ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রদ্ধা ভালবাসায় মুনতাসীর মামুনের জন্মদিন উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৫ মে ২০১৬

শ্রদ্ধা ভালবাসায় মুনতাসীর মামুনের জন্মদিন উদযাপন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় উদযাপিত হয়েছে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের ৬৫তম জন্মদিন। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা একাডেমীর আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, খুলনা, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী, হাশেম খান-পারভিন ট্রাস্ট, বাংলাদেশ চর্চা, কথা প্রকাশ, সুবর্ণ, জার্নিম্যান বুকস অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। পরিচালনা করেন শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম। অনুষ্ঠান চলাকালে বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেই হাতে ফুল নিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে ভরে উঠে বাংলা একাডেমীর আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন। শিক্ষক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, আইনজীবী, পুলিশ, ছাত্র নেতা, সংসদ সদস্য থেকে আমজনতা, সবাই এসে ভালোবাসায় সিক্ত করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে অনুষ্ঠানের মঞ্চ। এই আয়োজনে শরীক হয় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী, অন্যপ্রকাশ, লোকশিল্প জাদুঘর, আন্তর্জাতিক জাদুঘর সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদ, দৈনিক জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজসহ অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এরপর অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক শাহরিয়ার কবির, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, মুনতাসীর মামুনের চাচা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ইউআইটিএসের ভিসি অধ্যাপক ও কবি মোহাম্মদ সামাদ, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মুনতাসীর মামুনের সহধর্মীনী ফাতেমা মামুন, দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, কথা সাহিত্যিক নিলুফার বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক শারমিন আক্তার, অধ্যাপক সুরমা জাকারিয়া সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সাকলায়েন সাকী, প্রভাষক শান্তা পত্রনবীশ প্রমুখ। আলোচনায় শাহরিয়ার কবির বলেন, মামুনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের বয়স ৫০ পেরিয়েছে। তাকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ইতিহাসের মতো এমন নিরস বিষয়কে সাধারণ মানুষের কাছে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই মুনতাসীর মামুন। তিনি মানুষকে ইতিহাস সচেতন করেছেন। ইতিহাস চর্চাকে আন্দোলনে রূপ দিয়েছেন। তিনি বলেন, মামুন একজন বাতিঘর। তিনি শুধু ছাত্রদের নয়, পুরো জাতিকে আলোকিত করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে শত নির্যাতনেও তার কলম এগিয়ে গেছে নির্ভয়ে। আরও শাণিত ধারায়। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, দেশে যখন হেফাজতের উত্থান ঘটে তখন শফির মতো দুর্বৃত্ত তাকে মরতাদ ঘোষণা করেছিল। তাদের হিট লিস্টে মামুনের নাম উঠে। ব্যক্তি জীবনে মামুনকে একজন আস্তিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। এসময় শাহরিয়ার কবির অধ্যাপক মামুনের জন্য সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দাবি জানান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি শ্রেণীকক্ষে আবদ্ধ করে রাখা যাবে না। তার কর্মে সে প্রমাণ করেছে সমগ্র বাংলাদেশ তার শ্রেণীকক্ষ। এসময় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস সংযোজনের জন্য মামুনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, অধ্যাপক মামুন আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে লেখেন, সংগ্রামের কথা লেখেন। এর মাধ্যমে তিনি খুব দ্রুতই সাধারণ মানুষের কাতারে চলে আসেন। তাদের সঙ্গে বিপ্লব ও সংগ্রামের সাথী হন। এ জন্যই তিনি এত জনপ্রিয়। বর্তমানে মুক্তচিন্তার কথা বললে ব্লগার বলে, আওয়ামী লীগ বলে হত্যা করা হয়। এই সময়েও মামুন তাঁর লিখনীতে সিদ্দহস্ত, শক্ত হাতে তার কলম এগিয়ে নিচ্ছেন দেশকে। তিনি অধ্যাপক মামুনের দীর্ঘ জীবন কামনা করেন এবং তাঁর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, স্যার, জনগনের ইতিহাসবিদ। তিনি আমাদের শেকড়ের ইতিবৃত্ত রচনা করেছেন। দেবি দূর্গার মতো দশটি হাত দিয়ে প্রতিনিয়ত লিখে চলেছেন। অসীম সাহস আর ধৈর্য্য নিয়ে তিনি আমাদের সামনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ৩০৮টি বই লিখেছেন, আরও অনেক বই লিখে আমাদেরকে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন আমাদের স্যার। ধন্যবাদ জানিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, একজন মানুষকে গড়ে তোলে পরিবার ও পরিবেশ। সেক্ষেত্রে আমি ভাগ্যবান। আমাকে চারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, চারবার মুরতাদ ঘোষণা করা হয়েছে এবং অসংখ্যবার মৃত্যুর বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। কিন্তু আমি এখনও বেঁচে আছি। সৃষ্টিকর্তার কৃপা আর দেশের মানুষের ভালোবাসা না থাকলে এই দেশে আমি এতোদিন বেঁচে থাকতাম না। এজন্য আমার ভাগ্যে বিশ্বাস হয়। আমি দেশবাসী, আমার স্ত্রী, সন্তান, পরিবার-পরিজন এবং সকল শুভাকাক্সক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
×