ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাই পারিবারিক বন্ধন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৬ মে ২০১৬

চাই পারিবারিক বন্ধন

অলোক আচার্য্য প্রতিটি পরিবারের সন্তান সেই পরিবারের একেকটি প্রাণ। যাদের ঘিরে বাবা-মার স্বপ্ন আবর্তিত হয়। কোন বাবা-মা চান না তার আদরের সন্তানটি মাদকের নেশায় আসক্ত হোক। মাদকের ভয়াল থাবা তার জীবন বিপন্ন করে তুলুক। সন্তান যদি মাদকাসক্ত হয় তখন সেই পরিবারের যে দুর্ভোগ হয় সেই অন্তর্জ্বালা কোনকিছু দিয়েই পূরণ করার থাকে না। আমাদের ঐশীর ঘটনা মনে আছে। মাদক কিভাবে একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিল তা আমরা জেনেছি। এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে যেখানে পরিবারগুলো প্রতিনিয়তই অশান্তির আগুনে দগ্ধ হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, টিভি-চ্যানেলগুলোয় আলোচনা হয়েছে তবে বিস্তার ঠেকানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সন্তান মাদকে আসক্তের পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত- অনেক সময় দেখা যায় ছেলে বা মেয়ের কোন বন্ধু মাদকে আসক্ত। তার সঙ্গে মিশতে গিয়ে, কৌতূহলবশত একদিন বা এ রকম কয়েকদিন মাদক নেয়। এবং এরপর থেকেই নিয়মিতভাবে তা নিতে নিতে একসময় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত- আমাদের যুবসমাজ আজ ইউরোপ, আমেরিকা বা ভারতীয় সিরিয়ালের জোয়ারে ভাসছে। যা দেখছি তাই অনুকরণ করার চেষ্টা করছি। যার কারণে পরিবারের মধ্য অন্তর্দ্বন্দ্ব বা কলহ লেগেই রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব প্রভাব পড়ছে বড় হলে। তারা মানসিকভাবে বিষণœতা বা একাকিত্বে ভুগছে। এসব থেকেই অনেক ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পরছে। তাছাড়া ফ্যাশনের কারণেও অনেকে মাদকের দিকে ঝুঁকছে এবং যখন তার প্রভাব বুঝতে পারছে ততদিনে সে নেশাগ্রস্তের পর্যায়ে চলে গেছে। তৃতীয়ত- বর্তমান অবস্থায় ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া সম্ভব হয় না। বাবা-মা থেকে দিনের পর দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে ছেলেমেয়ের মধ্যে নিঃসঙ্গতার মনোভাব জন্ম নেয়। নিঃসঙ্গতার এই মনোভাব কাটাতে মাদকদ্রব্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। মানসিকভাবে বেড়ে ওঠায় অপূর্ণ সন্তানদের ক্ষেত্রেই মাদকাসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মাদকাসক্ত সন্তানের কারণে শুধু সেই পরিবারই নয় বরং সমাজ ও সর্বোপরি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সন্তান যাতে মাদকের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকে তার প্রথম দায়িত্ব পালন করতে হবে পরিবারকে। আদরের সন্তান যেন একাকিত্ব অনুভব না করে, বাবা-মার আদর থেকে বঞ্চিত না হয়, পরিবারের সবার মধ্যে থেকে সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে পরিবারের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আদরের সন্তান বাইরে কার সঙ্গে ওঠাবসা করে, কোথায় যায় বা প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে কি না এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কারণ পরিবার থেকে সন্তানকে সঠিক রাস্তা না দেখালে সঠিক রাস্তার খোঁজ সে পাবে না। মাদক হচ্ছে চোরাবালির মতো। একবার যদি সেখানে কেউ আটকে যায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কষ্টের। সন্তান যদি মাদকাসক্ত হয়ে যায় তবে প্রথমে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা উচিত। আর তা সম্ভব না হলে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি মাদকাসক্ত হওয়ার আগেই তাকে সেই রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়। একটি সমাজ, দেশের উন্নতির জন্য একটি সুন্দর মন ও চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। পরিবারের দৃঢ় বন্ধন পারে সন্তানকে মাদকাসক্তর হাত থেকে বাঁচাতে। বেড়া, পাবনা থেকে
×