ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৫ মে ২০১৬

পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা

মার্কিন ড্রোন হামলায় তালেবান প্রধান মোল্লা আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ঐ হামলায় শনিবার আখতার মনসুর নিহত হন। এ ঘটনায় ইসলামাবাদে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার। আখতার মনসুর ইরান থেকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। মার্কিন সামরিক বাহিনী কিভাবে গোপনে অনুসরণ করে তার অবস্থান শনাক্ত করে সেটি জানা যায়নি। তবে আফগান তালেবান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বেশ দ্রুতই তার নিহত হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করে। ওবামা আখতার মনসুরের মৃত্যুকে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বেলুচিস্তানের দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকায় সাদা রঙের একটি সিডন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন আখতার মনসুর। এই ঘটনায় নতুন করে হোঁচট খেলো ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক। কারণ বছর পাঁচেক আগে পাকিস্তানের গ্যারিসন শহর এ্যাবোটাবাদে আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে কমান্ডো অভিযান চালানোর আগে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে কিছু জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্র এবারও ঠিক তাই করল। ইসলামাবাদকে কিছু না জানিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে ড্রোন হামলা চালানো হলো। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কোন কৈফিয়ত দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি। এদিকে সোমবার ইসলামাবদে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড হেইলকে তলব করে ড্রোন হামলায় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয় যে, এই ঘটনা তালেবানের সঙ্গে চলমান বহুপাক্ষিক শান্তি আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উল্লেখ্য, আখতার মনসুর মোল্লা ওমরের উত্তরসূরি হিসেবে তালেবান প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আখতার মনসুরকে শান্তি আলোচনার সহায়ক শক্তি বিবেচনা করতেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে তিনি তাদের কাছে ছিলেন চরম বৈরী। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আখতার মনসুরকে হত্যার বিষয়টি ওবামা কয়েক সপ্তাহ আগে অনুমোদন করেন। ওবামার অনুমোদন করায় প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া মাত্রই জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশন কমান্ড দ্রুত অভিযানে নেমে পড়ে। তারা আরও জানিয়েছে, আখতার মনসুর যে যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট সেটি পাকিস্তানকে জানান হয়েছিল। পাকিস্তান তার সম্পর্কে সামান্য কিছু তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা দিয়েছিল। কিন্তু তার অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। পাকিস্তান তালেবানকে নিজেদের ভূখ- ব্যবহার করতে দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ পাকিস্তান বরাবর অস্বীকার করে এলেও আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর দেখা গেল তালেবানপ্রধান পাকিস্তান এমনকি ইরানের ভূখ-ও স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতেন। ভিয়েতনাম সফররত ওবামা সোমবার হ্যানয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তিনি (আখতার মনসুর) এমন একজন মানুষ যিনি তালেবানের নেতৃত্ব দিতেন, যে তালেবান আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাসদস্য ও নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে থাকে। সন্ত্রাস দমন মিশন এবং সেনা সদস্যদের রক্ষা করে যাওয়ার দায়িত্ব আমি পালন করছি। আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করে যাব।’ পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করলেও ওবামার এই বক্তব্য ছিল পাকিস্তানের প্রতি কড়া এক বার্তা। দেশটিকে জানিয়ে দেয়া হলো প্রয়োজন হলে তাদের ভূখ-ের মধ্যে ঢুকে হলেও যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান চালাবে।
×