ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ০০:২৯, ২৫ মে ২০১৬

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ মিলনায়তনে আজ বুধবার সকালে। প্রথমবারেরমতো প্রতিষ্ঠা দিবসের আয়োজন করে যৈথভাবে স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শব্দসৈনিক মেজর (অব:) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতিক, আশরাফুল আলম, আশফাকুর রহমান খান, সৈয়দ মহিউদ্দিন হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার বেজাউল করিম চৌধুরী, স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের সাধারন সম্পাদক মো: মনোয়ার হোসেন খান প্রমুখ।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শব্দসৈনিক কামাল লোহানী। শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াতের করেন শ্বব্দসৈনিক মাওলানা শেখ মো: উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী। পরে প্রয়াত শ্বব্দসৈনিকদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশনের পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামসুন্নাহার। বক্তরা একাত্তরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, অবরুদ্ধ বাঙালির মনোবল চাঙ্গা রাখার কাজ ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের। শুধুমাত্র বাংলা নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য ইংরেজি এমনকি উর্দুতেও খবর প্রচার করা হতো। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কলকাতার বালীগঞ্জ সার্কুলার রোডে প্রতিষ্ঠিত হলেও ট্রান্সমিটারটি ছিল সীমান্তের কাছাকাছি নিরাপদ কোনো একটি স্থানে, সেটি নিরাপত্তার কারণে আমাদের কাছেও গোপন রাখা হয়েছিল। এই শক্তিশালী বেতারযন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ছিল কারণ এর মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধ কেন, শত্রুনিধনে আমাদের সফলতা ও শত্রুর ব্যর্থতা প্রচার মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং তাঁদের অনুপ্রাণিত করা, দেশের অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ বাংলার তাবৎ মানুষের মনোবল অটুট রাখা ও তাঁদের সাহস দেয়া যেমন কর্তব্য ছিল তেমনি বিদেশে সকল সহায়ক রাষ্ট্র-জনগোষ্ঠীকে জানাবার বেতারই ছিল অন্যতম প্রধান মাধ্যম। শুধু কি তাই নয়, অবাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ‘পাকিস্তান’ ভাঙা হচ্ছে বলে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তার বিরুদ্ধে সত্যটাকে তুলে ধরার দায়িত্বও এই বেতার মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হতো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর সিলেটের বেতার কর্মী, শিল্পী-কলাকুশলীরা এটি পরিচালনা করতেন। এ ছাড়া দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ সাংবাদিক ও শিক্ষক-শিক্ষাবিদ তথা লেখক-বুদ্ধিজীবীরা সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের গান ও কথিকা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, চরমপত্র, জল্লাদের দরবার, অগ্নিশিখা, পিন্ডির প্রলাপ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতেসহ নানা বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। বক্তারা নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা ইতিহাসের পাতায় থাকবে। নতুন প্রজন্ম যেন এর সঠিক ইতিহাস পাঠ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। আমরা লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা চেয়েছিলাম একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। জঙ্গিবাদ নানাভাবে আমাদের হেনস্তা করছে। তাদের প্রতিহত করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়া সফল হবে। আলোচনা শেষে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা, গেন্ডারিয়া কিশলয় কচিকাচার মেলা, সাভার ঐতিহ্য শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
×