ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপির মোসাদ কানেকশন, ওপার বাংলায় বামডুবি এবং একটি প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২২ মে ২০১৬

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপির মোসাদ কানেকশন, ওপার বাংলায় বামডুবি এবং একটি প্রত্যাশা

ভেবেছিলাম বিএনপির শেষ পেরেক ঢোকা নিয়ে লিখব। দিশেহারা এ দলটি এখন মরিয়া। মোসাদ তথা ইসরাইল কানেকশন কোন দেশের জন্য মঙ্গলের হতে পারে না। এটা দুনিয়াজোড়া সত্য। সবচেয়ে অবাক হওয়ার ব্যাপার ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের দুশমন, আরব ও ফিলিস্তিনীদের আতঙ্ক মোসাদ এ দেশের সঙ্গেও আঁতাত করছে। কে না জানে মোসাদ কত ভয়ঙ্কর। তারা ও কেজিবি কিছু করতে চাইলে তা করে ছাড়ে। আওয়ামী লীগও শেখ হাসিনার বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের বারোটা বাজাতে চাওয়া বিএনপির খায়েশ দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এরপরও এ দেশের সাধারণ মানুষ নামে পরিচিত জনতার চোখে খালেদা জিয়া ও তার দল কি করে মুসলিমদের দেখভালের দল হয় বুঝি না। অন্যদিকে সরকারী দলের লবিংগত অসঙ্গতি ও না-পারা বা পিছিয়ে থাকাটাও ধরা পড়ে এ ঘটনায়। তারা আসলে কাদের সঙ্গে বা কারা তাদের পক্ষে এটা বোঝা খুবই মুশকিল। বাইরের দুনিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রতি যে সহানুভূতি তার পেছনে আছে সরকারী দলের অমার্জনীয় ব্যর্থতা। তারা দেশের মতো বিদেশেও কোন কিছু মুঠোয় বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। তাদের বিদেশ কমিটির নেতাদের অনেকেই দেশে জমি পাওয়া নেয়া নিয়ে ব্যস্ত। তাদের শিকার বিএনপি-জামায়াত নয়। নিজেদের লোকজনদের পেছনেই লেগে আছে তারা। এই সুযোগে বিএনপি ইসরাইল অবধি চলে গেছে। যদিও এটা তাদের জন্য ঘোর অশুভ ফল বয়ে আনবে। এ নিয়ে আর না লেখার কারণ পশ্চিমবঙ্গের ইলেকশনের ফলাফল। দুই মাসও হয়নি আমি কলকাতা ঘুরে এসেছি। ভোট তখন আসি আসি করছিল। সাধারণ মানুষের মনে মমতা বা তৃণমূলের জন্য খুব একটা ভালবাসা দেখিনি। বরং মনে হচ্ছিল তারা বিরক্ত। ওখানকার মানুষ সব বিষয়ে হিসেবী। এমনকি মুখ খোলার বিষয়েও। তিন দশকের বাম শাসনে হয়ত সেটা আরও পোক্ত। তাই বুঝতে পারিনি। তবে এটা দেখেছি পাড়ায় মহল্লায় ক্লাবের নামে মমতা ও তার দলের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এরা পাড়া ও এলাকার মাতবর। ভোটের বাক্সে এদের প্রভাব পড়বেই। তারপরও এমন ধস নামানো বিজয় মমতার কোন না কোন গুণ ও দলের কারণেই সম্ভব হয়েছে। সঙ্গে এটাও দেখছি হারিয়ে যাওয়া কংগ্রেসকে চাইলেও মানুষ সিপিএম বা বামদের চাইছে না। তাদের দলনেতা সূর্য কান্ত মিশ্র নিজেই যেখানে হারতে হারতে টিকে গেছেন সেখানে বাকিরা তো কিছুই না। আসলে বামরা সব দেশেই উধাও হওয়ার পথে। আমাদের বাম রাজনীতির ভাইরা এখন ফেসবুকেই সময় কাটান বেশি। কোন ইস্যু বা কোন অনিয়ম-বেনিয়ম নিয়ে জনমত গঠনের ক্ষমতা হারানো বামদের ভেতর কিছু লাকী ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী মানুষও আছেন। তাদের একজনের কাছে জাতির চাওয়া দিয়েই শেষ করব। নাহিদ সাহেব একদা বামপন্থী, এখন আওয়ামী লীগার। দোষের কিছু না। যে দলে ছিলেন সেখানে থাকলে