ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শতবর্ষে শতপ্রাণ, ঐতিহ্যের জয়গান...

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ মে ২০১৬

শতবর্ষে শতপ্রাণ, ঐতিহ্যের জয়গান...

তাহমিন হক ববী ॥ জীবন্ত ইতিহাস ও গর্বিত ঐতিহ্য সাক্ষ্য বহন করছে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ। ‘শতবর্ষে শতপ্রাণ, ঐতিহ্যের জয়গান’ এই স্লোগান সামনে রেখে কলেজটি শতবর্ষে পা দিতে যাচ্ছে। চলতি বছরের নবেম্বর মাসে দু’দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজটির শতবর্ষ উদযাপন করা হবে। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে কারমাইকেল কলেজের শততম বর্ষ উদযাপন, তথ্য প্রচার ও জনসংযোগ উপকমিটির আয়োজনে গত ৪ মে সকালে কলেজ মিলনায়তনে শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিনতে হুসাইন নাসরিন বানু। শততম বর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর তোফায়েল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের ৪ ও ৫ নবেম্বর কারমাইকেল কলেজে শততম বর্ষ পালন করা হবে। এজন্য যারা এই কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। নিবন্ধন ফি বর্তমান শিক্ষার্থী ৮০০ টাকা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ১৫০০ ও শিক্ষকদের ১৫০০ টাকা। কারমাইকেল কলেজের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়া রয়েছে। যিনি নাম রেজিস্ট্রেশন করবেন তার মোবাইলে মেসেজ যাবে ও অনুষ্ঠানের কোন ব্যতিক্রম হলেও মোবাইলে জানানো হবে। শততম বর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান সফল করতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। নিবন্ধন চলবে আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত। অবিভক্ত বাংলার যে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল তাদের মধ্যে কারমাইকেল কলেজ রয়েছে প্রথম সারিতে। ইংরেজ আমলের অবিভক্ত বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ও প্রচারের জন্য অসামান্য খ্যাতির অধিকারী কারমাইকেল কলেজ। তৎকালীন রঙ্গপুর, দিনাজপুর অঞ্চলসহ অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়ি, অসম ও সংলগ্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। রঙ্গপুরে উচ্চবিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও কলেজ পর্যায়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। কারমাইকেল কলেজের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য মনোরম। আট শত বিঘা জমি নিয়ে কারমাইকেল কলেজের সুবিস্তীর্ণ এলাকা। নিভৃত নিরালায় কারমাইকেল কলেজের শান্ত সিøগ্ধ পরিবেশ এবং সবুজ বৃক্ষ ও প্রান্তরের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অভিভূত করে যে কোন মানুষের দৃষ্টিকে। এই কলেজের মূল ভবন ইন্দোস্যারাসেনিক আদলে নির্মিত স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। দিগন্তজোড়া মাঠ, পুকুর। খোলামেলা সুন্দর পরিবেশ। প্রাণোচ্ছ্বল রংপুর কারমাইকেল কলেজ। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কারমাইকেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রীসহ ২১টি বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ২৭ হাজার। কলেজ প্রাঙ্গণের সঙ্গে মিশে আছে?কত শত ইতিহাস। ১৯১৬ সালের ১০ নবেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গবর্নর লর্ড টমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল এই ঐতিহাসিক কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর তাঁর নামানুসারেই কলেজের নামকরণ করা হয় কারমাইকেল কলেজ। বয়সের হিসাবে, চলতি বছর এই প্রতিষ্ঠানের শত বছর পূর্ণ হবে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এখন থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে রোমাঞ্চ! ১৯১৭ সালের জুলাই মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজে আইএ ও বিএ ক্লাস খোলার অনুমতি দেয়। সেই সময় থেকে প্রায় দুই বছরের জন্য কলেজটির পঠনপাঠনের কাজ চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৮০০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত এই প্রাঙ্গণ বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ভীষণ আপন! কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যায় গত শতাব্দীর প্রথম দিকে অর্থাৎ ১৯১৬ সাল পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলে অনেক বিদ্যালয় থাকলেও ছিল না কোন মহাবিদ্যালয়। ১৮৭৭ সালে রংপুরের আর এক প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৮৩২ সালে স্থাপিত রংপুর জিলা স্কুলে কলেজ অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ছাত্রাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় অবিভক্ত বাংলায় কলকাতাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও আরও কয়েকটি কলেজ চতুর্দিকে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তেমনি পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে দুই একটি কলেজ ছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গে কুচবিহার রাজ্যের রাজধানীর বুকে কুচবিহারের