ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুলজয়ন্তীর চারদিনের অনুষ্ঠানমালা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ মে ২০১৬

নজরুলজয়ন্তীর চারদিনের অনুষ্ঠানমালা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ বুধবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। আর জন্মদিনের একদিন আগেই দ্রোহ, প্রেম, মানবতা ও সাম্যের কবিকে চার দিনের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হলো মঙ্গলবার। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, নাচের নান্দনিকতায় ও বক্তার আলোচনায় একইসঙ্গে স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হলো কবিকে। কবি বন্দনার এ আয়োজনে নজরুলের ঘনিষ্ঠজন কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদকে স্মরণ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। এ উৎসবের আয়োজক বেসরকারী নজরুল চর্চা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল একাডেমি। বৃষ্টিস্নাত বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে নজরুল রচিত কাব্য আমপারা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। নজরুলকে নিবেদিত উৎসবে সাংস্কৃতিক আয়োজনের সঙ্গে ছিল নজরুল সঙ্গীতের এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন, সম্মননা প্রদান ও আলোচনা। সঙ্গীত সাধনায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদীকে। একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশিত সম্মেলক সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায়Ñ একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী ও মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল শিরোনামের দুটি গান। নজরুলের শিশু সাহিত্য ‘খুকি ও কাঠবেড়ালি’ কবিতা অবলম্বনে বগুড়া জেলা নজরুল একাডেমি পরিবেশিত নাটকটি হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে নৃত্য পরিবেশন করে ফেনী ও মোহাম্মদপুর নজরুল একাডেমি শাখার শিল্পীরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলার শিল্পীদের মধ্যে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, খালিদ হোসেন, ফাহমিদা রহমান, রেবেকা সুলতানা রেবা, তানজিনা করিম স্বরলিপি, মাহমুদা আঞ্জুম বৃষ্টি, বাবু, মইদুল ইসলাম, করিম শাহাবুদ্দীন, ইয়াকুব আলী খান, ইউসুফ আহমেদ খান প্রমুখ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শামীমা চৌধুরী। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আগে ছিল উদ্বোধনী আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান। আলোচনায় অংশ নেন ম. মীজানুর রহমান, মুহাম্মদ আবদুল হান্নান, আবদুল মুকীত চৌধুরী, খিলখিল কাজী ও নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষ খালিদ হোসেন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। প্রধান অতিথিকে আজীবন সঙ্গীত সাধনায় অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নজরুল একাডেমি সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী শিল্পী রেবেকা সুলতানার ‘তোমার আঁখির মত আকাশের দুটি তারা’ শীর্ষক নজরুল সঙ্গীতের এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার বিকেল ৫টায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে জাতীয় কবির জন্মদিন ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে। সাংস্কৃতিক পর্বে নজরুল একাডেমি শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশনের পর বিশেষ আকর্ষণ থাকবে নজরুল দর্শন অবলম্বনে নৃত্যানুষ্ঠান ‘মানবতার কবি নজরুল’। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বিভিন্ন জেলা থেকে আমন্ত্রিত শিল্পী ও নজরুল একাডেমির শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন সৈয়দা নাজনীন ফেরদৌস। উৎসবের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনের আয়োজন বসবে মগবাজারের নজরুল একাডেমি ভবন প্রাঙ্গণে। এতে থাকবে নজরুলের গান ও নাটকের পরিবেশনাসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী শুরু কাল ॥ প্রতিশ্রুতিশীল চারুশিল্পীদের অংশগ্রহণে কাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী। ১৮৮ জন শিল্পীর ১৮০টি চিত্রকর্ম, ৩০টি ভাস্কর্য, ৮টি স্থাপনা শিল্প, ৭টি ভিডিও স্থাপনা শিল্প ও ২টি পারফর্মিং আর্টসহ মোট ২২৭টি শিল্পকর্ম নিয়ে এ প্রদর্শনী চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মঙ্গলবার একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের সেমিনার কক্ষ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, চারুকলা বিভাগের পরিচালক উৎপল কুমার দাস ও প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক ইকবাল হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দ্বিবার্ষিক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক লাখ টাকা মূল্যমানের ‘নবীন শিল্পী চারুকলা পুরস্কার’, চিত্রকর্ম, ছাপচিত্র ও মিশ্র মাধ্যমে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ৩টি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার এবং ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪টি সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হবে। ১৯৭৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করা এ প্রদর্শনীতে ৪৬৪ জন নবীন শিল্পীর মোট ১ হাজার ২০টি শিল্পকর্ম থেকে প্রদর্শনীতে স্থানপ্রাপ্ত শিল্পকর্ম বাছাই করা হয়েছে। ঋষিজের আয়োজনে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী ॥ বাংলা, বাঙালী ও বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসভায় মেলে ধরেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অন্যদিকে সাম্য, দ্রোহ, প্রেম ও মানবতার আলোয় বাঙালীকে জাগরিত করেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আর বাঙালীর মননের দিশারী এই দুই কবিকে এক আয়োজনে স্মরণ করল ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। গান, কবিতা ও আলেচনায় উদ্যাপন করা হলো রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের জন্মদিন। অনুষ্ঠানের উপলক্ষ ছিল বিশ্বকবির ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঋষিজের শিল্পীদের উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় দুই কবিকে স্মরণের এ আয়োজন। পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার’। এরপর শিল্পী পরিবেশন করেন নজরুলের গান ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। গান শেষে শুরু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিবেদিত আলোচনাসভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমির চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ। সভাপতিত্ব করেন ঋষিজের সভাপতি গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে ছিল গান ও কবিতার সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে রবীন্দ্র-নজরুলের বিভিন্ন পর্যায়ের গান পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অনিমা রায়, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও সমর বড়ুয়া। রবীন্দ্র-নজরুলের রচনাবলী থেকে পাঠ করেন বাকশিল্পী লায়লা আফরোজ, রফিকুল ইসলাম, ফয়জুল আলম পাপ্পু ও অনন্যা লাবনী পুতুল। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেয় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, আনন্দন, ভিন্নধারা ও পঞ্চভাস্কর। নৃত্য পরিবেশন করেন মৌরিন। বিবাদী সারগাম নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। বিবাদী সারগাম নামের নাটকটি মঞ্চে এনেছে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর। শিশির রহমান রচিত ও নির্দেশিত প্রযোজনাটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আলোয় বাংলার তিন বীর সেনানী বিনয়, বাদল ও দীনেশের কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন রামিজ রাজু, মাইনুল তাওহীদ, বন্ধু তুহিন, রিগ্যান সোহাগ রতœ, শুভেচ্ছা রহমান, সবুক্তগীন শুভ, লিটু রায়, আহমেদ সুজন, চৈতালী চৈতী, রাহুল, নিরঞ্জন নীরু, সুজন গুপ্ত, প্রীতি, মাহমুদুল হাসান, সোহাগ রহমান, স্বাধীন আরুশ, নূপুর, মিঠুন, উর্মিল, মৌসুমী মৌ, পরশ ও বাঁধন সরকার। সোনাই মাধব নাটকের প্রদর্শনী ॥ লোক নাট্যদলের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে পদাবলী যাত্রা ‘সোনাই মাধব’। প্রায় ১০ বছর বিরতির পর নতুন আঙ্গিকে আবারও মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ১৯৯৩ সালে নাটকটি প্রথম মঞ্চে আসে, তখন এই নাটকের নারী চরিত্রগুলিতে ছেলেরা অভিনয় করত কিন্তু নতুন আঙ্গিকে এবার ‘সোনাই মাধব’ নাটকটিতে নারী চরিত্রগুলিতে নারীরাই অভিনয় করছে। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো নাটকটি। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকসানা আক্তার রূপসা, মোঃ জাহিদুল কবির লিটন, লিয়াকত আলী লাকী, রহিমা খাতুন নীলা, উম্মে মরিয়ম রুমা, কিশোয়ার জাহান, সোহানুর রহমান সোহান, আজমেরী এলাহী নীতি প্রমুখ।
×