয়োজন করে যৌথভাবে স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শব্দসৈনিক মেজর (অব) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীক, আশরাফুল আলম, আশফাকুর রহমান খান, সৈয়দ মহিউদ্দিন হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী, স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনোয়ার হোসেন খান প্রমুখ। শুরুতে কোরান থেকে তেলাওয়াত করেন শব্দসৈনিক মাওলানা শেখ মোঃ উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী। পরে প্রয়াত শব্দসৈনিকদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামসুন্নাহার। বক্তরা একাত্তরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, অবরুদ্ধ বাঙালীর মনোবল চাঙ্গা রাখার কাজ ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের। শুধু বাংলা নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য ইংরেজী এমনকি উর্দুতেও খবর প্রচার করা হতো। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কলকাতার বালীগঞ্জ সার্কুলার রোডে প্রতিষ্ঠিত হলেও ট্রান্সমিটারটি ছিল সীমান্তের কাছাকাছি নিরাপদ কোন একটি স্থানে, সেটি নিরাপত্তার কারণে আমাদের কাছেও গোপন রাখা হয়েছিল। এই শক্তিশালী বেতার যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ছিল কারণ এর মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধ কেন, শত্রু নিধনে আমাদের সফলতা ও শত্রুর ব্যর্থতা প্রচার মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং তাঁদের অনুপ্রাণিত করা, দেশের অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ বাংলার তাবত মানুষের মনোবল অটুট রাখা ও তাঁদের সাহস দেয়া যেমন কর্তব্য ছিল তেমনি বিদেশে সকল সহায়ক রাষ্ট্র-জনগোষ্ঠীকে জানাবার বেতারই ছিল অন্যতম প্রধান মাধ্যম। শুধু কি তাই নয়, অবাঙালী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ‘পাকিস্তান’ ভাঙা হচ্ছে বলে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তার বিরুদ্ধে সত্যটাকে তুলে ধরার দায়িত্বও এই বেতার মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হতো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেটের বেতার কর্মী, শিল্পী-কলাকুশলীরা এটি পরিচালনা করতেন। এছাড়া দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ সাংবাদিক ও শিক্ষক-শিক্ষাবিদ তথা লেখক-বুদ্ধিজীবীরা সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের গান ও কথিকা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, চরমপত্র, জল্লাদের দরবার, অগ্নিশিখা, পি-ির প্রলাপ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতেসহ নানা বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। বক্তারা নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা ইতিহাসের পাতায় থাকবে। নতুন প্রজন্ম যেন এর সঠিক ইতিহাস পাঠ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। আমরা লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা চেয়েছিলাম একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। জঙ্গীবাদ নানাভাবে আমাদের হেনস্তা করছে। তাদের প্রতিহত করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধু প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়া সফল হবে। আলোচনা শেষে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা, গে-ারিয়া কিশলয় কচি-কাঁচার মেলা, সাভার ঐতিহ্য শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
×