ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

নেত্রকোনার ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে ৭ অভিযোগ দাখিল

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৪ মে ২০১৬

নেত্রকোনার ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে ৭ অভিযোগ দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট আটকের মতো ৭টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে প্রসিকিউশন পক্ষ। অভিযোগ আমলে নিবে কি নিবে না সে বিষয়ে আদেশ প্রদান করা হবে ১২ জুন। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মুখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে ৭ অভিযোগ দাখিল করেছে। তদের বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ছয় রাজাকার হলেন- শেখ মোঃ আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা (৬৬), মোঃ আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মোঃ কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন (৭০)। এদের মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় আব্দুর রহমানকে। বাকি পাঁচজন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া এ মামলায় আহম্মদ আলীকে (৭৮) গ্রেফতারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এজন্য তাকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হান্নান খান। প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৮ জন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত মোট এক বছর এক মাস ৬ দিনে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির। চার ভলিউমে মোট ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ৪০ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে, যারা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে। আসামিদের মধ্যে মজিদ মাওলানা মুক্তিযুদ্ধের সময় নেজামে ইসলামীর নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়া কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য। আব্দুর রহমান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বর্তমানে তারা বিএনপির সমর্থক। গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের মৃত মৌলভী হোসেন আহম্মদ ওরফে হোসেন মৌলভীর ছেলে আব্দুর রহমান ও ঘাগড়া ইউনিয়নের সুনাইকান্দা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আহাম্মদ আলীকে যার যার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ১৩ আগস্ট তাদের হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান আহাম্মদ আলী। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমানকে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর একটায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগে মামলা হয় ২০১৩ সালে। শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আঃ কাদির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
×