ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র দাস

বিশ্ব এ্যাজমা দিবস ২০১৬ ॥ এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক কৌশল

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৪ মে ২০১৬

বিশ্ব এ্যাজমা দিবস ২০১৬ ॥ এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক কৌশল

বিশ্ব এ্যাজমা দিবসের লক্ষ্য এ্যাজমা আক্রান্তদের জন্য সচেতনতা, সেবা এবং সমর্থন গড়ে তোলা। এর প্রাথমিক লক্ষ্য এ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করা হলেও সাহায্যের পরিধি পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখাশোনা করার লোকদের পর্যন্ত বিস্তৃত করা যেতে পারে। যদিও এ্যাজমা সম্পূর্ণরূপে সারিয়ে তোলা যায় না, কিন্তু এর উপসর্গসমূহ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এ্যাজমা আক্রান্ত লোককে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সমর্থ করে তোলা যায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে হলিস্টিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এতে এ্যাজমা রোগীর ওষুধের পাশাপাশি মানসিক চাপ (স্ট্রেস) নিয়ন্ত্রণের কৌশল প্রয়োগ করে সুফল মিলছে। এক্ষেত্রে মেডিটেশন, প্রাণায়াম ও যোগ ব্যায়াম চর্চা অত্যন্ত উপকারী হয়ে উঠেছে। ফলে বহু এ্যাজমা রোগী এখন সীমিত ওষুধ ব্যবহার করছেন। বিশ্ব এ্যাজমা দিবস হলো এওঘঅ (ঞযব এড়ষড়নধষ রহরঃরধঃরাব ভড়ৎ ধংঃযসধ) কর্তৃক সমর্থিত যা সারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সচেতনতা গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য করতে কাজ করছে। বিশ্ব এ্যাজমা দিবস ওয়ার্ল্ড এ্যাজমা ফাউন্ডেশন কর্তৃকও সমর্থিত। বিশ্ব এ্যাজমা দিবস ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো চালু হয়। প্রথমবার দিবসটি স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব এ্যাজমা সম্মেলনের সঙ্গে একই দিনে উদযাপন করা হয়। ৩৫টিরও বেশি দেশ এতে যোগদান করেছিল। কালের প্রবাহে বিশ্ব এ্যাজমা দিবসের পরিধি বেড়েছে এবং এটি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এ্যাজমার ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য সচেতনতামূলক ইভেন্টের মতোই এ দিবসকে ঘিরেও একটি প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করা হয় যা কর্মতৎপরতার সারকথা সম্পর্কে জ্ঞাত করে। পূর্ববর্তী এ্যাজমা দিবসগুলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘এ্যাজমার গুরুভার লাঘব কর।’ এতে এ্যাজমা আক্রান্ত লোকদের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা হয় যা তাদের পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার ব্যাপারে সহায়তা করবে। এ্যাজমার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপসমূহÑ ১. ডাক্তারের সহায়তায় নিজের জন্য একটি এ্যাজমা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করুন। এই ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির উপযোগী করে তৈরি করতে হবে এবং এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে কোন্ ওষুধ গ্রহণ করতে হবে এবং এ্যাজমার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ ঝুঁকির বিষয় পরিহার করতে হবে। ২.আপনার ডাক্তার কর্তৃক নির্দেশিত প্রাসঙ্গিক ওষুধ সেবন করুন যা এ্যাজমার উপসর্গগুলো লাঘব করে এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ ও ফুলে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে। ৩. যে সব ঝুঁকির বিষয়গুলো এ্যাজমার উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে এমন ঝুঁকির বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিজেকে প্রশিক্ষিত করে তুলুন। ৪. কখন উপসর্গগুলো গুরুতর হচ্ছে এটা বুঝতে শিখুন। ৫. যদি কোন সময় আপনার এ্যাজমা এ্যাটাক ঘটে তার জন্য প্রস্তুতি নেয়া। যেমন একটি কার্ড বহন করা যা অন্যদের আপনার পরিস্থিতি এবং আপনার যদি মারাত্মক এ্যাজমা এ্যাটাক ঘটে তখন কি করতে হবে সেসব নির্দেশনার বিষয়ে জ্ঞাত করবে। সত্যি বলতে কি শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ্যাজমার প্রকোপ অন্য যে কোন রোগের চাইতে বেশি। আমেরিকাতে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ মিলিয়ন শিশু-কিশোর এ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে ৫ বছরে নিচের শিশুর সংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন। ৫ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে প্রায় অর্ধেক শিশুর মধ্যেই এ্যাজমার লক্ষণ দেখা যায়। দুজন এ্যাজমার রোগী কখনই হুবহু একই উপসর্গ নিয়ে আসে না। এ্যাজমা খুবই ব্যক্তিকেন্দ্রিক রোগ। কাজেই আপনার শিশুর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। শিশুদের ক্ষেত্রে ৮০% এর বেশি এ্যাজমাই এ্যালার্জিজনিত, তাই এ্যালার্জি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ তিনিই এ্যালার্জি টেস্ট করে বলে দিতে পারবেন শিশুর এ্যালার্জির কারণ কি। এ্যালার্জি শনাক্ত করা গেলেই তখন এ্যালার্জিজনিত রোগের সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি অর্থাৎ এলারজেন পরিহার, এ্যালার্জির জন্য ওষুধ ও এ্যালার্জি ভ্যাকসিন চিকিৎসা অনুসরণ করলেই আপনার সন্তান এ্যালার্জিজনিত এ্যাজমা থেকে মুক্তি পাবে। লেখক : দি এ্যালার্জি এ্যান্ড এ্যাজমা সেন্টার ৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা
×