ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরদোলা কারুপণ্য বাঁশি জাদুপ্রদর্শনী বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৬ মে ২০১৬

নাগরদোলা কারুপণ্য বাঁশি জাদুপ্রদর্শনী বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস

বাবুল হোসেন ॥ হঠাৎ বৃষ্টিতে ছন্দপতন ঘটল ত্রিশালের দরিরামপুর একাডেমি মাঠের নজরুলমেলায়। টানা ৩০ মিনিটের ভারি বর্ষণে কাদাজলে একাকার মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা সংলগ্ন নজরুলমঞ্চে তখন চলছিল উদ্বোধনী পর্বের আলোচনা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৃষ্টির তাড়া খেয়ে মেলা ছেড়ে সবাই অনুষ্ঠানস্থলের নকশী কাঁথার সামিয়ানার ভেতরে। ত্রিশালে নজরুল জন্মজয়ন্তীর দিনে প্রতিবছর এমন বৃষ্টি অনেকটা রেওয়াজের মতো। সামিয়ানার ভেতরে যখন গমগম করা দর্শক শ্রোতার উপস্থিতি, ঠিক তখন বাইরের মেলা প্রাঙ্গণ ফাঁকা। অথচ কবি নজরুলের বাল্য স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালের দরিরামপুর একাডেমি মাঠে গত কয়েকদিন ধরে থরে থরে সাজানো হয় নানা স্থান থেকে আসা কয়েক শ’ স্টল। কারুপণ্য, বাঁশের বাঁশি, জাদু প্রদর্শনী, নাগরদোলা ও শিশুদের জন্য ট্রেন জার্নিসহ আরও অনেক বাহারি আয়োজন। বৃষ্টিতে খানিক বিঘœ ঘটলেও আয়োজকদের আশা জমে উঠবে নজরুলমেলা। বৃষ্টি কেটে গেলেই ঢল নামবে নজরুলপ্রেমিক হাজারো ভক্ত-অনুরাগীর। ত্রিশালে নজরুল জন্মোৎসবের প্রধান আকর্ষণ এই মেলা। দিনভর আকাশে কালো মেঘের আনাগোনার সঙ্গে ভ্যাপসা গরমে হাসফাস অবস্থা। বুধবার বিকেলে প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে নজরুলজয়ন্তীর ৩ দিনের উৎসব উদ্বোধনের পর পরই আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টিতে স্বস্তির ছাপ পড়ে ত্রিশালজুড়ে। তারপরই ঝকঝকে সোনালী রোদ। এই রোদ আর বৃষ্টির খেলার মধ্যে হাজারো মানুষের স্রোত নামে দরিরামপুর একাডেমি মাঠের নজরুলমঞ্চের সামনের সামিয়ানার ভেতরে। অপেক্ষা বৃষ্টি কমে গেলেই মেলায় নামা। ঠিক তাই বৃষ্টির পর নামে মেলামুখী জনতার ঢল। নজরুল- প্রেমিক তিন প্রজন্মের ভক্ত অনুরাগী আর নজরুল গবেষকদের এবার ভিড় কিছুটা কম হলেও সকাল দুপুরের ভ্যাপসা গরম আর কাদাজলের ভেতরে গমগম করা ভিড় ঠেলে অনেকে কেনাকাটা করে ফিরছেন পছন্দের পণ্যটি। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে মেলার আনন্দ উচ্ছ্বাস ছিল অনেকটা বাঁধভাঙ্গা। নাগরদোলা, জাদু প্রদর্শনী আর ম্যাজিক উপভোগ শেষে পছন্দের সব খেলনা কিনে বাড়ি ফিরেছে শিশুরা হাসিমুখে। আসলে নজরুল উৎসব নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দায়সাড়া আয়োজনকে প্রাণ এনে দেয় এই মেলা। উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালের এই দিনে কবি নজরুল ইসলামকে ত্রিশালে নিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন দারোগা রফিজ উল্লাহ। প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ত্রিশালের দরিরামপুর একাডেমি মাঠে বসেছে নজরুমেলা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাডেমি মাঠের নজরুলমঞ্চে বুধবার বিকেলে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি নজরুল উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণার আগেই মূলত জমে উঠে এই মেলা। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই মেলা শুক্রবার পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে এর মেয়াদ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্টল মালিকেরা। আসলে এবারের মেলা শুরুও হয়েছে একদিন আগে মঙ্গলবার। উদ্বোধনী পর্বের পর পরই মেলায় নজরুল-প্রেমিক-ভক্ত-অনুরাগীদের ঢল নেমে আসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দরিরামপুর একাডেমি মাঠ ও ত্রিশাল নজরুল ডিগ্রী কলেজ মাঠের মেলায় বসেছে ছয় শতাধিক স্টল। নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রী ও হরেক রকমের খাবার ছাড়াও মেলায় বিনোদনের জন্য রয়েছে আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য নাগরদোলা, ম্যাজিক শো ও ট্রেন জার্নি। মুখরোচক আচার আর চটপটি, বাঁশের বাঁশি এবং কারুপণ্য ও খেলনাসহ আছে আরও অনেক কিছু। এবার একাডেমি মাঠে বাড়তি আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বইমেলা। বইমেলায় ২৪টি স্টল বসেছে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের স্টলও রয়েছে। মেলার স্টলগুলোতে নজরুলের অসংখ্য বই চোখে পড়ার মতো। উৎসব উদ্বোধনের আগে কৃষিমন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী পর্বে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি, সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট রেজা আলী ও আব্দুল মতিন সরকার, পুলিশ সুপার মঈনুল হক, ত্রিশালের মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু জাফর রিপন। এর আগে স্মারক বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম। এদিকে, ত্রিশালের দরিরামপুর একাডেমি মেলাতে আসা ভক্ত-অনুরাগীদের অনেকে গেছেন নজরুলের শিকড় ত্রিশালের কাজির শিমলা দারোগাবাড়ি ও নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া বেপারিবাড়ির নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রসহ নামাপাড়ায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে। বাদ যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বটতলাও। এই উৎসব উপলক্ষে দারোগাবাড়ি, বিচুতিয়া বেপারিবাড়ি ও নজরুল বিশ্ববিদ্যলয়েও ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালাসহ নানা আয়োজনে উৎসবমুখর। এবার তিন দিনের উৎসবে ৮০টি সংগঠনের ১২ শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নিয়েছেন বলে জানালেন সাংস্কৃতিক উৎসবের আহ্বায়ক অধ্যাপক আমির আহম্মদ চৌধুরী রতন।
×