ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন নারী জাগরণের পথিকৃৎ নূরজাহান বেগম

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৪ মে ২০১৬

চলে গেলেন নারী জাগরণের পথিকৃৎ নূরজাহান বেগম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের চেয়ে অনেকখানি অগ্রসর ছিলেন তিনি। সমাজে নারী যখন অবগুণ্ঠনে আবদ্ধ তখন তিনি হয়ে ওঠেন নারী মুক্তি আন্দোলনের পথপ্রদর্শক। লিঙ্গ বৈষম্যে সংস্কারকে ছাপিয়ে সাম্যের প্রতিষ্ঠায় বলেছিলেন নারীর অগ্রযাত্রার কথা। মাত্র ২২ বছর বয়সে দায়িত্ব নেন বেগম নামে উপমহাদেশে নারীদের প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের। এরপর ৬৯টি বছর অসামান্য দক্ষতায় পালন করেছেন সে দায়িত্ব। এভাবেই পিতা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও স্বামী রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের পরিচয় ছাপিয়ে স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে নিয়েছিলেন নূরজাহান বেগম। অবশেষে একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে থেমে গেল এ মহীয়সী নারীর জীবনের পথপরিক্রমা। পার্থিব জগত ছেড়ে পাড়ি জমালেন অদেখার ভুবনে। সোমবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নারী জাগরণের এ পথিকৃৎ। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি....রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ফ্লোরা ইয়াসমিন খান ও রিনা ইয়াসমিনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও অনুরাগী রেখে গেছেন। নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংসদের সভাপতি এ্যাডভোকেট রেজাউর রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিএফইউজে, ডিইউজেসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অনেকেই হাজির হয়েছিলেন ভাষা শহীদদের স্মৃতির মিনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কেউবা আবার তাঁর নারিন্দার বাসভবনে গিয়ে জানিয়েছেন শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি। দুপুর ১টায় লাশ নিয়ে আসা হয় নারিন্দার শরৎগুপ্ত সড়কের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন স্মৃতি ভবনে। এখানে দুপুর আড়াইটার পর অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত লাশ রাখা হয় শহীদ মিনারে। এরপর বাদ মাগরিব গুলশান ১ নম্বরের জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা জানাজা। সব শেষে তাঁকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মায়ের কবরে সমাহিত করা হয়। স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন এ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ মির্জা নাজিম উদ্দিন জানান, নূরজাহান বেগম সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন নূরজাহান বেগম। গত ৪ মে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে ৭ মে থেকে তাকে নিবড়ি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে কৃত্রিম শ^াস-প্রশ^াসের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে তিনি ইন্টারনাল মেডিসিন ও ডায়াবেটিক কনসালটেন্ট ডাঃ জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূরজাহান বেগমের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, নারী শিক্ষা ও নারী উন্নয়নে নূরজাহান বেগমের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তাঁর এ মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। শোকবাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে জাতি এক মহীয়সী নারীকে হারাল, উপমহাদেশের নারী জাগরণে যিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শোকের ছায়ায় নারিন্দার বাসগৃহ ॥ দুপুর একটায় নূরজাহান বেগমের মরদেহ পৌঁছে তার নারিন্দার শরৎগুপ্ত সড়কের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন স্মৃতি ভবনে। এ বাড়িতেই তিনি কাটিয়েছিলেন সাত দশক, সে বাড়িতে শেষবারের মতো তার মরদেহ পৌঁছালে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। তাকে ভালবেসে ছুটে আসেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। শেষবারের মতো নূরজাহান বেগমকে দেখে অনেকেই কান্না ধরে রাখতে পারেননি। সেখানে তার বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন খান বলেন, বেগম পত্রিকাটি আমার মায়ের আত্মার সঙ্গে মিশেছিল। এ পত্রিকাটির জন্যই তিনি বেঁচেছিলেন। তাঁর মৃত্যু শুধু আমাদের পরিবারের নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রে শূন্যতা সৃষ্টি করল। আমরা বেগমের ঈদ সংখাটির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেই সময় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমি ও আমার ছোট বোন দু’জন মিলে বেগম পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখব এবং ঈদ সংখ্যাও বের করব। আমরা যেন পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখিÑ মায়ের এ ইচ্ছা পূরণে আমরা কাজ করে যাব। বিকেল তিনটায় বাসভবনেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংস্কৃতিমন্ত্রীসহ পরিবার-পরিজন ও এলাকাবাসী অংশ নেন। জানাজায় অংশ নিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, জীবন-মৃত্যুর মাঝে তার স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে। সাংবাদিকতার বাইরেও তাঁর আরেকটি পরিচয় হচ্ছে তিনি নারীদের মর্যাদা, ক্ষমতায়ন ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের জন্য কাজ করেছেন। পুরুষশাসিত সমাজে বেগম রোকেয়ার পরবর্তীতে নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। বেগম পত্রিকাটি একটি বিশেষ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এ পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলব। নূরজাহান বেগমের স্নেহধন্য নারী সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে একটানা ২৫ বছর আমি বেগম পত্রিকার সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমি দেখেছি তিনি শুধু একজন সম্পাদক ছিলেন না, সেই সঙ্গে ছিলেন মানবহিতৈষী। তিনি বিশ^াস করতেন, ভাল সম্পাদক হতে হলে আগে ভাল মানুষ হতে হবে। আর তাঁর পত্রিকার সূত্র ধরেই তৈরি হয়েছে অসংখ্য নারী লেখক। এ দেশে নারীদের সাংবাদিকতার পথটিও তিনি সৃষ্টি