ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাতদিনের রিমান্ড শেষে আসলাম চৌধুরী জেলে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ মে ২০১৬

সাতদিনের রিমান্ড শেষে আসলাম চৌধুরী জেলে

শংকর কুমার দে ॥ ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে পুনরায় রিমান্ডের আবেদন না জানিয়ে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের বিষয়ে ৫৪ ধারা ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৬৭ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা দেয়ার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীল সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেয়ার কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়নি। তবে মঙ্গলবার আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মতিঝিল ও লালবাগ থানার ২০১৫ সালে দায়ের করা দুটি নাশকতা অর্থাৎ জ্বালাও-পোড়াও মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। শ্যোন এরেস্ট দেখানো দুটি মামলায় পুনরায় তাকে রিমান্ডের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে, যা আগামী ৩০ মে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিবি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করে পুনরায় রিমান্ডের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবারই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বেঞ্চের রায়ে আপীল খারিজ করে হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলা হয়, যার কারণে এ বিষয়ে কিছু সংশোধনী থাকবে ও একটি নীতিমালা ঠিক করে দেবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। আপীল বেঞ্চ রায়ে ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারার সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোর সংশোধনী ও নীতিমালা করে দেয়ার রায় ঘোষণা ও বাধ্যবাধকতার কারণে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করার কারণে রিমান্ডের আবেদন জানায়নি ডিবি। ডিবি তাকে রিমান্ডের আবেদন না জানানোর কারণে আদালতের নির্দেশে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন নাগরিকের ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক কিংবা কোন সম্পর্ক রাখাই দ-নীয় অপরাধ। বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী গত ৫ মার্চ ভারতে গিয়ে ৯ মার্চ পর্যন্ত দিল্লীতে অবস্থান করেন। সেখানে ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা করে বৈঠকে মিলিত হন। ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি এ্যান্ড এ্যাডভোকেসির প্রধান ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাতের বেশকিছু ছবি প্রথমে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়, যা পরে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিসহ রিপোর্ট প্রকাশ হয়। ইসরাইলের অনলাইন সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম অনলাইন ডটকমে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, সেখানে মেন্দি এন সাফাদি বলেছেন, শীঘ্রই সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলীদের জন্য খুলে দেয়া হবে। এ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণেই গ্রেফতার করা হয় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে। ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে দিল্লীতে গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার অভিযোগে গত ১৫ মে বিকেলে খিলক্ষেত এলাকা থেকে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে ডিবি গ্রেফতার করে ৭ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মোসাদের এজেন্টের (লিকুদ নেতা) সঙ্গে বৈঠকের খবর প্রকাশ হওয়াকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে প্রশাসন। তার ওই বৈঠকের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরপর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এখন তার বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা প্রয়োগের বিষয়ে মহামান্য সুপ্রীমকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সেখানে আমাদের আর বলার কিছু নেই, সুপ্রীমকোর্টের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এডিসি মোঃ শাহজাহান দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ওই দুটি ধারা প্রয়োগের বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীল মঙ্গলবার খারিজ করে দিয়ে একটি নীতিমালা দেয়ার বিষয়ে রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট। বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে এখন সর্বোচ্চ আদালতের ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় ও ১৬৭ ধারার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়ের বাধ্যবাধকতা আছে। এ কারণে বিএনপি নেতাকে আগের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ফের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়নি। তবে ২০১৫ সালের মতিঝিল ও লালবাগ থানার জ্বালাও-পোড়াও নাশকতার মামলায় শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে বিএনপি নেতাকে। এ দুটি মামলায় তাকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে আদালতে। আগামী ৩০ মে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। ডিবি সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মতিঝিল ও লালবাগ থানা ছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৮টি মামলা দায়ের করা রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই নাশকতার মামলা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী যে জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোলবোমার আগুনের সন্ত্রাস ও নাশকতা চালিয়েছে তার পৃষ্ঠপোষকতা, মদতদান ও অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অভিযোগ করা মামলাও তদন্তাধীন। এ ছাড়াও বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রদ্রোহের বিষয়ে যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সে বিষয়েও ডিবি তদন্ত শুরু করেছে।
×