ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জি-৭ আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ মে ২০১৬

জি-৭ আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জি সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের নাগোয়ায় শুক্রবার শুরু হবে এই সম্মেলন। বৃহস্পতিবার সকালে জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৮ মে জাপানের টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, অবকাঠামোগত সহায়তা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতাসহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিবিড়তর ও গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চারদিনের এই সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ছাড়াও জি সেভেন সম্মেলনে অংশ নিতে আসা নেতাদের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন ছাড়াও জাপান প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া সংবর্ধনায়ও যোগ দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর উপলক্ষে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, ২৭ মে নাগোয়ায় জি সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। নাগোয়া থেকে ২৮ মে টোকিও যাবেন তিনি। টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এইদিন টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৯ মে সকালে প্রধানমন্ত্রী দেশটির শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য ও শিল্প সংস্থার বিশিষ্ট নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে ২৯ মে সন্ধ্যায় টোকিও থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং জাপানের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংস্থা জেইটিআর’র মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে এই সফরে। ২৯ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানের ব্যবসায়ীদের প্রাতরাশ বৈঠকের পরই এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়াও লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাপুয়া নিউ গিনির সরকার প্রধানরা এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, জি সেভেন শীর্ষ সম্মেলন পৃথিবীর অর্থনীতিগুলোর মুখ্য প্লাটফরম। এটা তাদের নিজেদের একান্ত আলোচনার ক্ষেত্র। এই প্রথম জাপানের উদ্যোগে বিভিন্ন বিবেচনায় সাত দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে কয়েকটি মুখ্য সমকালীন উন্নয়ন বিষয়ে জি সেভেন নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা করবেন। বাংলাদেশ যেহেতু ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, এলডিসি, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসনের মাত সমসাময়িক কালে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে নেতৃত্ব প্রদান করে আসছে, তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে আগামী ২৮ মে টোকিওতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, অবকাঠামোগত সহায়তা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতাসহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিবিড়তর ও গতিশীল হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে জি সেভেন নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে মতবিনিময় করবেন। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপান সফর করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৪ বছর পূর্তিতে ও বর্তমান সরকারের সুদূর প্রসারী বলিষ্ঠ বৈদেশিক নীতির ধারাবাহিকতায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তি এক নতুন উচ্চতা পেয়েছে। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ভৌত অবকাঠামো, যোগাযোগ, বিদ্যুত, জ্বালানি, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোহিতার নতুন নতুন দ্বার ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হচ্ছে। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালের ২৫-২৮ মে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর করেছেন। এরপর ২০১৪ সালের ৬-৭ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে নিবিড়তর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বুলগেরিয়া সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশ কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া আইসিটি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন বিশেষ করে হেরিটেজ ট্যুরিজম ও ইকো ট্যুরিজম উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী কৌশল বিনিময়ের বিষয়গুলো উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীর বুলগেরিয়া সফরকালে দেশটির ১৫ ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিক সাক্ষাত করেন। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বুলগেরিয়া সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক, দুই দেশের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ, এসএমই ফাউন্ডেশন ও বুলগেরিয়ার স্মল এ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজের প্রমোশন এজেন্সির সহযোগিতা ও বাংলাদেশ-বুলগেরিয়ার চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×