ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেহেরপুরের সুস্বাদু আম

বোম্বাই হিমসাগর ল্যাংড়া এবার যাচ্ছে ইউরোপে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৪ মে ২০১৬

বোম্বাই হিমসাগর ল্যাংড়া এবার যাচ্ছে ইউরোপে

এমএ রকিব ॥ মেহেরপুরের আম বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ নানা জাতের ও হরেক নামের আম। এ জেলার সুস্বাদু আমের চাহিদা ও খ্যাতি দেশজুড়ে। এবার দেশের গ-ি ছাড়িয়ে মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী আম যাচ্ছে বিদেশে। সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর পর এই প্রথম এ জেলার রসালো আম রফতানি হতে যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বর্তমানে এ জেলার আম রফতানির উদ্যোগ নেয়ার পর বেশ কিছু আম চাষী ইতোমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন রফতানিকারকদের সঙ্গে। মেহেরপুর জেলায় এবার আনুমানিক ২০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এখানে উৎপাদিত আমের মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই, ফজলি ও আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম। এদিকে, বিদেশে আম রফতানির উদ্যোগে জেলার আম চাষীরা বেজায় খুশি। চুক্তি অনুযায়ী মানসম্মত আম পেতে গাছ থেকেই ব্রাউন পেপার মোড়কে ঢেকে দেয়া হচ্ছে গাছের আম। তবে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে বিদেশে রফতানিযোগ্য আমগুলো কোন কারণে বায়াররা না নিলে সে আমগুলোর কী হবে তা নিয়ে শংকায় আছেন চাষীরা। চুক্তিবদ্ধ চাষীরা বায়ারদের পরামর্শ অনুযায়ী মানসম্মত আম পেতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে আম ব্যাগিংয়ে। ফল ছিদ্রকারী পোকা থেকে আমকে রক্ষা করতে ব্রাউন পেপার মোড়কে একে একে ঢেকে দেয়া হচ্ছে গাছের রফতানিযোগ্য আম। জেলার আম দেশের বাইরে রফতানি হলে ভাল দর পাওয়া যাবে এমনটি ভেবে খুশি আম চাষীরা। তবে ব্রাউন পেপার ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদনে খরচ কিছুটা বেশি হওয়ায় শংকায় রয়েছেন তারা। আম উৎপাদনের এলাকা মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের চুক্তিবদ্ধ আম চাষী সাখাওয়াত হোসেন তাঁর শংকার কথা জানিয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি ব্রাউন পেপার ব্যাগের বাজার মূল্য ৪টাকা। প্রতিটি আম ব্যাগিং করতে অতিরিক্ত খরচ হবে আরও দুই টাকা। এ হিসেবে ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদনে চাষীদের বাড়তি খরচ হবে কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। যেখানে বালাইনাশক প্রয়োগ করে কেজিপ্রতি আম উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকা। কাজেই কাক্সিক্ষত দাম না পেলে অথবা বায়াররা কোন কারণে আম নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ চাষীদের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। এ নিয়ে চাষীদের মধ্যে বিরাজ করছে শঙ্কা। একই গ্রামের চুক্তিবদ্ধ আম চাষী কিতাব মাস্টার জানান, বায়াররা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরও করেছেন তারা। অথচ চুক্তিপত্রে কি লেখা আছে তারা তা জানেন না। চুক্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে লুকোচুরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। এছাড়াও তারা গাছের সবচাইতে ভাল আমটি নেবেন। সেক্ষেত্রে দাম কি হবে সেটাও প্রকাশ করেননি বায়াররা। বাজার মূল্য থেকে কিছুটা বেশি দাম দিলেও লোকশানে পড়তে হবে তাদের। আবার এসব আম বাইরে বিক্রি করতে গেলেও উৎপাদন খরচ উঠে আসা তো দূরের কথা পথে বসতে হবে তাদের। এ ব্যাপরে মেহেরপুরের বায়ার প্রতিনিধি মফিজুর রহমান জানান, ব্যাগিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদনকৃত রফতানিযোগ্য প্রতিটি আম নেয়া হবে। একটিও বাদ দেয়া হবে না। পাশাপাশি বাজার মূল্যের চেয়ে চাষীদের বেশি দাম প্রদান করা হবে। এ নিয়ে কোন শংকার কারণ নেই বলেও জানান তিনি। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিডি এস, এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা ব্রাউন পেপার ব্যাগের দাম একটু বেশি। তবে চাহিদা বাড়লে দেশীয়ভাবে এ ব্যাগ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামীতে এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ আরও কমবে। এছাড়াও চুক্তিবদ্ধ আম চাষীদের রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মেহেরপুরের আম এখন রফতানির অপেক্ষায় রয়েছে। ডিডি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবার ২ হাজার ৮৫ হেক্টর জমির বাগান থেকে আনুমানিক ২০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে হিমসাগর আমের বাগান রয়েছে আনুমানিক ৮শ’ হেক্টও জমিতে । এদিকে, আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার রোধ এবং বালাইনাশকের নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মানসম্মত আম উৎপাদনের লক্ষ্যে মেহেরপুরে আম চাষীদের নিয়ে সম্প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারে প্রশাসনের কঠোর সতর্কতা উল্লেখ করে নিরাপদ আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে কৌশল উপস্থাপন করেন বক্তারা। শনিবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে আম চাষ ও এর বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহা পরিচালক হামিদুর রহমান।
×