ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহিমাগঞ্জে ব্যবসায়ী দেবেশ প্রামাণিককে জবাই করে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ মে ২০১৬

মহিমাগঞ্জে ব্যবসায়ী দেবেশ প্রামাণিককে জবাই করে হত্যা

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে ॥ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট জুতা ব্যবসায়ী দেবেশ চন্দ্র প্রামাণিক (৬৮) বুধবার সকালে তার দোকানে খুন হয়েছেন। তিনি অন্য দিনের মতো সকাল ছয়টার দিকে বাড়িসংলগ্ন জুতার দোকানটি খোলেন। দোকানে পূজা দেয়ার শেষে অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করছিলেন। ঠিক সে সময় ওই ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করা হয়। দুর্বৃত্তরা খুন করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী আনন্দ রাণী প্রামাণিক তাদের দেখতে পান। তিনি মনে করেছিলেন ওরা দোকানে কেনাকাটার জন্য এসেছিল। কিন্তু দোকানে গিয়ে আনন্দ রাণী তার স্বামীকে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে তিনি জানান, যে লোকগুলো দোকান থেকে বেরিয়ে যায় তাদের একজনকে তিনি চেনেন। তার কথা অনুযায়ী এলাকার লোকজন মহিমাগঞ্জ বাজারে খোঁজাখুঁজি করে নৃপেন চন্দ্র দাস (৩৮) নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, নৃপেন হেরোইনসেবী ও ছিঁচকে চোর। পার্শ্ববর্তী এক দোকানদার জানান, নৃপেন কয়েক দিন আগে জুতার দোকানে এসেছিল। সে জুতা চুরি করার চেষ্টাকালে দেবেশ চন্দ্র তাকে দেখে ফেলে এবং রাগারাগি করে দোকান থেকে বের করে দেন। এতে নৃপেন ক্ষিপ্ত হয়ে থাকতে পারে। এলাকার লোকজন এবং নিহতের স্বজনরা আরও জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো দেবেশ প্রামাণিক খুব সকালেই দোকান খুলে বসেছিলেন। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তার স্ত্রী আনন্দ রাণী পাশের বাসা থেকে ফিরে দোকানের সামনে এলে স্থানীয় হেরোইনসেবী নৃপেনসহ তিন-চারজনকে দোকান থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেন। এ সময় তিনি দোকানে ঢুকে তার স্বামীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার করে লোকজন ডাকাডাকি শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মনজুর হাবীব বলেন, ব্যবসায়ী দেবেশ চন্দ্র মহিমাগঞ্জ বাজারের শহীদ ফজলুল করিম সড়কের পাশে ‘প্রামাণিক সু স্টোর’ নামে তার দোকান সংলগ্ন বাসায় বসবাস করতেন। তিনি মহিমাগঞ্জের মৃত যোগেশ চন্দ্র প্রামাণিকের ছেলে। চার কন্যাকে বিয়ে দেয়ার পর নির্বিরোধেী এই প্রবীণ ব্যবসায়ী সাদামাটা জীবনযাপন করছিলেন। তার একমাত্র ছেলে দেবাশীষ প্রামাণিক অনার্স পরীক্ষা দেয়ার জন্য বগুড়ায় অবস্থান করছিলেন। মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে মহিমাগঞ্জ বাজারে দোকান খুলে বসেন দেবেশ চন্দ্র। এর কিছুক্ষণ পরই ৩-৪ দুর্বৃত্ত হঠাৎ দোকানে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার গলায় ও ঘাড়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে লোকজন এসে রক্তাক্ত লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। নিহত দেবেশ চন্দ্র প্রামাণিকের ছেলে দেবাশীষ প্রামাণিক অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কয়েক মাদকাসক্ত যুবক প্রায়ই তার বাবার দোকানে এসে জুতা ও টাকা দাবি করত। এ নিয়ে তার বাবার সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে। মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হৃষিকেশ ঘোষ হত্যাকা-ের ঘটনাটিকে হালকাভাবে না দেখার দাবি জানিয়ে বলেন, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া গোবিন্দগঞ্জের ব্যবসায়ী তরুণ দত্ত হত্যাকা-ের সঙ্গে এ হত্যার ঘটনাটির মিল রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে এটি কোন জঙ্গী তৎপরতার অংশ হিসেবে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর কাজ কিনা, তা তদন্ত করে বের করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। গাইবান্ধা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রণজিৎ বকসী সূর্য্য জানান, গোবিন্দগঞ্জের তরুণ দত্ত হত্যা এবং মহিমাগঞ্জে দেবেশ চন্দ্রকে একই কায়দায় খুনের ঘটনায় সংখ্যালঘুদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এটি কোন জঙ্গী তৎপরতার অংশ কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশ এবং প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এ ঘটনায় অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, নিহতের গলা ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। কেন কী কারণে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আনন্দ রাণী প্রামাণিক বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, এটা নিঃসন্দেহে একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। তবে তৎপরতার সঙ্গে বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যে কোন মুহূর্তে এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ আশাবাদী বলে তিনি মনে করেন।
×