ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একটি সামাজিক ব্যাধি

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ মাদকাসক্ত সন্তান

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৬ মে ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ মাদকাসক্ত সন্তান

অরূপ রতন চৌধুরী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ড্রাগ হলো এমন বস্তু যা দেহে গ্রহণ করলে ব্যক্তির এক বা একাধিক কার্যকলাপের পরিবর্তন ঘটায়। ড্রাগ ব্যবহারের কারণে রোগী তার ওষুধের গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে, এমনকি তা বিষে পরিনত হয়। তাই অনেক সময় এই বিষ স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগ করলে হয় ওষুধ, কিন্তু বেশি মাত্রা বা অযথা গ্রহণ করলে হয় বিষাক্ত যা শরীরকে নিস্তেজ করে, মৃত্যু ডেকে আনে। সাম্প্রতিক একটি লোমহর্ষক কাহিনী আমাদের সকলের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেছে। পত্রিকার শিরোনাম হলো ‘মাদকাসক্ত মেয়ে নিজ হাতে বাবা-মাকে খুন করল’ যদিও এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। পরিসংখ্যান বলছে দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। অন্যদিকে সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। আরও একটি ভয়ঙ্কর চিত্র হচ্ছে, সারাদেশের ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল। তাই ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্তরা নানান ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কারও কারও কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৮০ ভাগ খুনের সঙ্গে মাদকাসক্তরা কোন না, কোনভাবে জড়িত। মাদকাসক্ত একটি সামাজিক ব্যাধি, তাই সামাজিক সক্রিয়তার মাধ্যমেই এর প্রতিরোধ করা সম্ভব। গৃহে বাবা-মা থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ, পাড়া, মহল্লা বা এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ‘ইউনাইটেড স্টেটস্ এ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধের উক্তি থেকে বলছিÑ ‘বাবা-মা-ই পারেন সন্তানকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে।’ সুতরাং বাবা-মা, যদি তাদের সময়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সন্তানের জন্য বরাদ্দ রাখেন; তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করেন সমস্যাবলী সমাধানে সচেতন ও মনোযোগী হন তবেই এর প্রতিরোধ বহুলাংশে সম্ভব। বাবা-মার তাদের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও সন্তানদের সচেতন করা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা যায় বাবা-মায়ের সাহচর্যে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠা সন্তান অন্যদের অপেক্ষা অনেক কম কুপথে পা বাড়ায়। তাই বাবা-মা ও অভিভাবকদেরও বলবো, প্রথমেই নিজেকে জানুন, আয়নায় নিজেকে দেখুন, তারপর নিজ নিজ সন্তানদের সামনে সুন্দর আদর্শ তুলে ধরুন, কারণ তারাই একদিন হবে এই সংসার, এই সমাজ এবং এই দেশের কর্ণধার। ঢাকা থেকে
×