ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফতোয়াবাজি ॥ দুই বছর একঘরে এক পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৬ মে ২০১৬

ফতোয়াবাজি ॥ দুই বছর একঘরে এক পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ রাগের বশবর্তী হয়ে স্ত্রীকে মুখের কথায় তালাক দেবার ঘটনায় হিল্লা বিয়ের ফতোয়ার শিকার হয়ে সামাজিকভাবে বয়কটে একঘরে বন্দী হয়ে আছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের নগর বড়াইবাড়ি গ্রামের দিনমুজর নুর ইসলাম ও তার পরিবার। প্রায় দুই বছর ধরে পরিবারটিকে একঘরে করে রাখায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। অভিযোগে জানা যায়, পারিবারিক কলহে ২০১৪ সালের ৯ জুলাই রাতে ওই গ্রামের দিনমজুর নুর ইসলাম তার স্ত্রী শিরীনা খাতুনকে (৩৫) এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তালাক কথাটি উচ্চারণ করে; যা প্রকাশ হয়ে পড়লে ওই দিনমজুরের স্ত্রীকে হিল্লা বিয়ের ফতোয়া দেন নগর বড়াইবাড়ি জামে মসজিদের খতিব আব্দুস সাত্তারসহ এলাকার মাতবররা। কিন্তু ফতোয়া মেনে নেননি ওই স্বামী-স্ত্রী। ফলে পরিবারের সকলকে একঘরে করে রাখা হয়। সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গেলে নুর ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে এ কথা জানিয়ে বলেন, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার হিল্লা বিয়ের ফতোয়ার শিকার হয়ে এক ঘরে হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফতোয়ার কারণে তিনি এলাকার স্থানীয় মসজিদে গিয়ে নামাজও পড়তে পারছেন না । ছোট ছেলে আহম্মদ কবীরকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে গেলে তাকে ভর্তি নেয়নি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কেউ কাজে ডাকেন না। স্ত্রীসহ ছেলেরা কারও বাড়িতেও যেতে পারছে না। এমনকি চাচাত ভাইসহ কিছু আপনজন মারা যাওয়ায় জানাজার ও মাটি দিতে গেলে এলাকার লোকজনের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাকে। তিনি এ থেকে প্রতিকার চেয়েছেন। এ ব্যাপারে হিল্লা বিয়ের ফতোয়া জারীকারী নগর বড়াইবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের বলেন- যেহেতু নুর ইসলাম স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তাই তাকে কোরানের আলোকে সংশোধন হতে বলা হয়েছে। ওই মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মশিয়ার রহমান বলেন, আমরা হিল্লা বিয়ে বুঝি না। মসজিদের হুজুর যা বলেছেন তাই করার জন্য নুর ইসলামকে বলা হয়েছে। তবে নুর ইসলামের চলাফেরাসহ অন্যান্য কাজকর্মে কেউ বাধা সৃষ্টি করছেন না বলে তিনি দাবি করেন। ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নুর ইসলামের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তার স্ত্রীকে হিল্লা বিয়েতে রাজি হতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় আমরা তাকে বয়কট করেছি। এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মুহাম্মদ আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, তালাকের বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই কোন মুফতি বা মাওলানার কাছে এ বিষয়ে জানতে পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের খতিব হাফেজ মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, পারিবারিক কলহে একই সঙ্গে তিন তালাক দিলে ইসলামী বিধান মোতাবেক তা এক তালাক বলে কার্যকর হবে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান আইনে তা তালাক হবে না। স্বামী-স্ত্রী মিলে সংসার করে জীবন পরিচালনা করতে পারবেন। এ জন্য তওবা করতে হবে। মুসলিম পারিবারিক আইনে তালাকের বিধান কি এবং একঘরে করে রাখার বিষয়ে রংপুরের আইনজীবি এম এ বাশার টিপু বলেন, আইনগতভাবে একটি পরিবারকে একঘরে করে রাখা বা হিল্লা বিয়ের কোন বিধান নেই। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক।
×