কাস্তে হাতুড়ি তারা, এই তিনটার প্রথমটা দিয়ে খোয়াব কোপাতেন, দ্বিতীয়টা নিজের মাথায় মেরে দিনদুপুরে তারা দেখার বিকল্প ছিল না। বামদের দেখে সেটাই মনে হয় আমার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ও সরকারের যে অগ্রগতি তার সঙ্গে নাহিদ সাহেবও থাকেন মাঝে মাঝে। তার নিজস্ব উচ্চারণের বাংলায় তিনি লেখাপড়ার দিকটা নিয়ে যখন কথা বলেন, মাঝে মাঝে ধন্দে পড়ে যাই। প্রমিত বাংলা কি আসলেই উধাও হওয়ার পথে? সবচেয়ে বেশি অবাক হই প্রতিটি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দৌড়ান। আমি যে দেশে থাকি কিংবা যারা আমার মতো দুনিয়ার সেরা দেশ বা উন্নত দেশ নামে পরিচিত দেশগুলোতে জীবন কাটান, তাদের কাছে এ এক চরম বিস্ময়। এ জাতীয় ফলাফল ঘোষণা বা সে রকম কোন কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্ববহ কারও সময় নষ্ট করা কি আসলেই উচিত? তারও উচিত নয় এ বিষয়ে সময় ব্যয় করা। তিনি ভালবাসা শুভেচ্ছা বা শুভকামনা জানালেই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা তা মানি না। নাহিদ সাহেবের আমলে পাসের হার নিয়ে যে আনন্দ আমরা তা পাইনি। আমাদের আমলে একটি দুটি খুব জোর গুটিকয় তারা উঠত। এদের আলো এত তীব্র ছিল যে অগণন তারকারাজির দরকার পড়ত না। শিশু-বালক-বালিকা বা তরুণ-তরুণীরা দেশের বাতিঘর। তারা সবাই যদি তারা হয়ে যায় তো চাঁদ বা সূর্য হবে কে? আমাদের তো তেজময় আলোময় জোসনার মায়াময়ী তরুণ-তরুণীরও প্রয়োজন আছে। পাসের হারকে সরকারের সফলতা বলার কালচার দেখে বড় হইনি আমরা। বদলে যাওয়া যুগে সেটা মেনে নিলেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। পাসের হার যদি সফলতা হয়ত পাসের পর কোথাও পড়ার জায়গা না পাওয়া বা উৎকোচ ঘুষ দিয়ে পড়তে যাওয়াটা কি অসফলতা বা ব্যর্থতা নয়? জীবনের শুরুতে তারকা হয়ে আকাশে ওঠার পর তাদের নানাভাবে নামিয়ে আনার কাজ চালু রাখে রাজনীতি। কে না জানে আমাদের তারুণ্য আজ কতটা বিপদে, কতটা অসহায়। উন্নয়ন বা ডিজিটাল বাংলাদেশের পাশাপাশি তনুর জীবনের মতো ভয়াবহ অন্ধকারও ওঁৎ পেতে আছে। যে মেয়েটি জামায়াত-বিএনপির তা-বে এক চোখ হারিয়েছে সেও স্কুলে যাচ্ছিল। রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা দিতে পারেনি। ফাইল বগলে আপনি ছোটাছুটি করলেও তাকে একবার ডেকে আনতে পারেননি। তারা কিভাবে কোন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে এবং তা আপনাদের তৈরি জেনেও কিছু বলেন না। শুধু পাসের হার বাড়িয়ে আপনি বা আপনারা ভাল থাকলেই চলবে না। যারা তারা হয়েছে তাদের চাই অবারিত মুক্ত গগন। আর যারা মাটিতে, জমিনে, তাদের চাই শক্ত মাটি। অভিভাবকদের কপালের বলীরেখা পড়ুন নাহিদ সাহেব। সন্তানদের ঠিক পথে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে এরা। ঘরে বাইরে যৌনতা, অপরাধ, জঙ্গীবাদের উস্কানি। কোচিং টিচারদের বাণিজ্যিক আচরণ, রাজনীতির কালো ধোঁয়ার আকাশে ঢেকে যাওয়া তারাদের উদ্ভাসিত হওয়ার পথ করে দিন। এরা ঝলমল করলে আমাদের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। তারায় তারায় খচিত ফলাফলে আপাতত ঝরে পড়াদের বলি, ভবিষ্যত তোমাদের হাতে। কারণ এখনও তোমরা দেখাওনি তোমরা কি করতে পার। [email protected]
×