ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-বেজিং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন দিগন্তের সূচনা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ মে ২০১৬

ঢাকা-বেজিং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন দিগন্তের সূচনা হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-বেজিং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন দিগন্ত সূচনার লক্ষ্যে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চেং ওয়ানকুয়ান ঢাকা আসছেন। তিনি আগামী ২৮-৩০ মে তিন দিন ঢাকা সফর করবেন। চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ১৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধিদল ঢাকা আসছেন। এদিকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করছে দিল্লী। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো ও উন্নয়ন সহযোগিতার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বছরে বড় ধরনের সহযোগিতা গড়ে উঠছে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও উচ্চমাত্রায় নিতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা আসছেন। আট বছর পর চীনের কোন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রধাানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে এখন গভীর পর্যবেক্ষণ করছে দিল্লী। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ঢাকা-বেজিং সামরিক সম্পর্কের বিষয়টি কতটা গভীর সেটা খুঁজে বের করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’ তবে ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করতে চাননি। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে দিল্লীর উদ্বেগ রয়েছে। দিল্লী মনে করে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়বে। এছাড়া চীন থেকে দুটি ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন ক্রয়ের বিষয়েও দিল্লীর উদ্বেগ রয়েছে। ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীন ও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেই বাংলাদেশের জন্য সুবিধা। তবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সুসম্পর্ক রাখতে চায়। সে কারণেই সুদূর চীনের চেয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে বাংলাদেশের ঝুঁকে থাকাটাই দিল্লীর পছন্দ। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের জুন মাসে চীন সফরের পর প্রতিরক্ষা খাতে উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকটি সফর বিনিময় হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক গত বছরের ডিসেম্বরে চীন সফরে যান। এ সময় চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানও চীন সফর করেন। এর আগে চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল শু কি লিয়াং বাংলাদেশ সফর করেন। তখন দু’দেশের মধ্যে চারটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা চীন থেকে বরাবরই উচ্চতর পেশাদারিত্বের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশ চীন থেকে বড় ধরনের সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। গত কয়েক বছরে বড় পরিমাণে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়েছে চীন। গত মার্চে নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হয়েছে দুটি ফ্রিগেট। অক্টোবরে আসছে দুটি সাবমেরিন জাহাজ। সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আরও পাঁচটি মেরিটাইম পেট্রোল জাহাজ, ৪৪টি ট্যাঙ্ক, ১৬টি যুদ্ধবিমান, এ্যান্টি শিপ মিশাইলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ যুক্ত হয়। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করার উপযোগী করতে চীনের সহযোগিতা বড় ধরনের অবদান রাখছে।
×