ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় শিকড়ের গানে ‘কিন্নরকণ্ঠী’

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২২ মে ২০১৬

শিল্পকলায় শিকড়ের গানে ‘কিন্নরকণ্ঠী’

গৌতম পাণ্ডে ॥ মাইকে সম্মেলক কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে স্বাধীনতার গান- ‘কত যে রক্তে এনেছি তোমায় বিজয়ের মাস ডিসেম্বর/তোমাকে আনতে কত যে ত্যাগ, কত যে লড়েছি আমরা বাঙালী, মনে পড়ে তা বারংবার’। মিলনায়তনভর্তি দর্শক পিনপতন নীরবতায় শুনছে সে গান। হৃদয় কাড়া কথা আর সুরের মিলনে সঙ্গীত যেন পূর্ণতা পেয়েছে তার আপন সত্ত্বায়। শিল্পীরাও মাধুরী মিশিয়ে গাইছেন। কথা আর সুরের এমনই এক মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন গানের গীতিকার আর সুরকার। গানগুলো শুনতে শুনতে শ্রোতারা যেন ফিরে গিয়েছিল ফেলে আসা সোনালী দিনের সঙ্গীত শ্রোতধারায়। সাম্প্রতিককালে বাংলা গানের দৈনদশায় এ ধরনের অনুষ্ঠান হয় না বললেই চলে। পঞ্চগীতিকবির পাশাপাশি তাদেরই ভাবধারায় আধুনিক বাংলা গান রচনায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেন হীরেন বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অজয় ভট্টাচার্য, সুবোধ পুরকায়স্থ, শৈলেন রায়, মোহিনী চৌধুরী প্রমুখ। সেই ধারাবাহিকতায় এ সময়ের গীতিকবি ভূঁইয়া সফিকুল ইসলামের রচনায় সঞ্জয় রায় সুরারোপিত গান নিয়ে সঙ্গীত সংগঠন গীতিসত্রর অনুষ্ঠান ‘কিন্নরকণ্ঠী’। বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গীতিকবি ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও সুরস্রষ্টা সঞ্জয় রায় স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং উভয়ে গানও করেছেন স্বমহিমায়। অনুষ্ঠানের শুরুটা হয় কিছু কথা আর হৃদয়ের ভাবাবেগ দিয়ে। কথা বলেন বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষেদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়, সফিকুল ইসলাম ও সঞ্জয় রায়। গীতিসত্রের শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনার মঞ্চে আসেন শিল্পী বর্ণালী সরকার। তিনি পর পর দুটি গান পরিবেশন করেন, যার শিরোনাম হচ্ছে- ওগো কিন্নরকণ্ঠী পরাণ হরা/বাহুতে এসো ওগো এসো অধরা ও চোখের জলের মধুর খেলা খেলবো বলে/তোমায় ছেড়ে এই প্রবাসে আসছি চলে। চতুর্থ গান নিয়ে আসেন শিল্পী সুব্রত ম-ল। তিনি গেয়ে শোনান ‘সাগরে ভাসিয়ে গেলে-জীবনে যা সুন্দর সব সাথে নিয়ে গেলে।’ শিল্পী প্রতিমা রায় গেয়ে ওঠেনÑ ‘সব কাননের সকল কুসুম ডালায় ভরে’ ও ‘আমি পূজার ডালি বয়ে বয়ে ফিরছি তোমার দ্বারে’। অনুষ্ঠানে অতিথি শিল্পী ড. নিমাই ম-ল ভূঁইয়া সফিকুল ইসলামের দুটি কবিতা আবৃত্তি করেন। কবিতা দুটি হচ্ছে ‘সন্ধ্যা রাগে’ ও ‘একটি পাখির কথা’। এরপর আবার গান দিয়ে আসেন শিল্পী সুপ্তি বিশারদ। তিনি গেয়ে শোনান ‘তুমি আমার শান্ত চোখের জল’। এভাবেই চলতে থাকে একের পর এক সঙ্গীত পরিবেশনা। পর পর সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী দিবাকর বিশ্বাস (বরষ বরষ জেগে আছি আমি শূন্য পেয়ালা হাতে ও মেঘের কান্না আমি দেখেছি), মুসাররাত জাররীন মিশু (কোকিল ডাকিছে কাননে মোর দখিনের খোলা জানালায়), রিপন ম-ল (স্বপ্নে তুমি মুকুট পরেছ হয়েছ আমার রানী ও এ পরান অধীর আকুল)। অতিথি শিল্পী অনিমা মুক্তি গোমেজ পরিবেশন করেন পর পর দুটি গানÑ ‘এ কী মাধুরী ছড়ায়ে দিয়েছো মাগো তোমার শ্যামল বুকে’ ও ‘আমায় বুঝিয়ে দে রে দে আমি কিছুই বুঝি না রে’। মঞ্চে গান নিয়ে আসেন সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার সঞ্জয় রায়। গান পরিবেশনের সময় তিনি বিনয়ের সুরে বলেন, আমি গান নিয়ে থাকি। আমাকে অনেকে গানের সুর করার কথা বলেন। আমি সাফ জানিয়ে দিই আমি পারব না। কারণ আমি যেটা পারি না সেটা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যখন সফিকুল স্যারের গান আমার হাতে পড়ে আমি ফিরে যাই পেছনে দিকে। আমার মনে পড়ে যায় পঞ্চকবির পাশাপাশি হীরেন বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অজয় ভট্টাচার্য, সুবোধ পুরকায়স্থ, শৈলেন রায়, মোহিনী চৌধুরী প্রমুখের কথা। স্যারের এ গানগুলো যেন তাদেরই ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি। আমি সুর করতে রাজি হয়ে যাই। এখন ভাল লাগা আর না লাগার বিষয়টা শ্রোতাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। এরপর তিনি পরিবেশন করেন ‘মাঝে মাঝে কোন কোন ভোর কী যে ভাল লাগে’ ও ‘সারারাত ছিল যে বাদল’। এরপর সম্মেলক গানÑ ‘হে দেশ আমার গর্ব’ পরিবেশন করে গীতিসত্রের শিল্পীরা। ‘বেলা পড়ে আসে রে ভাই’ গানটি পরিবশেন করেন অতিথি শিল্পী আবু বকর সিদ্দিক। অনুষ্ঠানের শেষ শিল্পী ছিল গীতিকার ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও শিল্পী আবু বকর সিদ্দিক। তাদের দ্বৈত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়Ñ ‘ও ভাই বোন চোখ মোছ’।
×