করেছেন। শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ আনা হয়। এ সময় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারের সামনের চত্বরে দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। এ শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সঞ্চালনায় ছিলেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। শ্রদ্ধা জানাতে আসেনÑ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরাজ চুমকি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাসদের সভাপতি খালেকুজ্জামান, জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর প্রমুখ। কুষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, তিনি শুধু আলোকিত নারী ছিলেন না, তিনি আলোর পথযাত্রী হয়ে নারীদের জীবনে আলো ছড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে সেøাগান দিয়ে আন্দোলন না করলেও যুগের হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন করেছেন। নারীর বঞ্ছনা, সমাজচিত্র, সাহিত্য, রন্ধনশিল্প সবকিছুতে মধ্যবিত্ত নারীকে পথ দেখিয়েছে তাঁর সম্পাদিত বেগম পত্রিকা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশে^র নারী আন্দোলনে তিনি একজন পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব। দেশের নারী জাগরণ ও নারীর ক্ষমতায়নে যেসব আন্দোলন হয়েছে তাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আয়শা খানম বলেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সাম্প্রদায়িকতাকে ছাপিয়ে নারীদের আলোকিত করায় আজীবন ব্রতী ছিলেন তিনি। নারী জাগরণে তাঁর বেগম পত্রিকা ছিল ওই আন্দোলনের প্রধান মাধ্যম। সুলতানা কামাল বলেন, নূরজাহান বেগমের চলে যাওয়া সত্যিকারার্থেই একটি যুগের সমাপ্তি, যে যুগ ছিল মেযেদের সৃজনশীলতা ও আত্মপ্রকাশের যুগ। তার অবদান ভুলবার নয়। তিনি নারীর এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে চিরকালের দিকনিদের্শক হয়ে বেঁচে থাকবেন। মফিদুল হক বলেন, যে নারী অবগুণ্ঠনে ছিল সেই নারীকে তিনি জাগরণের পথ দেখিয়েছেন। অগ্রসর ও অনগ্রসর সকল নারী সে পথে চলার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, নারী লেখক তৈরির ক্ষেত্রে বেগম পত্রিকা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। এমনকি এখন যারা সাহিত্যচর্চা করছেন তারাও বেগম পত্রিকার লেখালেখির মাধ্যমে চর্চা শুরু করেন। যেসব সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সেগুলো হলোÑ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বিএনপি, বাসদ, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, ছাত্র মৈত্রী, আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, পথনাটক পরিষদ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা, খেলাঘর আসর, কণ্ঠশীলন, গে-ারিয়া কিশলয়, শিশু কল্যাণ পরিষদ, লেখিকা সংঘ, মহিলা পরিষদ, ত্রিলোক আবৃত্তি সংগঠন প্রভৃতি। নূরজাহান বেগমের জীবন ও কিছু কথা ॥ নূরজাহান বেগম বলতেন, ‘মেয়েরা এখন হরহামেশা বাইরে পড়তে যাচ্ছে। উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরছে। তারপরও আমার মনে হয় নারীকে আরও সুযোগ-সুবিধা দেয়া উচিত। তাহলে সামাজিক উন্নয়ন দ্রুত ঘটবে। যোগ্যতার সুবিচার করতে হবে তাদের।’ কিন্তু বেগম পত্রিকার শুরুর কালটা ছিল কঠিন। সমাজও ছিল খুব রক্ষণশীল। নারী জাগরণ, নতুন লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য ও সৃজনশীলতায় নারীকে উৎসাহী করাই ছিল পত্রিকাটির মূল লক্ষ্য। পত্রিকা প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে বেগম বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের লেখা, ছবি সংগ্রহ করতেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ভাগের এক মাস আগে কলকাতা থেকে ‘সাপ্তাহিক বেগম’ প্রকাশিত হয়। বেগম সুফিয়া কামাল এ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন। আর নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এর তিন বছর পর তিনি পিতার সঙ্গে কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। তখন থেকে তাঁর সম্পাদনায় বেগম পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এ দীর্ঘ সময়ে বেগম-এর উদ্দেশ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে ১৯২৫ সালের ৪ জুন নূরজাহান বেগমের জন্ম। নূরজাহান বেগমের পিতা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন স্বনামধন্য সাংবাদিক এবং মাসিক সওগাতের সম্পাদক। মায়ের নাম ছিল ফাতেমা বেগম। মূলত বাবার আগ্রহ ও অনুপ্রেরণায় তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। অন্যদিকে স্বামী রোকনুজ্জামান খানও ছিলেন সংবাদপত্র জগতের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। ‘দাদাভাই’ নামে দৈনিক ইত্তেফাকের ‘কচি-কাঁচার আসর’ বিভাগটি তিনি সম্পাদনা করতেন। ১৯৫২ সালে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। নারী সাংবাদিকতায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নূরজাহান বেগম অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন। এরমধ্যে ২০১১ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠ চক্রের সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার থেকে রোকেয়া পদক, ১৯৯৯ সালে গে-ারিয়া মহিলা সমিতি থেকে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট, ২০০২ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে নারী পক্ষ দুর্বার নেটওয়ার্ক ও কন্যাশিশু দিবস উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে তিনি সংবর্ধনা লাভ করেন। এছাড়াও তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাব, চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র প্রভৃতি সংগঠনের মাধ্যমে। স্বর্ণপদক পেয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুননেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন থেকে। ২০১০ সালে পত্রিকা শিল্পে তাঁর অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা পান তিনি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি ছিলেন সুপরিচিত। যুক্ত ছিলেন জোনটা ইন্টারন্যাশনাল, শিশু কল্যাণ পরিষদ, মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
×