ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২২ মে ২০১৬

ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা

এম শাহজাহান ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে আসছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে আগামী দুই অর্থবছরের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর মধ্যে আসন্ন অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং পরবর্তী অর্থবছরে (২০১৭-১৮) আরও ৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন করা হবে। এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে মূলধন ঘাটতি কমাতে উৎপাদনশীল খাত ও প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী খাতে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে জনগণের করের টাকায় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের সাংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা অর্থ বিভাগের। এজন্য লোকসান কমিয়ে ব্যাংকগুলোকে মুনাফা করার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এ খাতের বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৩ হাজার কোটি টাকা আগামী বাজেটে কাটছাঁট করা হবে। জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, জনতাসহ বিশেষায়িত বিকেবি ও রাকাব মিলিয়ে ৬ ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় তিন ব্যাংকের ঘাটতি পূরণ হয়েছে। তবে একাধিক ব্যাংকের ঘাটতি এত বেশি যে, তা পূরণ করতে দুই থেকে তিনটি বাজেটের বরাদ্দ লেগে যাবে। বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করে জামানত যাচাই ছাড়াই ঋণ দেয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আর খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রচুর পরিমাণে প্রভিশন রাখতে গিয়ে বছর বছর মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে সরকারের এ ব্যাংকগুলো। এদিকে মূলধন সমস্যার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণ কার্যক্রমসহ ব্যাংকিং লেনদেনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়ছে একাধিক ব্যাংক। এর মধ্যে বিদেশী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনেও সমস্যা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো সরকারকে জানিয়েছে। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতেও মূলধন সহায়তা দিতে হচ্ছে। মূলধন ঘাটতি মেটাতে এর আগের অর্থবছরেও (২০১৪-১৫) দুই ধাপে সরকারী ব্যাংকগুলোকে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা দেয়া হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারী ব্যাংকগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এরই মধ্যে সেখান থেকে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে ৬ ব্যাংককে। তারপরও ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগে রয়েছে অর্থ বিভাগের। পাশাপাশি বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। এজন্য আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৩ হাজার টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী বাজেটে ভর্তুকি কমানো হবে। একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে কিছু কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য কৃষি ছাড়া সব খাতে ভর্তুকি হ্রাস করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে ২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হবে। তিনি বলেন, সরকারী ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগেও মূলধন সহায়তা দেয়া হয়েছে। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। নীতি অনুযায়ী সময় সময় এসব প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে। প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী খাতে ঋণ দেয়ার পরামর্শ ॥ আগামী বাজেটে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী এবং উৎপাদনশীল খাতে ঋণের যোগান দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হবে। এতে করে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের মার্চ ১৫ পর্যন্ত বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে বছর ভিত্তিতে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক উৎস থেকে সংগৃহীত ঋণের হিসাব যোগ করলে এই প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ হবে। এছাড়া আগামী বাজেটে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ থাকবে বলে জানা গেছে।
×