ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর পদক্ষেপ কাম্য

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৪ মে ২০১৬

কঠোর পদক্ষেপ কাম্য

আবারও নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল কুষ্টিয়া। নিহত ব্যক্তি হোমিও ডাক্তার। তাঁর নাম মীর ছানোয়ার হোসেন ওরফে ছানা। ঐ ঘটনায় গুরুতর আহত হোমিও ডাক্তারের বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তারা দু’জন শুক্রবার সকালে শহরতলীর শিশিরমাঠ এলাকায় নিহতের নিজ বাড়ির সামনে হামলার শিকার হন দুর্বৃত্তদের। দু’জন মোটরসাইকেলযোগে আসছিলেন সেখানে। দুর্বৃত্তরাও ছিল মোটরসাইকেলে, সংখ্যায় তিনজন। গতিরোধ করে ঘাতকরা চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপায় দু’জনকে। অতঃপর হোমিও চিকিৎসকের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। পৃথক ঘটনায় কুড়িয়ে পাওয়া বোমা বিস্ফোরণে নাঈম হোসেন নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। আহত হয় নাঈমের এক বন্ধু ও এক পথচারী। প্রাথমিক ধারণায় দুটো ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে। হোমিও চিকিৎসক ছিলেন মানবদরদী ও বাউলমতের অনুসারী। নিজ বাগানবাড়িতে তিনি মাঝে-মধ্যে বাউলগানের আসর বসাতেন। পুলিশের ধারণা, জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেও তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন। তবে হত্যার ধরন ও জিঘাংসার ধরন দেখে জঙ্গী হামলার আশঙ্কাই করা হচ্ছে। স্কুলছাত্র নাঈম যে বিস্ফোরণে মারা যায়, তাও হতে পারে জঙ্গীদের ফেলে দেয়া বোমায়। চাপাতি সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যার ধরন দেখে প্রতীয়মান হয় এটিও সারাদেশে সম্প্রতি সংঘটিত কয়েকটি ঘটনার অংশবিশেষ। এই ঘটনাসহ গত পাঁচ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে একই ধরনের, একই প্রক্রিয়ায়। এতে নিহত হয় ১৪ জন। দেশীয় দুই জঙ্গীগোষ্ঠী জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) এসব ঘটনায় জড়িত ও প্রধান সন্দেহভাজন। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, উপরোক্ত ঘটনাবলীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্যের হার খুব কম অথবা নেই বললেই চলে। দু’একটি ক্ষেত্রে তারা সন্দেহভাজন দু’চারজনকে ধরতে সক্ষম হলেও একেবারে পাথুরে প্রমাণ দিয়ে নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি যে, এটা ‘অমুক’ জঙ্গীগোষ্ঠীর কাজ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এহেন দুর্বলতার সুযোগেই প্রায় ‘অজ্ঞাত’ জঙ্গীগোষ্ঠী একের পর এক চাপাতির কোপে নৃশংস হত্যাকা- চালিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। আরও দেখা যাচ্ছে, শুধু ব্লগার নয় বরং ভিন্ন মত ও পথ অনুসরণকারী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী অথবা সঙ্গীতচর্চার অনুসারীরাই যেন তাদের প্রধান টার্গেট। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে ৬ চিহ্নিত জঙ্গীকে ধরতে সীমান্ত ও বিমানবন্দরসহ দেশের সর্বত্র রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ঘোষিত হয়েছে পুরস্কারের অর্থ। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিদেশ সফরকালেও বলেছেন দেশে যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে, সেগুলো পরিকল্পিত। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালের ষড়যন্ত্রেই ঘটানো হচ্ছে এসব। তবে যে বা যারাই এসব গুপ্তহত্যার ঘটনায় জড়িত থাকুক না কেন, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সত্য বটে, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে এবং গত বছরের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী ব্যাপক বোমাবাজি, আগুন সন্ত্রাস তথা পেট্রোলবোমায় ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন প- এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর চূড়ান্ত রায় প্রদান ও দ- কার্যকরের আগে-পরে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। দেশে-বিদেশে এর জন্য প্রচুর অবৈধ অর্থ ও লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নয়াদিল্লীতে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে ইসরাইলী যোগসাজশের খবরও মিলেছে। সুতরাং যে নামেই জঙ্গীগোষ্ঠী হামলা করুক না কেন, বিএনপি-জামায়াতের মদদ থাকা বিচিত্র নয়।
×