ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুটি ফ্ল্যাট

স্বদেশ রায়-এর কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২০ মে ২০১৬

স্বদেশ রায়-এর কবিতা

অনুসূয়া চ্যাটার্জ্জী, সল্টলেকে বেশ পরিপাটি ফ্ল্যাটে বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি, স্বামী আর এক সন্তান নিয়ে সাজানো সংসার। বছরে বার কয়েক হয় শুধু দেখা আমি থাকি ঢাকার একটি পুরনো আভিজাত এলাকায় অনুসূয়ার ফ্ল্যাটের মতই আমারও ফ্ল্যাট, স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে সুন্দর সাজানো সংসার। অনুসূয়ার স্বামী আর আমার স্ত্রীর ভিতর ভীষণ এক মিল। তারা দু’জনেই সুখী-সাথী, সংসার আর কর্মজীবন নিয়ে। অনুসূয়া সুখী নয় তাও নয়, আমিও অসুখী নই। বরং তৃপ্ত উভয়েই জীবনে। তবুও অনুসূয়ার জীবনের অনেক গভীর তলদেশ বেয়ে বয়ে যায় একটি ছোট্ট স্রোতস্বিনী, সেখানে স্রোত হয়ে ভাসি শুধু আমি, অতি ক্ষীণকায়। আমার হৃদয়ের গভীরে তেমনই এক নদী এঁকে বেঁকে চলে যায়। মনে হয় এ নদীর স্রোত যেন অনুসূয়ার নাচের ভঙ্গিমা। অনুসূয়ার নাচের বড় কোন প্রোগ্রাম থাকলে ও ফোন করে, চলে যাই আমি কখনও গোটা পরিবার আমরা পাড়ি দেই মাত্র পঁচিশ মিনিটের বায়ুপথ। হোটেল থেকে সোজা চলে যাই ওর নাচের অনুষ্ঠানে। সন্তান, স্ত্রী তৃপ্ত হয়, ওদের এক পরিচিত আপন জনের সুন্দর নাচ দেখে, আমার তখন শুধু মনে পড়ে, অনুসূয়া ও আমি একদিন এমনই স্টেজে নেচে ছিলেম দুই বালক ও বালিকা; সেদিনও কাটেনি কোন ছন্দ কোন তাল। যেমন আজো তালে তালে অনুসূয়ার পায়ে বাজে দুরন্ত মল। গ্যারিবল্ডি হতে চাইনি আমি- অনুসূয়ায়ও ফেরায়নি মুখ বালকের দিক থেকে। শুধু একদিন সকালে ওরা চলে গেলো- তারও বিশ বছর পরে দুটো সাজানো ফ্ল্যাট হলো একটি নদী চলে গেলো জীবনের দূরতম গভীরে ক্ষীণকায় স্রোতস্বিনী হয়ে। যার স্রোতে মিশে আছে ক্ষীণতম রক্ত ক্ষরণের ধারা। কেউ তা জানে না। পৃথিবীর বড় বড় রক্তের ধারা কত কাল ধরে এমনি বয়ে যায় ছোট ছোট জীবনে ক্ষীণতম রক্ত ধারা হয়ে- কেউ কি রেখেছে হিসেব তার?
×