ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে শব-ই-বরাত পালিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৪ মে ২০১৬

ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে শব-ই-বরাত পালিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় রাতব্যাপী ইবাদত বন্দেগীর মধ্যমে সৌভাগ্যের রজনী পার করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল ও জিকির আসকার, শব-ই-বরাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরে বয়ান ও ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করেন। এছাড়া ইবাদত বন্দেগী শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি এবং কল্যাণ কামনা করে পরিচালনা করা হয় বিশেষ মোনাজাত। আরবী হিজরির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলিম উম্মাহ পালন করে সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে। মর্যাদাপূর্ণ এই রাতে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এই রাতে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় ইবাদতের পাশাপাশি দান-খয়রাতও করছেন। বিগত জীবনের পাপ মার্জনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেছেন। এছাড় ধর্মীয় বিধান মেনে সোমবার শব-ই-বরাত উপলক্ষে নফল রোজাও আদায় করেছেন অনেকে। শব-ই-বরাত উপলক্ষে প্রতিটি ঘরে ঘরে তৈরি করা হয় হরেক রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার। এসব খাবার বিতরণ করা হয় আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে। সন্ধ্যার পরে অনেকে যান কবরস্থানে। চিরনিদ্রায় শায়িত আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। তবে নিষেধাজ্ঞরা থাকলেও রাজধানীর অনেক পাড়া মহল্লায় আতশবাজি ফোটাতে দেখা গেছে। এদিকে পবিত্র শব-ই-বরাত উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শেষ রাতে পরিচালনা করা হয় বিশেষ মোনাজাত। মোনাজাতে দেশ ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যাবতীয় দুর্যোগ ও অশান্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য মোনাজাতে দোয়া করা হয়। ফজরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মুসল্লি উপস্থিত হন। এছাড়াও বাদ মাগরিব থেকেই বায়তুল মোকাররমে শুরু হয় শব-ই-বরাতের বিশেষ নফল ইবাদত বন্দেগী। তা চলে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত। রবিবার সন্ধ্যায় শব-ই-বরাতের ফজিলত নিয়ে আলোচনা করেন মাওলানা আবু জাফর মোঃ হেলাল উদ্দিন। এরপর পর্যায়ক্রমে ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব, শব-ই-বরাত ও রমজানের গুরুত্ব, জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত, তাহাজ্জত নামাজের ফজিলত নিয়ে চলে রাতব্যাপী আলোচনা। এসব আলোচনায় ও নফল ইবাদতে অংশ নিতে সারা রাতই মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। ফজরের নামাজের পর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করা হয়। জাতীয় মসজিদের পাশাপাশি ঢাকার প্রায় প্রতিটি মসজিদেই মুসল্লিদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। রাতে এশার নামাজের আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় মসজিদগুলো। এর বাইরের অনেকে বাসাবাড়িতেও নফল ইবাদত আদায় করেন। মহিলারা বেশিরভাগই বাসায় বসে নফল ইবাদতে শরিক হন। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামগুলোতে যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালিত হয়েছে পবিত্র লাইলাতুল বরাত। গ্রাম এলাকায় বরাত উপলক্ষে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় এলাকারীতি অনুযায়ী বিলি করা হয় হালুযা রুটির শিরনি। এতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী লোকই হাজির হয়। সন্ধ্যায় শিরনি বিতরণ শেষে রাতে সবাই নফল ইবাদতে অংশ নেয়। ইবাদতের অংশ হিসেবে শব-ই-বরাতের পরের দিন অনেককেই নফল রোজা রাখতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, রাতভর ইবাদত-বন্দেগী এবং সমাজ-দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে গত রবিবার চট্টগ্রামে পালিত হয় পবিত্র শব-ই-বরাত। এদিন বিকেল থেকেই পরিলক্ষিত হয় ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রস্তুতি। সন্ধ্যা থেকে প্রার্থনায় মশগুল হন সাধারণ মানুষ। মসজিদে, মাজারে ও বাসা-বাড়িতে নির্ঘুম রাত কাটে মুসলিম সম্প্রদায়ের। সর্বত্র বিরাজ করে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ। রবিবার পবিত্র লাইলাতুল বরাতের এ রাতটি ছিল মূলত প্রার্থনার রাত। মাগরিবের নামাজের পর থেকেই ধর্মপ্রাণ মানুষ ঢুকে পড়ে মসজিদে। একটানা এশার নামাজ শেষ করেও গভীর রাত অবধি চলে প্রার্থনা। জিকির-আসকারে মুখর হয় সামগ্রিক পরিবেশ। ফলে প্রতিটি কবরস্থানেও ভিড় পরিলক্ষিত হয়। চট্টগ্রামে রয়েছে অনেক মাজার ও দরবার। এ সকল মাজার-দরবারেও ধর্মপ্রাণ মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছিল এই ভিড়।
×