ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোচ পেপ গার্ডিওলার অশ্রুসিক্ত বিদায়

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৪ মে ২০১৬

কোচ পেপ গার্ডিওলার অশ্রুসিক্ত বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাফল্যের পরশ পাথর বলা হয়ে থাকে পেপ গার্ডিওলাকে। তারকা এই কোচ যেখানেই যান সেখানেই সোনা ফলতে থাকে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনাকে তাক লাগানো সাফল্যে ভাসান। ওই সময়ে রেকর্ড ১৪টি শিরোপা উপহার দেন কাতালানদের। এরপর ২০১৩ সালে জার্মান ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখে যোগ দিয়েও অব্যাহত রেখেছেন সাফল্য। বাভারিয়ানদের জিতিয়েছেন বুন্দেসলিগার হ্যাটট্রিক শিরোপা। মিউনিখে শেষবেলায় যা পেলেন তাও কম নয়। গত শনিবার রাতে জার্মান কাপের শিরোপা উপহার দিয়েছেন বেয়ার্নকে। এই শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে কোচিং ক্যারিয়ারে ২১টি ট্রফি জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সী গার্ডিওলা। বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বাভারিয়ানদের হয়ে গার্ডিওলার বিদায়ী ম্যাচ ছিল। জার্মান কাপের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালটি নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য অমীমাংসিত থাকে। এরপর ভাগ্য নির্ধারণী পেনাল্টি শূটআউটে বেয়ার্ন ৪-৩ গোলে পরাজিত করে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে। এই জয়ে বেয়ার্নের হয়ে শেষটা সাফল্য দিয়েই হলো গার্ডিওলার। তবে শেষ দিনে আবেগ সামলাতে পারেননি তারকা এই কোচ। কান্নার সাগরে ভেসে যান তিনি। এই জয়ে রেকর্ড ১৮ বার জার্মান কাপের শিরোপা জয়ের স্বাদ নিয়েছে বেয়ার্ন মিউনিখ। কিছুদিন আগেই বুন্দেসলিগার শিরোপা নিশ্চিত করে তারা। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ৯০ মিনিট দুর্দান্ত লড়াই করে মিউনিখ ও ডর্টমুন্ড। ফলে ম্যাচটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও লড়াইটা সেয়ানে সেয়ানে করেছে মিউনিখ ও ডর্টমুন্ড। ফলে অতিরিক্ত সময়েও বল খুঁঁজে পায়নি জাল। তাই ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানে জয়ের হাসি হাসে মিউনিখ। ৪-৩ গোলে ডর্টমুন্ডকে হারের তিক্ত স্বাদ দিয়ে শিরোপা জিতে নেয় গার্র্ডিওয়ালার শিষ্যরা। তিন বছরের মিউনিখ জীবনে ভালই সাফল্য পেয়েছেন গার্ডিওলা। এই স্প্যানিশ কোচের অধীনে তিনটি বুন্দেসলিগা, দুটি জার্মান কাপ আর একটি করে উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে বাভারিয়ানরা। ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স লীগ অবশ্য জিততে পারেনি। গার্র্ডিওলার অধীনে টানা তিনবার এই আসরের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে জার্মান পরাশক্তিরা। তবে বিদায় বেলায় শিষ্যরা হতাশ করেনি গুরুকে। শনিবার রাতে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রায় ৭৪ হাজার দর্শকের সামনে বিদায়ী উপহার পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি গার্র্ডিওলা। তিনি বলেন, অসাধারণ তিনটা বছর কাটিয়েছি। এখানকার খেলোয়াড়দের কথা খুব করেই মনে পড়বে আমার। দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। অনেক উপভোগও করেছি। এই ম্যাচ জিতে সন্তুষ্টি নিয়েই বিদায় নিচ্ছি। তিন বছরে সাতটা ট্রফি জিতেছেন। তার কাছে অবশ্য শিরোপার চেয়ে অন্য কিছুর মূল্য বেশি। গার্ডিওলা বলেন, আমি ট্রফির দিকে তাকাই না। এগুলো তো শুধুই সংখ্যা। আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ আমার অভিজ্ঞতা। বার্সিলোনার সাবেক গার্ডিওলার পরবর্তী ঠিকানা ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। ইংলিশ ক্লাবটির সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আগামী মৌসুমে পাঁচবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন বেয়ার্নের দায়িত্ব নেবেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। মূলত গর্ডিওলার হাত ধরেই একের পর এক সাফল্য পেয়েছে বার্সিলোনা। তিন মৌসুমে বার্সিলোনাকে অপ্রতিরোধ্য রূপ দেয়ার নেপথ্য কারিগর সাবেক এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। তার অধীনে বার্সিলোনা স্প্যানিশ লা লিগায় হ্যাটট্রিক শিরোপা, দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপাসহ জিতেছে মোট ১৪টি শিরোপা। মোটকথা, সাফল্য এবং গার্ডিওলা ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। যা অব্যাহত আছে ছিল বেয়ার্নেও। এবার চ্যালেঞ্জ ম্যানসিটির হয়ে। ১৯৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি স্পেনে জন্ম নেয়া গার্ডিওলা খেলোয়াড়ী ক্যারিয়ারের ইতি টেনে চলে আসেন কোচিংয়ে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে দায়িত্ব পালন করেন বার্সিলোনা ‘বি’ দলের। এরপর ২০০৮ সালে আচমকাই পেয়ে যান বার্সিলোনার মূল দলের দায়িত্ব। সেই থেকে টানা চার বছর কাতালানদের হয়ে পেয়েছেন স্বর্ণসাফল্য। বেয়ার্ন হয়ে এখন ম্যানসিটিতে কি করেন সেটা দেখার অপেক্ষা।
×