ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হেগেও হারল জামায়াতীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৬ মে ২০১৬

হেগেও হারল জামায়াতীরা

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছিল বিএনপি-জামায়াত প্রমাণিত হলো বিএনপিও যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী’ অপরাধের যে অভিযোগগুলো বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী আন্তর্জাতিক আদালতে করেছিল, তার কোন আইনগত ভিত্তি নেই বলে মত দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। বিএনপি-জামায়াতের ভিত্তিহীন অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালত নাকচ করে দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক এক চিঠির মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসি এ তথ্য জানিয়েছে। বুধবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, ২০১৩ সাল থেকে জামায়াত-বিএনপি চক্র আন্তর্জাতিক আদালতে এ অভিযোগ করে আসছিল। আদালতের সাম্প্রতিক এ মতামত আবার প্রমাণ করল যে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগী গোষ্ঠী স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত। বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে তাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব ঘৃণ্য কৃতকর্ম ধামাচাপা দেয়ার জন্যই এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করেছিল। নেদারল্যান্ডসের আদালত সেটা কয়েকদিন আগে নাকচ করে দেয়। এ বিষয়ে আদালত বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে নাকচের বিষয়টি অবহিত করা হয়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দ-িতদের দুটি দল জামায়াত ও বিএনপি ২০১৩ সাল থেকে নেদারল্যান্ডসের দি হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগগুলো করেছিল। বিএনপি ও জামায়াতের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে, যা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিষয়েও অভিযোগ করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ওই আদালতের এক প্রসিকিউটর ফাতোউ বেনসউদা সম্প্রতি এক চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে, এসব অভিযোগের কোন আইনগত ভিত্তি নেই। আবুল হাসান বলেন, এটি আবারও প্রমাণ হলো, জামায়াত-বিএনপি ও তাদের সহযোগী গোষ্ঠী স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত। তিনি বলেন, বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে তাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার জন্য এ ধরনের অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ২০১৩ সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ কয়েক কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা, রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা, হেফাজতের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে অভিযানে অগণিত মানুষ হত্যার অভিযোগ তুলে তাকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এ অভিযোগের বিষয়ে কোন কার্যক্রম বা ফলাফল জানা যায়নি। তিন বছর পর সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই আদালতের এক প্রসিকিউটর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনে তুরস্কের একটি ইসলামী মানবাধিকার সংগঠন। ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ফ্রিডমস এ্যান্ড রাইটস নামের এ সংগঠনের পক্ষে আবেদনটি করেন যুদ্ধাপরাধবিষয়ক খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। লন্ডনের বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় টবি ক্যাডম্যান আইসিসিতে এই আবেদন করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মাহমুদ আলী বলেন, তুরস্ক রিকল করেনি, কনসালটেশনের জন্য ডেকেছে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তুরস্কে আমাদের রাষ্ট্রদূতকেও আমরা ডেকে পাঠিয়েছি। এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ- কার্যকরের পর তীব্র অসন্তোষ জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোগান। তারপরই ঢাকা থেকে রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন নমনীয়তা দেখাচ্ছে না দাবি করার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কটা চলমান রয়েছে, কোন চিড় ধরেনি। কারাবন্দী সাংবাদিক শফিক রেহমানের জন্য যুক্তরাজ্যের কনস্যুলার সুবিধা চাওয়ার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে। তবে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা দোষী কোন ব্যক্তিকে কনস্যুলার এ্যাকসেস দেয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আটক সাংবাদিক শফিক রেহমানের সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় আইনী সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলতে কনস্যুলার সুবিধা চেয়েছে যুক্তরাজ্য। এ অনুরোধ জানিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হুগো সয়ারের লেখা একটি চিঠি মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর কাছে পৌঁছে দেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেক।
×