ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২০ মে ২০১৬

পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার আহ্বান জানিয়ে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করতে হবে। এছাড়া পাকিস্তান ও তুরস্ক ছাড়াও বাংলাদেশ চলতে পারবে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা সম্পদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঢাকা বিভাগীর সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানান। এছাড়া সারাদেশে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) কেএম সফিউল্লাহ বীরউত্তম যুদ্ধাপরাধী নিজামীর বিচারের বিষয়ে তুরস্ক ও পাকিস্তানের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, তুরস্ক ও পাকিস্তান ছাড়াও বাংলাদেশ চলতে পারবে। জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি হওয়াতে পাকিস্তান প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তুরস্ক তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিব্রত হওয়ারই কথা, কারণ নিজামী তাদের লোক। তুরস্কের যারা ক্ষমতায় আছে তারাও জামায়াতের ঘনিষ্ঠ লোক। আমি মনে করি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে আর ফেরত আনার দরকার হবে না। কেএম সফিউল্লাহ বলেন, ২০০৬ সাল থেকেই আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দৌড়াচ্ছি। আমাদের কথা হচ্ছে, এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের মাথা নত করতে হবে। উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি হয়ত আর বেশিদিন নেই। তাই তোমাদের বলছি, যুদ্ধাপরাধী যেই হোক তার বিচার যেন হয়। আত্মীয়স্বজনের কারণে তার অপরাধ ছোট করে দিও না। অনুষ্ঠানে লেখক, সাংবাদিক ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেছিলেন। সে সময় ৭৩টি ট্রাইবুন্যাল গঠিত হয়েছিল। এসব ট্রাইব্যুনাল বিচার কার্যক্রম শুরু করে। তাদের মধ্যে ১১ জনের ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। তাদের একজনকে ফাঁসিও দেয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করে দিলে যাদের সাজা হয়েছিল তারাসহ অন্য সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, অনেক দেরিতে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করায় আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। এই একটি কারণে হলেও ইতিহাস তাকে স্মরণ করবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে পাকিস্তান ও তুরস্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চলছে। এই দেশে অনেকেরই বিচার হয়। বিচারের মাধ্যমে দ-ও দেয়া হয়। তবে তাদের বিষয়ে পাকিস্তান কোন কথা বলে না। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, ১৯৭১ সালে কারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করতেও পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে পদক্ষেপ নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হারুন হাবীব। মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে এখনও ইতিহাস বিকৃতি চলছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছে। ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। তবে এখনও অনেক যুদ্ধাপরাধী রয়ে গেছে। চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে এই যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচার করতে হবে। আর যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি জানান। মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার উল আলম শহীদ বলেন, একটি জাতির মধ্যে মানবতাবিরোধী বসবাস করলে সে জাতি সামনে এগোতে পারে না। তাই সামনে এগোতে হলে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করতে হবে। আর সরকার সেই সঠিক কাজটিই করছে। তিনি বলেন, কেউ যুদ্ধে পরাজিত হলে সেটা ভুলতে পারে না। পাকিস্তানও ভুলতে পারছে না। তারা পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে না পেরে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষ নিচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আলবদর, রাজাকারসহ সব শ্রেণীর মানুষই মুক্তিযুদ্ধের সুফল ভোগ করছে। কিন্তু এ দেশে থেকেও তারা এখনও পাকিস্তানের গানই গাইছে। তাই সব বিভাগীয় শহরে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আমরা সব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি জানাই। তারা বলেন, শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বললেই হবে না। কেন যুদ্ধ হলো, কিভাবে পতাকা পেলাম, কেন শেখ মুজিব জাতির পিতা হলেন; এ গুলোও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঢাকা বিভাগের সভাপতি আবুল হাসেম ভূঁইয়া। এতে আরও বক্তব্য রাখেনÑ মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি নুরুল আলম, মেজর জেনারেল (অব) একে মোহাম্মাদ আলী শিকদার, অধ্যাপক মনসুর আহমেদ প্রমুখ। সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম ভূঁইয়াকে সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঢাকা বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়।
×