ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রা বন্দর নির্মাণে বেলজিয়ামের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ মে ২০১৬

পায়রা বন্দর নির্মাণে বেলজিয়ামের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পায়রা সমুদ্র বন্দরের ড্রেজিং করার জন্য বেলজিয়ামের কোম্পানি ‘জান ডি নুলে’র সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঢাকায় স্বাক্ষরিত এমওইউর ভিত্তিতে বন্দরের মূল চ্যানেল এবং রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করবে কোম্পানিটি। বন্দরটি পুরোদমে ২০১৮ সাল নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে এখন আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে আসতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য হচ্ছে ১৪ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ বন্দরে ভেড়ানো। বন্দরটিকে ঘিরে গড়ে উঠছে তিনটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র। এছাড়া এখানে দুটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ইতোমধ্যে এখানে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৯ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়লা আমদানিতে কেন্দ্রটি পায়রা বন্দর ব্যবহার করবে। পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের কাজ দ্রুত শুরু করা গেলে বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লার জাহাজ জেটিতে আনা সম্ভব হবে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান এবং জান ডি নুলের কানট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড্যানি ডি হার্ট এমওইউতে সই করেন। এ সময় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, পায়রা বন্দর প্রকল্পটি সরকারের ফাস্টট্রাক প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম। এই বন্দর উন্নয়নের ওপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে মন্ত্রী সকলের প্রতি আহ্বান জানান। প্রতি বছরে দেশের বন্দরের ব্যবহার ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন বন্দর স্থাপনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এখন দুটি বন্দরে যে আকারের জাহাজ আসতে পারে, এর চাইতে বৃহত্তর দৈর্ঘ্য ও বেশি গভীরতার জাহাজ সরাসরি বন্দরের জেটিতে আসতে পারবে পায়রায়। সরকার তৃতীয় সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের চেষ্টা করছে। পায়রা বন্দর অধ্যাদেশ ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর পাস করা হয়। ওই বছরই ১৯ নবেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত ১৯টি কাজের জন্য আগ্রহী বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানি নির্বাচনের বিষয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে গত বছর ২৫ আগস্ট আগ্রহপত্র চাওয়া হয়। এর মধ্যে ক্যাপিটাল এবং রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করার জন্য ১০টি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর দাখিল করা প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে ১০টি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। এর মধ্যে বেলজিয়ামের কোম্পানিটিকে চূড়ান্ত করা হয়। পায়রা বন্দরের নিযুক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বহির্নোঙর থেকে রাবনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত ৩৫ নটিক্যাল মাইল দীর্ঘ চ্যানেলের ড্রেজিং প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ১৬ মিটার ড্রাফটের মাদার ভ্যাসেলে চলাচল উপযোগী চ্যানেলে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল ও সংরক্ষণ ড্রেজিং করতে হবে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান জানান, তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম চালুর সুবাদে সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্র। সমুদ্র বন্দর ঘিরে তৈরি হবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে থাকবে নৌবাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস শেরে-ই বাংলা। বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালীর চারলেন বিশিষ্ট সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের মধ্যে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে। নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় বলেন, পায়রার পোতাশ্রয়ের বিস্তৃত প্রায় ১১ কিমি এবং প্রশস্ত ৪ কিমি যা কন্টেনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সমুদ্র বন্দরটি চালু হলে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তৈল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ আরও অনেক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
×