ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেলিম ওসমানের ঘটনায় বিব্রত জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৪ মে ২০১৬

সেলিম ওসমানের ঘটনায় বিব্রত জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ স্কুলশিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দলীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানকে নিয়ে বিব্রত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। জাপার শীর্ষ নেতারা বলছেন, পার্টির ইতিহাসে এ রকম ঘটনার নজির নেই। তাই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই চান অভিযুক্ত সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। এতে পার্টির ইমেজ বাড়বে। নেতাদের বক্তব্য, দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করলে যে কোন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। তবে এ বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কখা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে রবিবার জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে একটি চিঠিসহ ঘটনার ভিডিওচিত্র দিয়েছেন সেলিম। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ১৩ মে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে একদল লোক মারধর করে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠবস করান ওই আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। সমালোচনার মুখে থাকা সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য। তিনি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। ঘটনার পর পরই সারাদেশে ওঠে তীব্র নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড়। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি ওঠে সব মহল থেকেই। এতকিছুর পরও মাথানত করতে রাজি নন সেলিম। সংবাদ সম্মেলনে নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কোন তথ্য মেলেনি। রবিবার ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও একই কথা বলেছেন। আজ মঙ্গলবার ঘটনার তথ্যপ্রমাণসহ ফের সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন সেলিম ওসমান। এত আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে অনেকটা মুখে কুলুপ এটেছে বিব্রত জাতীয় পার্টি। নিজেদের দলের সংসদ সদস্যের কর্মকা- নিয়ে দেশ-বিদেশে এত সমালোচনা হলেও আনুষ্ঠানিক কিছু বলতে নারাজ দলটির নেতারা। যোগাযোগ করা হলে দলটির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, গোটা ঘটনাটা বিব্রতকর। জাতীয় পার্টির ইতিহাসে এ রকম ঘটনা নেই। দলের কোন নেতাকর্মী প্রকাশ্যে এভাবে সম্মানী ব্যক্তিকে অপমান করেছে- এমন অভিযোগ আমাদের কাছে কখনও আসেনি। বিষয়টিতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সেলিম ওসমানের বিষয়ে পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কাদের দলের এই অবস্থানের কথা জানান। জিএম কাদের বলেন, এ ঘটনায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। গত কয়েকদিনে যারা আমাকে ফোন করেছেন, প্রত্যেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টিতে এ ধরনের ঘটনা তারা দেখেননি। তিনি বলেন, সেলিম ওসমান চিঠি দেয়ার পর চেয়ারম্যান সাহেব এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানাননি। আর চিঠিতে তিনি নিজের পজিশন তুলে ধরেছেন। আমরা এটা দেখব। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি কী পদক্ষেপ নেবে- প্রশ্ন করলে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ভাই কাদের বলেন, সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে। ইতোমধ্যে সরকার কমিটি গঠন করেছে। আদালতও এ বিষয়ে রুল জারি করেছে। কমিটির প্রতিবেদন এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি। আমরা এর জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিবেদন পেলেই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কোন নেতাকর্মী দলীয় ভাবমূর্তি ও স্বার্থবহির্ভূত কোন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান দলের গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে বলে জানান জাপার কো-চেয়ারম্যান। এরশাদের কাছে সেলিমের ব্যাখ্যা ॥ নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় অভিযুক্ত সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান তার দল জাতীয় পার্টির কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অব্যাহত বিতর্কের মাঝে দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সঙ্গে দেখা করে তার হাতে লিখিত বক্তব্য তুলে দেন সেলিম ওসমান। সঙ্গে একটি ভিডিও দিয়েছেন তিনি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিঠি ও ভিডিও দেয়ার সময় সেলিমকে ভর্ৎসনা করেছেন এরশাদ। সেলিম ওসমানকে নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান আসলে কী- জানতে চাইলে দলটির নবনির্বাচতি মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ যেটা ভাবেন সেটা বিবেচনা করেই দল পরিচালিত হয়। জনগণের সেন্টিমেন্টকে সম্মান জানানো এবং তাদের সঙ্গে রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তিনি বলেন, এমপি সাহেবকে নিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে সেলিম ওসমান আমাদের নেতার সঙ্গে দেখা করে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান তিনি। মহাসচিব জানান, খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ মাসের মধ্যেই কিংবা তার আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে- বলেন তিনি। হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় জাতীয় পার্টি বিব্রত। দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আদালত তদন্ত করতে বলেছে। তাই এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাই না। তবে তিনি জানান, বিষয়টিকে তারা বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছেন। এদিকে, ঘটনার পর পরই সেলিম ওসমানকে সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগের দাবি উঠেছে। পাশাপাশি নিজ দল জাতীয় পার্টি থেকেও তাকে বাহিষ্কারের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। পার্টি সূত্রগুলো বলছে, দলীয় ও সংসদ সদস্যের পদ ধরে রাখতে ইতোমধ্যে ব্যাপক লবিং শুরু করেছেন সেলিম ওসমান। তিনি সরকারী ও বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার দারস্থ হয়েছেন ইতোমধ্যে। তবে এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকে তার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়নি বলে জানা গেছে। জাপার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দলীয় ও সংসদ সদস্যের পদ টিকিয়ে রাখতে ইতোমধ্যে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জাপার সংসদ সদস্যদের দিয়ে রওশন ও এরশাদের কাছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
×