রাজার নিজের ব্যয়ে পরিচালিত সুবিখ্যাত কুচবিহার কলেজ ছাড়া জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও মালদহে কোন কলেজ ছিল না। পরবর্তী সময়ে রংপুর অঞ্চলের প্রসিদ্ধ কুন্তির জমিদার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব মৃত্যুঞ্জয় রায় চৌধুরী রংপুরে একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১২৫ বিঘা জমি দান করেন। কিন্তু সরকারী অনুমোদন না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি। তবে তার পরও তিনি চেষ্টা অব্যাহত রাখেন এবং অন্যান্য জমিদার, বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষানুরাগীদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। ১৯১৩ সালে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গবর্নর লর্ড থমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল রংপুর এলে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। ঐ সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানেই এ অঞ্চলে একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হয় গবর্নরকে। তিনি রংপুরের সেই নাগরিক সংবর্ধনায় সকলের অনুরোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন এবং জানিয়ে দেন এই কাজে অর্থাৎ একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। তাঁর অভিমত অনুযায়ী ১৯১৩-১৪ সালে রংপুর জেলা কালেক্টর জে.এন গুপ্ত কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি রংপুর অঞ্চলের রাজা, জমিদার, বিত্তবান ব্যক্তি ও শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে সভা ডাকেন। তার এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে অর্থ প্রদান করেন শীর্ষস্থানীয় জমিদারবৃন্দ। অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকা সভায় একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল যা উল্লেখ না করলে অস¤পূর্ণ থেকে যাবে এই কলেজের ইতিকথা। সেদিনের সেই সভায় তৎকালীন দানশীল জমিদার ও বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ কে কত টাকা দিবেন তা মুখে বলে অঙ্গীকার করেন এবং কাগজে লিপিবদ্ধ করেন। এক্ষেত্রে টেপার জমিদার তার মুখে উচ্চারিত ১০,০০০ টাকা লিখতে গিয়ে টাকার অঙ্কের জায়গায় ভুল করে ডান পাশে একটি শূন্য বেশি বসিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে তার টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ টাকা। সভা শেষে সকলের লিখিত টাকার অঙ্ক যখন পড়ে শোনানো হচ্ছিল তখন অন্নদা মোহন রায় চৌধুরী (টেপার জমিদার) তার অঙ্গীকারকৃত টাকার অঙ্ক শুনে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। কারও কারও মতে তিনি মূর্ছা গিয়েছিলেন। তবে তিনি কলেজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারকৃত টাকার অঙ্কই দান করেছিলেন। তার এই দানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই কারমাইকেল কলেজে প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন দর্শনীয় মূল ভবনের ঠিক মাঝের হল ঘরটির নামকরণ করা হয় তার নামানুসারে। অর্থাৎ ‘অন্নদা মোহন হল’। সেখানেই কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য যারা অর্থ এবং জমি দান করেছিলেন তাদের সকলের নাম পাথরে খোদাই করে লেখা আছে। ২৮ জন দাতার মধ্যে সর্বপ্রথম নামটিই হলো অন্নদা মোহন রায় চৌধুরী বাহাদুর। আরও যারা উদারহস্তে এই কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন তাঁরা হলেন : কুন্ডি, কাশিমবাজার, রাধাবলভ, ধর্মপুর, মন্থনা, তুষভা-ার, মহীপুরের পাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, খোলাহাটি, রসুলপুর অঞ্চলের জমিদার, জোতদারসহ বিত্তবান ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিরা। কেউ কেউ নগদ অর্থ দান করেন। কেউ বা দান করেন জমি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য। জমি দান করার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছেন কুন্তির প্রসিদ্ধ জমিদার ও রংপুরের তৎকালীন সবচাইতে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি সুরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী। তাঁরা দুই ভাইয়ের পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে চারশ’ বিঘা নিষ্কণ্টক জমি দান করেন। ১৯১৩ সালে রংপুরে গণসংবর্ধনায় গবর্নর লর্ড কারমাইকেল তিন লাখ টাকা সংগ্রহের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ১৯১৬ সালের মধ্যেই সংগৃহীত হয় চার লক্ষাধিক টাকা। এরপর ১৯১৬ সালের ১০ নবেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গবর্নর লর্ড থমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল রংপুরে এসে কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারেই কলেজটির নামকরণ করা হয় ‘কারমাইকেল কলেজ’। ছায়া সুনিবিড় বিশাল ক্যা¤পাস ॥ বিশাল এই ক্যা¤পাস জুড়ে অজস্র গাছপালায় সুশোভিত সবুজ প্রাঙ্গণ। যেন এক প্রাকৃতিক নিসর্গ। চারদিকে সবুজের সমারোহের মধ্যে যেন গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্য কীর্তি কারমাইকেল কলেজের শ্বেত শুভ্র মূল ভবন। প্রকৃতির অপরূপ শোভা, পাখ পাখালির ডাক এবং শান্ত একটি পরিবেশ যেন অন্তরে শান্তির প্রলেপ বুলিয়ে দেয়। লালবাগ হাট থেকে একটি গেট পেরিয়ে চুন সুরকি ও সিমেন্টের সড়ক চলে গেছে কলেজের মূল ভবনে। এই সড়কের দুই পাশে রয়েছে অজস্র গাছপালা। রয়েছে কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের বিরল প্রজাতির দুটি গাছ যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘কাইজালীয়া’। জানা যায়, বিরল প্রজাতির এই গাছ পুরো উপমহাদেশে মাত্র গুটিকয়েক রয়েছে। সম্প্রতি কলেজের চারপাশে সীমানা দেয়াল দেয়া হয়েছে। ক্যা¤পাসের দক্ষিণে রংপুর ক্যাডেট কলেজ, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজের ভূমিতে। উত্তরে ঐতিহ্যবাহী লালবাগ হাট এবং চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাত্রাবাস। লালবাগ থেকে কলেজের প্রবেশপথে একটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। আগে একই স্থানে ছিল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের একটি গেট যা বড় লোহার চেন দিয়ে বন্ধ করা হতো। কলেজে ঢুকতেই হাতের বামে পড়বে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, একটু এগিয়ে গেলে শিক্ষকদের ডরমিটরি যা হোয়াইট হাউস নামে পরিচিত। পাশেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কিউএ মেমোরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয় (কলেজ প্রাইমারী স্কুল)। এই স্কুলের পশ্চিমে রয়েছে বিরল প্রজাতির সেই গাছ। সামনের দিকে এগোলে চৌরাস্তা বা জিরো পয়েন্ট। এছাড়াও রয়েছে একটি সুদৃশ্য মসজিদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, দ্বিতল ছাত্রী বিশ্রামাগার, বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন, ক্যান্টিন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, শিক্ষক ডরমিটরি, সাব পোস্ট অফিস, অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম (নির্মাণাধীন), একটি টালি ভবন (বিএনসিসি ও স্কাউট), ছাত্র বিশ্রামাগার, পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক ভবন, বিশাল দুটি খেলার মাঠ এবং বৃন্দাবন। মূল ভবনের পূর্বে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক ভাস্কর্য, যা নতুন মাত্রা যোগ করেছে মূল ভবনের নান্দনিকতার। দক্ষিণে শহীদ মিনার, তিন তলা বিজ্ঞান ভবন (সেকেন্ড বিল্ডিং), তিন তলা কলা ও বাণিজ্য ভবন (থার্ড বিল্ডিং), দ্বিতল রসায়ন ভবন, নানান ফুলে সুসজ্জিত একটি বাগান। রয়েছে প্রায় সত্তর হাজার বইয়ের এক বিশাল ভাণ্ডার একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। যা কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন রংপুর জেলা গ্রন্থাগার থেকে ২৫০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। সেই সময় বাংলার বাইরে থেকেও শিক্ষার্থীরা এই কলেজে পড়তে আসত। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে অসমীয় ভাষার গ্রন্থ। মূল ভবনের ঠিক মাঝে রয়েছে ‘আনন্দ মোহন হল’। উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ যা বাংলা মঞ্চ নামে পরিচিত। কলেজের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের প্রাণকেন্দ্র। এছাড়াও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজ এবং কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নির্মিত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন নিয়ে সুবিশাল কলেজ ক্যা¤পাস। বাংলাদেশের কেন উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা নিকেতন এই কারমাইকেল কলেজ। কলেজের বিভিন্ন ভবনের অবকাঠামোগত অবস্থান নিশ্চিত করে ধীরে ধীরে কলেজটিকে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোনালিসা শাপলা, মাইদুল ইসলাম, প্রিয়াঙ্কা ঘোষ, সাহাজাদ হোসেন জানালেন তারা কলেজের শতবর্ষ পালনের দিনটি গুনছেন। ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরা সুলতানা বলেন, আমার মনে হয় আমাদের কলেজের মাঠে দাঁড়িয়েই সবচেয়ে সুন্দর আকাশ দেখা যায়! নতুন-পুরনো ভবনগুলোতে একা একা ঘুরতেও ভাল লাগে! তাঁর কথা টেনে নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, আমাদের কলেজ প্রাঙ্গণ সব সময় উৎসবমুখর থাকে। প্রতিটি দিন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার আশাবাদ ব্যক্ত করলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহারও। কারমাইকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন সাহিত্যিক ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা ইমাম, সাবেক রাষ্ট্রপতি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংবাদিক, কথা-সাহিত্যিক, নাট্যকার, কলাম লেখক আনিসুল হকসহ আরও অনেকে। কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ বিনতে হুসাইন নাসরিন বানু বলেন, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কলেজের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশে। এখান থেকে পড়াশোনা করে অনেক কৃতী শিক্ষার্থী দেশবরেণ্য হয়েছেন। শান্তিময় পরিবেশে এ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাক, এমনটিই আশা করি। তিনি কলেজের শতবর্ষ পালনে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগী কামনা করেন।
×